০২:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উত্তরাঞ্চলের শিল্পায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের দ্বারপ্রান্তে

দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ও বারবার প্রতিশ্রুতি শেষে অবশেষে উত্তরাঞ্চলের শিল্পায়নে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। রংপুর বিভাগে বগুড়া থেকে শুরু করে নীলফামারীর সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এখন শুধুমাত্র বাণিজ্যিক পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ শুরুর অপেক্ষা।

এই গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে রংপুর, সৈয়দপুর, পীরগঞ্জ, দিনাজপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর শিল্পায়নের সম্ভাবনা বহু গুণে বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা। গ্যাস সংযোগ পেলে বিসিক শিল্পনগরী, এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দ্রুত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। দেশের খ্যাতনামা শিল্পগ্রুপ—আরএফএল, জিকে গ্রুপ এবং আকিজ গ্রুপ ইতোমধ্যে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে। পাশাপাশি স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও আশায় বুক বেঁধেছেন।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুর আহমেদ আজাদ বলেন, “গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মানুষকে আর ঢাকায় গিয়ে কাজের খোঁজ করতে হবে না। এখানেই গড়ে উঠবে কর্মমুখর এক শিল্প পরিবেশ।”

চেম্বার সভাপতি এমদাদুল হক জানান, “বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। গ্যাস সংযোগ পেলে উৎপাদন খরচ কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং গড়ে উঠবে আধুনিক কারখানা। এতে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি রংপুর বিভাগের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।”

অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘদিন বাজেট বৈষম্যের কারণে রংপুর বিভাগ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। রাজধানীকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণে উত্তরাঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ কম ছিল। তবে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে শিল্পায়নের নতুন ধারা সূচিত হবে। বিশেষ করে নদীভাঙনকবলিত ও দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। একইসাথে গ্যাসের মূল্য তুলনামূলক কম রাখার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তারা, যাতে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।

পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) ‘রংপুর, পীরগঞ্জ ও নীলফামারী গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন’ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, “গত ৩০ জুন সঞ্চালন লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রংপুর, সৈয়দপুর বিসিক এবং উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত পৌঁছেছে। এখন আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযোগ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”

এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রংপুর বিভাগ শুধু শিল্পাঞ্চলে রূপ নেবে না, বরং এটি হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম মাইলফলক। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশ—সব মিলিয়ে রংপুরে শুরু হতে যাচ্ছে সম্ভাবনার এক নতুন অধ্যায়।

বর্তমানে উত্তরের মাটি জুড়ে চলছে উদ্দীপনার সঞ্চার। যারা আজও বেকার, হয়তো কাল তারা হবেন সফল শ্রমিক, ম্যানেজার কিংবা উদ্যোক্তা। অপেক্ষা কেবল গ্যাস সরবরাহ শুরুর, তারপরই খুলে যাবে সম্ভাবনার দরজা।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

উত্তরাঞ্চলের শিল্পায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের দ্বারপ্রান্তে

আপডেট সময় : ১১:৫১:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ও বারবার প্রতিশ্রুতি শেষে অবশেষে উত্তরাঞ্চলের শিল্পায়নে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। রংপুর বিভাগে বগুড়া থেকে শুরু করে নীলফামারীর সৈয়দপুর পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এখন শুধুমাত্র বাণিজ্যিক পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ শুরুর অপেক্ষা।

এই গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে রংপুর, সৈয়দপুর, পীরগঞ্জ, দিনাজপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোর শিল্পায়নের সম্ভাবনা বহু গুণে বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদরা। গ্যাস সংযোগ পেলে বিসিক শিল্পনগরী, এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দ্রুত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। দেশের খ্যাতনামা শিল্পগ্রুপ—আরএফএল, জিকে গ্রুপ এবং আকিজ গ্রুপ ইতোমধ্যে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করেছে। পাশাপাশি স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাও আশায় বুক বেঁধেছেন।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুর আহমেদ আজাদ বলেন, “গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মানুষকে আর ঢাকায় গিয়ে কাজের খোঁজ করতে হবে না। এখানেই গড়ে উঠবে কর্মমুখর এক শিল্প পরিবেশ।”

চেম্বার সভাপতি এমদাদুল হক জানান, “বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। গ্যাস সংযোগ পেলে উৎপাদন খরচ কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং গড়ে উঠবে আধুনিক কারখানা। এতে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি রংপুর বিভাগের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।”

অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘদিন বাজেট বৈষম্যের কারণে রংপুর বিভাগ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। রাজধানীকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার কারণে উত্তরাঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ কম ছিল। তবে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে শিল্পায়নের নতুন ধারা সূচিত হবে। বিশেষ করে নদীভাঙনকবলিত ও দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। একইসাথে গ্যাসের মূল্য তুলনামূলক কম রাখার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছেন তারা, যাতে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।

পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (পিজিসিএল) ‘রংপুর, পীরগঞ্জ ও নীলফামারী গ্যাস বিতরণ পাইপলাইন’ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, “গত ৩০ জুন সঞ্চালন লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রংপুর, সৈয়দপুর বিসিক এবং উত্তরা ইপিজেড পর্যন্ত পৌঁছেছে। এখন আমরা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযোগ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”

এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রংপুর বিভাগ শুধু শিল্পাঞ্চলে রূপ নেবে না, বরং এটি হবে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম মাইলফলক। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিকাশ—সব মিলিয়ে রংপুরে শুরু হতে যাচ্ছে সম্ভাবনার এক নতুন অধ্যায়।

বর্তমানে উত্তরের মাটি জুড়ে চলছে উদ্দীপনার সঞ্চার। যারা আজও বেকার, হয়তো কাল তারা হবেন সফল শ্রমিক, ম্যানেজার কিংবা উদ্যোক্তা। অপেক্ষা কেবল গ্যাস সরবরাহ শুরুর, তারপরই খুলে যাবে সম্ভাবনার দরজা।

এমআর/সবা