রাজশাহী অঞ্চলের রোপা আমনের ক্ষেতে ইঁদুরের উৎপাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। ক্ষেতের কাঁচা ধানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে ইঁদুর। গত বুধবারের রেকর্ড পরিমান বর্ষনে এ অঞ্চলের অনেক কৃষকের আমনের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় অনেক কৃষককে লোকসান গুণতে হচ্ছে। সেই লোকসানের দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে উজানে চাষ করা আমন ক্ষেতের যত্নে নেমেছেন তারা। কিন্তু আমন ধানের ক্ষেতে ব্যাপকহারে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা
দেওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন তারা। ইঁদুরের আক্রমন থেকে আমন ধান বাচাঁতে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা নাানান পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমন ধানের ক্ষেতগুলো কেউ যেন ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে দিয়েছে। অনেক কৃষক ইঁদুর মারার জন্য ওষুধ ব্যবহার করেও ফল
পাচ্ছেন না। এবছর মাঠের ধান ভালো হলেও ইঁদুরের উৎপাতের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেখা গেছে, আমন ধানের ক্ষেতে শুকনো স্থানের চেয়ে
পানি জমা ফসলের ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঁশের তৈরি ইঁদুর
মারার ফাঁদ বসিয়েছেন। এ অঞ্চলের কৃষকেরা জানান, আমনের যে কোন ব্যাধি থাকলে কীটনাশক প্রয়োগ করে কিছুটা কমে। কিন্ত ইঁদুরের অত্যাচারে ক্ষেতে বিষ মাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ, আতব চালের টোপ কিংবা ফাঁদ পেতেও কোন প্রতিকার মিলছেনা। ক্ষেত থেকে ইঁদুর দুর করতে না পেরে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
এমন সময় ক্ষেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণে যেন কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ ইঁদুর কেটে দেওয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন তারা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। কৃষকরা ক্ষেতে বিষমাখা বিভিন্ন পদ্ধতিতে টোপ
দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।তবে কীটনাশক প্রয়োগ করে ইঁদুরের উপদ্রব্য কমাতে না পেরে ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে সনাতন পদ্ধতিতে বাড়িতে বসে
বাঁশের তৈরি ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে ফসল রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কৃষক।
রাজশাহী জেলা উপজেলা ও মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা
জানান, ইঁদুর অতি চালাক প্রাণি। শুধু বিষ টোপ নয়, কলাগাছ, লাঠি কিংবা বাঁশের কঞ্চিতে পলিথিন বেঁধে দিলে ও রাতে ফসলের ক্ষেতে টায়ার পোড়ানোর পদ্ধতি ব্যবহার করলে ইঁদুর কিছুটা ভয়ে ক্ষেত ছেড়ে চলে যাবে। কৃষকদের দেয়া হচ্ছে পরামর্শ।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ৩৮৭ হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে পোকা দমনের পদ্ধতিতে পার্চিং-লগ, লাইন এবং ধোঁনছা গাছ লাগানো হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমন চাষাবাদ হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার হেক্টরের উপরে। বরেন্দ্রের উচু নিচু পটভূমি হিসাবে পরিচিত রাজশাহী গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা। এ দুই উপজেলায় বন্যার ও অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতেও জলাবদ্ধতা হয়না। তাই ধানসহ যে কোন ফসলের উপযোগি। এবছর দুই উপজেলায় প্রায় ৯৫ ভাগ জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে। আর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কৃষকের জমিতে কিছু না কিছু কাঁচা ধান কেটেছে ইঁদুর।
রাজশাহীর তানোর উপজেলা মুন্ডুমালা পৌর এলাকার পাঁচন্দর গ্রামের কৃষক রয়েল আলী চলতি বছর অন্যের পাঁচ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমন চাষাবাদ
করেছেন। এ বছর বাজারে ধানের দান দেখে মনে অনেক স্বপ্ন ছিল। হয়তো এবার লাভের পাল্লা ভারী হবে। কিন্ত তার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে ইঁদুরের দল। তার ৫
বিঘা আমন ক্ষেতের প্রায় ১৫ শতক কাচা ধান কেটে সাবাড় করে দিয়েছে ইঁদুর। কৃষক রয়েল জানান, ইঁদুর তাড়াতে ক্ষেতের মাঝ খানে টিনের ঢোল
ব্যবহার করেছি। সারারাত ঢোল বাজানো হয়। তবুও ইদুরের কাছ থেকে কাচা ধান রক্ষা করা যায়নি। যে পরিমান ধান কেটেছে ইঁদুর এতে করে তার ১৫ মণ
ধান কম হবে বলে জানান তিনি।
ইঁদুরের এমন সমস্যা শুধু দুই/ চারজন কৃষকের একাই নয়, রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি আমন মৌসুমে অন্যসব বছরের চেয়ে এবার ইঁদুরের
আক্রমণে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা হাজার হাজার কৃষকের কাঁচা-আধাপাকা ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে। কৃষি কর্মকর্তারাও ইঁদুরের মারাার বিষয়ে
নতুন কোন পদ্ধতি আবিস্কার করতে পারছেনা।
এসব বিষয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন,বরেন্দ্র অঞ্চলে অনেক স্থানে ঝোপ-জঙ্গলের কারনে ইঁদুরের
অত্যাচার বেশি। ইঁদুর অতি চালাক একটি প্রাণি। আমরা কৃষকদের নানা ভাবে ইঁদুর নিধনের পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া ও ইঁদুর নিধন কার্যকর্ম
কিছু দিনের মধ্যে শুরু করা হবে। ক্ষেতের চার পাশে ঝোপ ঝাড় পরিস্কার রাখার পরামশ দেন কৃষদের।
























