০৮:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে শহীদ মিনারে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক উৎসব

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৯ আগস্ট পালিত হলো আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৫। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এ বছরের প্রতিপাদ্য— “আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ গঠনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়ক প্রয়োগ”— যা আধুনিক প্রযুক্তিকে আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।

সকাল থেকেই চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, গারো, সাঁওতাল, খাসি, বম, মণিপুরি, রাখাইনসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও তরুণেরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, রঙিন পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হন। কারও হাতে ঢোল, বাঁশি, কারও হাতে প্রতিপাদ্যভিত্তিক শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড— সব মিলিয়ে প্রাঙ্গণ পরিণত হয় রঙিন ও প্রাণবন্ত মিলনমেলায়। ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্যের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।

উদ্বোধন ও বক্তব্য
সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন। ফোরামের অন্যতম নেতা সঞ্জীব দ্রং বলেন, বিশ্বের বহু দেশে আদিবাসীরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন, আর বাংলাদেশেও তারা ভূমি হারানো, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত আদিবাসীদের ভূমি অধিকার রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন হয়নি, এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি কখনো পালিত হয়নি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, আদিবাসীদের জন্য ঘোষিত নানা প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি, বরং অধিকারের জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক আদিবাসী এখনো কারাগারে আটক রয়েছেন।

এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক অভিযোগ করেন, সরকারে থাকাকালীন অনেকেই ‘আদিবাসী’ শব্দটির স্বীকৃতি দিলেও পরবর্তীতে তা অস্বীকার করেছেন। তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান।

নারী বিষয়ক সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীরা নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হলেও অধিকাংশ ঘটনার বিচার হয়নি। তিনি সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিয়ে অধিকার সুরক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

ফোরামের সভাপতি জ্যেতিরিন্দ্রী বোধিপ্রিয় লারমা অনুপস্থিত থেকে পাঠানো বার্তায় বলেন, ৪৮ কোটি বিশ্ব আদিবাসীর অধিকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়। প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।

র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
দুপুর সাড়ে ২টার দিকে শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার শহীদ মিনারে ফিরে আসে। অংশগ্রহণকারীরা শ্লোগান দেন— “আদিবাসীর অধিকার চাই”, “ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষা করো”, “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন চাই”। ঢাকার ব্যস্ত সড়কে রঙিন শোভাযাত্রা দেখে অনেকে থেমে ছবি তোলেন ও ভিডিও ধারণ করেন।

আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যেখানে চাকমা, গারো, বমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী গান, নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করেন। দর্শক সারিতে থাকা সাধারণ মানুষ হাততালি দিয়ে শিল্পীদের উৎসাহিত করেন।

অংশগ্রহণকারীদের অনুভূতি
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এ ধরনের আয়োজন তাদের সাংস্কৃতিক বন্ধন ও গর্ব আরও দৃঢ় করে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানান, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তারা নিজেদের ভাষা, সঙ্গীত ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চান।

অনুষ্ঠান শেষ হলেও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে lingering ছিল রঙ, সুর ও ঐক্যের আবহ— যা আদিবাসী সংস্কৃতি ও অধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে রইল।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে শহীদ মিনারে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক উৎসব

আপডেট সময় : ০৫:৩৫:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ৯ আগস্ট পালিত হলো আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০২৫। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এ বছরের প্রতিপাদ্য— “আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ গঠনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়ক প্রয়োগ”— যা আধুনিক প্রযুক্তিকে আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।

সকাল থেকেই চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, গারো, সাঁওতাল, খাসি, বম, মণিপুরি, রাখাইনসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষ ও তরুণেরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, রঙিন পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে শহীদ মিনারে জড়ো হন। কারও হাতে ঢোল, বাঁশি, কারও হাতে প্রতিপাদ্যভিত্তিক শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড— সব মিলিয়ে প্রাঙ্গণ পরিণত হয় রঙিন ও প্রাণবন্ত মিলনমেলায়। ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত ও নৃত্যের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।

উদ্বোধন ও বক্তব্য
সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন। ফোরামের অন্যতম নেতা সঞ্জীব দ্রং বলেন, বিশ্বের বহু দেশে আদিবাসীরা অস্তিত্ব সংকটে ভুগছেন, আর বাংলাদেশেও তারা ভূমি হারানো, বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত আদিবাসীদের ভূমি অধিকার রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন হয়নি, এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি কখনো পালিত হয়নি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, আদিবাসীদের জন্য ঘোষিত নানা প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি, বরং অধিকারের জন্য আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক আদিবাসী এখনো কারাগারে আটক রয়েছেন।

এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক অভিযোগ করেন, সরকারে থাকাকালীন অনেকেই ‘আদিবাসী’ শব্দটির স্বীকৃতি দিলেও পরবর্তীতে তা অস্বীকার করেছেন। তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান।

নারী বিষয়ক সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীরা নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হলেও অধিকাংশ ঘটনার বিচার হয়নি। তিনি সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিয়ে অধিকার সুরক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

ফোরামের সভাপতি জ্যেতিরিন্দ্রী বোধিপ্রিয় লারমা অনুপস্থিত থেকে পাঠানো বার্তায় বলেন, ৪৮ কোটি বিশ্ব আদিবাসীর অধিকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এখনই সময়। প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি।

র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
দুপুর সাড়ে ২টার দিকে শহীদ মিনার থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, দোয়েল চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার শহীদ মিনারে ফিরে আসে। অংশগ্রহণকারীরা শ্লোগান দেন— “আদিবাসীর অধিকার চাই”, “ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষা করো”, “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন চাই”। ঢাকার ব্যস্ত সড়কে রঙিন শোভাযাত্রা দেখে অনেকে থেমে ছবি তোলেন ও ভিডিও ধারণ করেন।

আলোচনা সভা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, যেখানে চাকমা, গারো, বমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী গান, নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করেন। দর্শক সারিতে থাকা সাধারণ মানুষ হাততালি দিয়ে শিল্পীদের উৎসাহিত করেন।

অংশগ্রহণকারীদের অনুভূতি
অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এ ধরনের আয়োজন তাদের সাংস্কৃতিক বন্ধন ও গর্ব আরও দৃঢ় করে। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানান, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে তারা নিজেদের ভাষা, সঙ্গীত ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে চান।

অনুষ্ঠান শেষ হলেও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে lingering ছিল রঙ, সুর ও ঐক্যের আবহ— যা আদিবাসী সংস্কৃতি ও অধিকার আন্দোলনের প্রতীক হয়ে রইল।

এমআর/সবা