০৯:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মার্কিন পর্যবেক্ষক দলকে যা বলল দুই দল

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৮:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • 98
  • সংবিধান লঙ্ঘন করে সমঝোতা নয় : কাদের
  • শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : বিএনপি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। গতকাল সোমবার রাজধানীর আলাদা দুটি স্থানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে নিজেদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন নেতারা। এসময় মার্কিন প্রতিনিধি দলও রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন বলে জানা গেছে।
সংবিধান লঙ্ঘন করে সমঝোতা নয়Ñ কাদের : দুপুরে রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠক শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল সমঝেতা ও সহাবস্থানের সুযোগ আছে কি-না জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, সে সুযোগ বিএনপি রাখেনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়, মৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে চায়, নির্বাচন কমিশন বাতিল এবং সংসদের বিলুপ্তি চায়। আমরা জানিয়েছি, এসব সম্ভব নয়।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে, তার জবাব দিয়েছি আমরা। বিএনপি তাদেরকে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল বিএনপির দাবি নিয়ে কোনো কথা বলেনি। তারা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে দেখতে চায়। কোনো সহিংসতার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেছেন। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্য সদস্যরা হলেনÑ দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়Ñ বিএনপি : এদিকে গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয় যে, বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও প্রশ্নবিদ্ধ। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বাংলাদেশের মানুষ। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোও এটা চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল এসেছিল। তারা বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলে গেছে এবং যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, বাংলাদেশে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না কারণ বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
আমীর খসরু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিদল এসেছে একই উদ্দেশ্য নিয়ে, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনি পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে যে, আগামী দিনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলে আসছিÑ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত দুই-তিনটি নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর হয়েছে, তারা বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলে আসছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত দুই-তিনটি নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।
আমীর খসরু বলেন, এখন নিপীড়ন-নির্যাতনসহ ভোট চুরির প্রকল্প অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। তারা ভোট চুরির প্রকল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, লুটেরা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ তারা একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে আবারও বাংলাদেশের মানুষের ভোট চুরি করার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছে। এখান থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের যে একদফা দাবি; সরকার বলা ভুল হবেÑ এই রেজিমের পদত্যাগ করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার মতামতের ভিত্তিতে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, তারা গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে। এটার সঙ্গে কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অথবা নিরপেক্ষ সরকারের কোনো ব্যবধান নেই। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে যেটা তারা বলছে এটি হবে না। এগুলো হবে না বলেই তারা কথাগুলো বলছে। তারা তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার-নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলতে পারে না! এ দাবি উঠতে হবে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। তারা যে কথাগুলো বলছে; এ দাবির সঙ্গে কোনো তফাৎ নেই।
তিনি বলেন, আজকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের ওপর সার্বক্ষণিক চোখ রাখছে। কথাগুলো বলে যাচ্ছে। শুধু বলছে না, তারা অ্যাকশন নিচ্ছেÑ তারা ভিসানীতি দিচ্ছে, স্যাংশন দিচ্ছে, গণতান্ত্রিক সম্মেলনে ১১০টি দেশকে দাওয়াত দিয়েছে; বাংলাদেশকে দেয়নি। মেসেজগুলো দিচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলে যাচ্ছে, জাতিসংঘ-গণতান্ত্রিক দেশগুলো বলে যাচ্ছে, সবাই তাদের মতামত দিয়ে যাচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেনÑ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উইংয়ের প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
মার্কিন পর্যবেক্ষক দলে ছিলেন রিক ইনডারফার্ত, মারিয়া চিন আব্দুল্লা, মারিও মাইত্রি, জেমি ক্যানডেস সাক্স স্পাইকারম্যান, আকাশ কুল্লুরি, বোনি গ্লিক, জামিল জাফের, জো কাও প্রমুখ।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে ঢাকায় পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সাত সদস্য। গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করবে তারা। সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং তাদের সহায়তাকারীরা ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে।
প্রতিনিধিদলের কার্যক্রম সম্পর্কে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানান, দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, নারী সমাজ, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং ঢাকার বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলবে।
সফর শেষে প্রতিনিধিদলটি বিবৃতি দেবে উল্লেখ করে ব্রায়ান শিলার জানান, ইতিবাচক প্রবণতা এবং উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি তারা কিছু সুপারিশ তুলে ধরবেন। সর্বোপরি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের দিন সীমিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে কি না, তা নির্ধারণ করা হবে এ প্রতিনিধিদলের সুপারিশের মাধ্যমে।
এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ সদস্যের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। তবে আরও একজন বাড়িয়ে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নায়ক রিয়াজের মৃত্যুসংবাদ ফেসবুকে, যা জানাল পরিবার

