একদিকে ৫৩ বছরের পুরনো-ঐতিহ্যবাহী ও ৪০টির মতো শিরোপাজয়ী বাংলাদেশের আবাহনী লিমিটেড, ঢাকা। অন্যদিকে মাত্র দুই বছর বয়সী, নতুন ও ২টি ট্রফিজয়ী কিরগিজস্তানের এফসি মুরাস ইউনাইটেড। বয়স-অভিজ্ঞতা ও শিরোপার নিরিখে যেহেতু ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীই এগিয়ে, সেহেতু মুরাসকে হেসেখেলে হারের স্বাদ দেবে আবাহনী … এমনটাই ধারণা করেছিলেন এদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু তাদের ধারণা সত্য হয়নি।
পরিসংখ্যান সবসময়ই মাঠে প্রতিফিলিত হয় না। আর সেজন্যই এই ধারণাকে উল্টে দিয়ে কিরগিজ ক্লাবটি ম্যাচটি জিতে নিয়েছে ২-০ গোলে। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ‘পশ্চিম জোন’-এর প্রথম ম্যাচে আজ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে আবাহনী মুখোমুখি হয়েছিল মুরাসের।
শ্রাবণের আকাশে মেঘ। তারপরও অসহ্য ভ্যাপসা গরম। এজন্যই হয়তো গ্যালারিতে তেমন দর্শক সমাগম নেই। প্রেসবক্সে বসা এক ক্রীড়া সাংবাদিক মজা করে বলছিলেন, ‘গ্যালারির দর্শকের চেয়ে প্রেসবক্সের সাংবাদিকদের সংখ্যাই তো বেশি মনে হচ্ছে!’
প্রথমার্ধের শুরুতে আক্রমণ, বিপজ্জনক আক্রমণ এবং বল পজেশন … সবকিছুতেই এগিয়েছিল মুরাস। তবে আবাহনী শুরুতে বেছ পিছিয়ে থাকলেও পরে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তারাও খেলার ধার বাড়িয়েছে। চেষ্টা করেছে সমানতালে খেলার। প্রথমার্ধের পরিসংখ্যান ছিল অনেকটা এরকম। আক্রমণে দু’দল সমতা (৩২-৩২)। বিপজ্জনক আক্রমণে অবশ্য মুরাস এগিয়ে (৩৯-২০)। তবে বল পজেশনে আবার আবাহনী এগিয়ে (৫১%-৪৯%)।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই গোল হজম করে ম্রিয়মান হয়ে পড়ে আবাহনী। তারপরও তারা গোলের অনেক সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর একটাও কাজে লাগাতে পারেনি।
শুরুতে আবাহনী রক্ষণাত্নক ফর্মেশনে খেলে। ফরোয়ার্ড পজিশনে মাত্র একজনকে ওপরে খেলায়। মুরাস বেশিরভাগ সময় দুই উইং দিয়ে আক্রমণ শাণায়। মাঝমাঠে ও রক্ষণে আবাহনী বেশি জোর দিয়েছে। সেক্ষেত্রে সফলতাও পেয়েছে তারা। গোলরক্ষক মিতুল মারমা বেশ ক’টি আক্রমণ রুখে দিয়েছেন।
ম্যাচের ৬ মিনিটে মুরাস গোল করার সুযোগ হারায়। বা প্রান্ত থেকে আল ইগয়ুল গড়ানো ক্রস করেন। ফরোয়ার্ড ওলেহ সেই চলতি বলে বা পায়ের সংযোগ ঘটান। কিন্তু তার গড়ানো সেই শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। ১০ মিনিটে বক্সের ভেতরে ঢুকে মুরাসে কদজো জোরালো উঁচু শট নেন। আবাহনী গোলরক্ষক মিতুল ফিস্ট করে রক্ষা করেন দলকে। ১২ মিনিটে মুরাসের আল ইগয়ুল বা প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে শট নেন। গোলরক্ষক মিতুল তা ধরলেও ফস্কে যায়। সেই বল আবাহনীর ইয়াসিন খান কর্নারে রক্ষা করেন।
১৮ মিনিটে আবাহনীর আক্রমণ। মোহামেডান থেকে সদ্যই আসা মালি ফরোয়ার্ড সুলেমান দিয়াবাতে বল নিয়ে একহক প্রচেষ্টায় মুরাসের বক্সে ঢুকে পড়েন। তাকে পেছনে থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন মুরাসের এক ডিফেন্ডার। দিয়াবাতে ডান পায়ের এক উঁচু-জোরালো শট নেন। কিন্তু বলটি পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।
২২ মিনিটে মুরাসের ৯ বা প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে বা পায়ের যে শট নেন, তা আবাহনী গোলরক্ষক কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ২৩ মিনিটে সতীর্থের লম্বা থ্রু পাস ধরে আল-আমিন বক্সের ভেতরে ঢুকে শট নেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে কর্নার হয়ে যায়। ৩২ মিনিটে সতীর্থের কাছ থেকে পাস পেয়ে দিয়াবাতে বক্সে ঢুকে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি। তারপরও সেই বল পেয়ে যান ইব্রাহিম। তিন বা পায়ের যে শট নেন, তা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে হতাশায় পোড়ে আবাহনী।
বিরতির পর শুরুতেই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দেয় মুরাস। কিছু বুঝে ্ওঠার আগেই গোল কওে নেয় অতিথি ক্লাবটি। এই জন্য আবাহনীর রক্ষনভাগের ফুটবলাররা দায় এডাতে পারেন না। ৪৮ মিনিটে আন্দ্রিয়া বাতসুলার ক্রসে বক্সের মধ্যে অরক্ষিত আতাই ঝুমাশেভের হেড চলে যায় আবাহনীর জালে (১-০)। ৭২ মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ আসে আবাহনীর সামনে। বাঁ প্রান্ত থেকে দিয়াবাতের কাটব্যাকে শেখ মোরসালিনের শট কর্ণারের বিনিময়ে ফেরান মুরাস গোলরক্ষক।
সংযুক্তি সময়ে (৯০+২ মিনিটে) ব্যবধান দ্বিগুণ করে মুরাস। মোরসালিনের কাছ থেকে বল পান ডিফেন্ডার কামরুল। তিনি বল ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। এর সুযোগ নেন আতাই ঝুমাশেভ। বল নিয়ে তিনি দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়েন আবাহনীর বক্সে। ততক্ষণে বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন মিতুল। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আতাই ডান পায়ের জোরালো শটে বল জালে জড়িয়ে দেন (২-০)।
এর মিনিটখানেক পরেই থাই রেফারি তরফং সমসিং খেলা শেষের বাাঁশি বাজালে পূর্ণ তিন পয়েন্ট পাওয়ার চিত্তসুখ নিয়ে মুরাস এবং হারের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়ে আবাহনী।
আরকে/সবা


