মার্কিন পর্যবেক্ষক দলকে যা বলল দুই দল

আপডেট সময় : ০৮:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
  • সংবিধান লঙ্ঘন করে সমঝোতা নয় : কাদের
  • শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না : বিএনপি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা সফররত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। গতকাল সোমবার রাজধানীর আলাদা দুটি স্থানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে নিজেদের দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন নেতারা। এসময় মার্কিন প্রতিনিধি দলও রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন বলে জানা গেছে।
সংবিধান লঙ্ঘন করে সমঝোতা নয়Ñ কাদের : দুপুরে রাজধানীর বনানীতে হোটেল শেরাটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠক শেষে দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল সমঝেতা ও সহাবস্থানের সুযোগ আছে কি-না জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, সে সুযোগ বিএনপি রাখেনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা (বিএনপি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়, মৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে চায়, নির্বাচন কমিশন বাতিল এবং সংসদের বিলুপ্তি চায়। আমরা জানিয়েছি, এসব সম্ভব নয়।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের কাছে বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে, তার জবাব দিয়েছি আমরা। বিএনপি তাদেরকে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল বিএনপির দাবি নিয়ে কোনো কথা বলেনি। তারা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে দেখতে চায়। কোনো সহিংসতার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেছেন। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্য সদস্যরা হলেনÑ দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত।
শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়Ñ বিএনপি : এদিকে গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বার্তা দেওয়া হয় যে, বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও প্রশ্নবিদ্ধ। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বাংলাদেশের মানুষ। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোও এটা চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আন্তর্জাতিক উইংয়ের প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল এসেছিল। তারা বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলে গেছে এবং যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, বাংলাদেশে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাবে না কারণ বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
আমীর খসরু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিদল এসেছে একই উদ্দেশ্য নিয়ে, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনি পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে যে, আগামী দিনে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলে আসছিÑ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত দুই-তিনটি নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে যাদের বয়স ৩০-৩২ বছর হয়েছে, তারা বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলে আসছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত দুই-তিনটি নির্বাচনে তারা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে।
আমীর খসরু বলেন, এখন নিপীড়ন-নির্যাতনসহ ভোট চুরির প্রকল্প অধিকতর শক্তিশালী হয়েছে। তারা ভোট চুরির প্রকল্পকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, লুটেরা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ তারা একটা প্রজেক্টের মাধ্যমে আবারও বাংলাদেশের মানুষের ভোট চুরি করার অভিপ্রায়ে কাজ করে যাচ্ছে। এখান থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের যে একদফা দাবি; সরকার বলা ভুল হবেÑ এই রেজিমের পদত্যাগ করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সংসদ বাতিল করতে হবে। নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার মতামতের ভিত্তিতে আরেকটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, তারা গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানের, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছে। এটার সঙ্গে কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অথবা নিরপেক্ষ সরকারের কোনো ব্যবধান নেই। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে যেটা তারা বলছে এটি হবে না। এগুলো হবে না বলেই তারা কথাগুলো বলছে। তারা তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার-নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলতে পারে না! এ দাবি উঠতে হবে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে। তারা যে কথাগুলো বলছে; এ দাবির সঙ্গে কোনো তফাৎ নেই।
তিনি বলেন, আজকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের ওপর সার্বক্ষণিক চোখ রাখছে। কথাগুলো বলে যাচ্ছে। শুধু বলছে না, তারা অ্যাকশন নিচ্ছেÑ তারা ভিসানীতি দিচ্ছে, স্যাংশন দিচ্ছে, গণতান্ত্রিক সম্মেলনে ১১০টি দেশকে দাওয়াত দিয়েছে; বাংলাদেশকে দেয়নি। মেসেজগুলো দিচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলে যাচ্ছে, জাতিসংঘ-গণতান্ত্রিক দেশগুলো বলে যাচ্ছে, সবাই তাদের মতামত দিয়ে যাচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেনÑ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আন্তর্জাতিকবিষয়ক উইংয়ের প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।
মার্কিন পর্যবেক্ষক দলে ছিলেন রিক ইনডারফার্ত, মারিয়া চিন আব্দুল্লা, মারিও মাইত্রি, জেমি ক্যানডেস সাক্স স্পাইকারম্যান, আকাশ কুল্লুরি, বোনি গ্লিক, জামিল জাফের, জো কাও প্রমুখ।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব পরিস্থিতি যাচাই করতে ঢাকায় পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সাত সদস্য। গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন পরিচালনা করবে তারা। সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং তাদের সহায়তাকারীরা ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে।
প্রতিনিধিদলের কার্যক্রম সম্পর্কে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানান, দলটি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, সরকারি সংস্থা, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, নারী সমাজ, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং ঢাকার বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলবে।
সফর শেষে প্রতিনিধিদলটি বিবৃতি দেবে উল্লেখ করে ব্রায়ান শিলার জানান, ইতিবাচক প্রবণতা এবং উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি তারা কিছু সুপারিশ তুলে ধরবেন। সর্বোপরি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের দিন সীমিত আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠাবে কি না, তা নির্ধারণ করা হবে এ প্রতিনিধিদলের সুপারিশের মাধ্যমে।
এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ সদস্যের প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। তবে আরও একজন বাড়িয়ে ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে।