০১:০৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যানজটে ক্ষতি ৬৫০ কোটি ডলার

  • প্রতিদিন ১৪০ কোটি টাকার সমপরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট
  • রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পি বাড়িঘর ও হাটবাজার
  • গাড়ি ও বাস-ট্রাকের অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াত

সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিবর্তনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ উপদেষ্টা

মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের মতো অবকাঠামো হওয়ার পরও পরিকল্পনার অভাবে যানজটে বছরে ৬৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ। গতকাল শনিবার রাজধানীতে ঢাকা চেম্বারের এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, ঢাকার ওপর চাপ কমাতে সরকারের কোনো টেকসই পরিকল্পনা নেই। অবশ্য পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের দাবি, সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ, পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই নগর উন্নয়ন নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার। এতে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। উদ্যোক্তারা বলেন, দ্রুত নগরায়নের ফলে রাজধানী ঢাকা মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। যানজটের কারণে প্রতিদিন ১৪০ কোটি টাকার সমপরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বিকেন্দ্রীকরণের তাগিদ দেন তারা। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘বড় বড় ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তবুও যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তা প্রায় ১৪০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিবর্তনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার ৪ ও বাইরের ৬৩ নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আপনি বুড়িগঙ্গাও দূষণমুক্ত চাইবেন আবার দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান যাতে আরও ৩ বছর সময় পায়, সেটাও চাইবেন। দুইটা একসাথে হবে না। আপনাকে যে কোনো একটা অবস্থানে যেতে হবে। এখন যদি বলি দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে যাব, তখন বলে, আমাদের একটা সেন্ট্রাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করে দেন। নগরের টেকসই উন্নয়নে শুধু পরিকল্পনা নয়, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান পরিকল্পনাবিদদের। রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে বহুমুখী পরিবহন নেটওয়ার্ক, সবুজ অবকাঠামো এবং ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিতের তাগিদ দেন আলোচকেরা।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে করে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি পুরছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। নানামুখী সমস্যার কারণে মানুষের স্রোত আর অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি রাজধানীতে যানজটের সৃষ্টি করছে। রাজধানীবাসীর কাছে যানজট একটি মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রতিদিনের অসহ্য যানজটের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে মানুষের জীবন ও জীবিকা। হুমকিতে পড়ে বেঁচে থাকার চিন্তা। তেমনিভাবে চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কিংবা মিছিল-মিটিং-সমাবেশের দিনে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে দেখা যায় তীব্র যানজট। বিআরটিএর হিসাবে, ঢাকা শহরে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬০টি। তার মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি। এরপর ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রাবাহী বাস। এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে চলাচলকৃত ৫০ শতাংশ ব্যক্তিগত যানবাহন। আর এই ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু বাকি ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে ৮৮ শতাংশ যাত্রী। যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ব্যক্তিগত যানবাহন বৃদ্ধি। যার ফলে বিপুলসংখ্যক যানবাহনের চাপে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। নগরীর জীবনমান, শিক্ষার উন্নতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুবিধা প্রভৃতির কারণে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে মানুষের আগমন বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকা, নদী-ভাঙন ও দুর্ভিক্ষ অঞ্চলের গরিব ও অসহায় মানুষের একমাত্র কর্মসংস্থানের জায়গা হিসেবে পছন্দ রাজধানী ঢাকা। সড়ক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল, যেখানে সেখানে ইচ্ছেমতো গাড়ি পার্কিং, অবৈধ ফুটপাত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রভৃতি যানজট বাড়িয়ে তুলছে। রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও হাটবাজার গড়ে উঠছে। সড়কে একদিকে ধীর গতির রিকশা, ভ্যান ও অন্যদিকে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি ও বাস-ট্রাকের যাতায়াতের ফলে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট সরু হয়ে যাওয়ার ফলে যানজট বাড়ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। চট্টগ্রামের যানজট পরিস্থিতি ইদানীং আবারও খারাপ হয়েছে। আগ্রাবাদ এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে’র কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলেও শহরে অন্যান্য স্থানে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণেই যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে- যা বলা বাহুল্য মাত্র। যানজটের কারণে অনেক সময় দশ মিনিটের দূরত্ব পার হতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। পরিকল্পনামাফিক সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফলে সময়ের কাজ সময়ে করা যায় না, মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। শহরের প্রবেশমুখ বলে খ্যাত সিটি গেইট থেকে একে খান মোড় ও অলংকার মোড়ে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে। ফেনী থেকে কুমিরা আসতে যতক্ষণ সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে সিটি গেইট থেকে জিইসি মোড় আসতে। এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ বলে খ্যাত কর্ণফুলী সেতুর যানজট ইতিমধ্যে দেশব্যাপী খ্যাতিও পেয়েছে। বহদ্দারহাট, কোতোয়ালি হতে গাড়িগুলো গিয়ে সেতুর গোলচত্বর গিয়ে আটকে যায়। গোলচত্বর যেন দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িসমূহের ইচ্ছেমতো যানজট সৃষ্টি করার অনুমোদিত মাঠ। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারগামী যাত্রীবাহী বাসসমূহ রাস্তায় এলোপাতাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকতে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ অদূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেন। সেখানকার যাত্রীবাহী বাসসমূহ কোনো কিছুকেই পরোয়া করে না। ফলে অন্যান্য যানবাহনগুলো অসহায়ের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। সরকার চাইলে এ যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিশ্বের যেসব শহরে আগে যানজট ছিল, কিন্তু এখন নিয়ন্ত্রিত যানজট, সেসব শহরের সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের আমাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে যানজট নিরসনে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এই কমিশন যানজটের প্রকৃত কারণ নির্ণয়সহ সমাধানের পরামর্শ দিতে ও প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের পরামর্শ দেবে। শহরের প্রাইভেট কারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অবৈধ দখলদারদের নিকট থেকে ফুটপাথ ও অন্যান্য রাস্তা দখলমুক্ত করতে হবে। গাড়িচালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা ও গাড়ি ঘোরানো থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা দরকার। যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারলেই রক্ষা পাবে জনগণ। এর ফলে আর নষ্ট হবে না মানুষের কর্মঘণ্টা। উপরন্তু তা দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান সহায়ক হয়ে উঠবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

যানজটে ক্ষতি ৬৫০ কোটি ডলার

আপডেট সময় : ০৭:১০:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • প্রতিদিন ১৪০ কোটি টাকার সমপরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট
  • রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পি বাড়িঘর ও হাটবাজার
  • গাড়ি ও বাস-ট্রাকের অনিয়ন্ত্রিত যাতায়াত

সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিবর্তনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, পরিবেশ উপদেষ্টা

মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের মতো অবকাঠামো হওয়ার পরও পরিকল্পনার অভাবে যানজটে বছরে ৬৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ। গতকাল শনিবার রাজধানীতে ঢাকা চেম্বারের এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় বক্তারা অভিযোগ করেন, ঢাকার ওপর চাপ কমাতে সরকারের কোনো টেকসই পরিকল্পনা নেই। অবশ্য পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের দাবি, সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ, পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই নগর উন্নয়ন নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার। এতে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। উদ্যোক্তারা বলেন, দ্রুত নগরায়নের ফলে রাজধানী ঢাকা মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে। যানজটের কারণে প্রতিদিন ১৪০ কোটি টাকার সমপরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ঢাকার ওপর চাপ কমাতে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড বিকেন্দ্রীকরণের তাগিদ দেন তারা। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, ‘বড় বড় ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তবুও যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন যে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তা প্রায় ১৪০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন মহলের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিবর্তনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার ৪ ও বাইরের ৬৩ নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আপনি বুড়িগঙ্গাও দূষণমুক্ত চাইবেন আবার দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান যাতে আরও ৩ বছর সময় পায়, সেটাও চাইবেন। দুইটা একসাথে হবে না। আপনাকে যে কোনো একটা অবস্থানে যেতে হবে। এখন যদি বলি দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে যাব, তখন বলে, আমাদের একটা সেন্ট্রাল ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করে দেন। নগরের টেকসই উন্নয়নে শুধু পরিকল্পনা নয়, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান পরিকল্পনাবিদদের। রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে বহুমুখী পরিবহন নেটওয়ার্ক, সবুজ অবকাঠামো এবং ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিতের তাগিদ দেন আলোচকেরা।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে অসহনীয় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ৭৩টি মোড়ে আটকে যাচ্ছে যানবাহন। এতে করে প্রতিদিন আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। আর জ্বালানি পুরছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। নানামুখী সমস্যার কারণে মানুষের স্রোত আর অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি রাজধানীতে যানজটের সৃষ্টি করছে। রাজধানীবাসীর কাছে যানজট একটি মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রতিদিনের অসহ্য যানজটের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে মানুষের জীবন ও জীবিকা। হুমকিতে পড়ে বেঁচে থাকার চিন্তা। তেমনিভাবে চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা কিংবা মিছিল-মিটিং-সমাবেশের দিনে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়কে দেখা যায় তীব্র যানজট। বিআরটিএর হিসাবে, ঢাকা শহরে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬০টি। তার মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি। এরপর ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রাবাহী বাস। এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকা শহরে চলাচলকৃত ৫০ শতাংশ ব্যক্তিগত যানবাহন। আর এই ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে মাত্র ১২ শতাংশ যাত্রী। কিন্তু বাকি ৫০ শতাংশ গাড়ি বহন করে ৮৮ শতাংশ যাত্রী। যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো ব্যক্তিগত যানবাহন বৃদ্ধি। যার ফলে বিপুলসংখ্যক যানবাহনের চাপে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। নগরীর জীবনমান, শিক্ষার উন্নতি ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুবিধা প্রভৃতির কারণে প্রতিনিয়ত রাজধানীতে মানুষের আগমন বাড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকা, নদী-ভাঙন ও দুর্ভিক্ষ অঞ্চলের গরিব ও অসহায় মানুষের একমাত্র কর্মসংস্থানের জায়গা হিসেবে পছন্দ রাজধানী ঢাকা। সড়ক ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল, যেখানে সেখানে ইচ্ছেমতো গাড়ি পার্কিং, অবৈধ ফুটপাত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রভৃতি যানজট বাড়িয়ে তুলছে। রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর ও হাটবাজার গড়ে উঠছে। সড়কে একদিকে ধীর গতির রিকশা, ভ্যান ও অন্যদিকে দ্রুতগতিসম্পন্ন গাড়ি ও বাস-ট্রাকের যাতায়াতের ফলে গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট সরু হয়ে যাওয়ার ফলে যানজট বাড়ছে, দুর্ঘটনা ঘটছে। তাতে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। চট্টগ্রামের যানজট পরিস্থিতি ইদানীং আবারও খারাপ হয়েছে। আগ্রাবাদ এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে’র কারণে যানজট বৃদ্ধি পেলেও শহরে অন্যান্য স্থানে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার কারণেই যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে- যা বলা বাহুল্য মাত্র। যানজটের কারণে অনেক সময় দশ মিনিটের দূরত্ব পার হতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। পরিকল্পনামাফিক সময়কে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ফলে সময়ের কাজ সময়ে করা যায় না, মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। শহরের প্রবেশমুখ বলে খ্যাত সিটি গেইট থেকে একে খান মোড় ও অলংকার মোড়ে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে। ফেনী থেকে কুমিরা আসতে যতক্ষণ সময় লাগে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে সিটি গেইট থেকে জিইসি মোড় আসতে। এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ বলে খ্যাত কর্ণফুলী সেতুর যানজট ইতিমধ্যে দেশব্যাপী খ্যাতিও পেয়েছে। বহদ্দারহাট, কোতোয়ালি হতে গাড়িগুলো গিয়ে সেতুর গোলচত্বর গিয়ে আটকে যায়। গোলচত্বর যেন দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িসমূহের ইচ্ছেমতো যানজট সৃষ্টি করার অনুমোদিত মাঠ। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারগামী যাত্রীবাহী বাসসমূহ রাস্তায় এলোপাতাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী ডাকতে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ অদূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেন। সেখানকার যাত্রীবাহী বাসসমূহ কোনো কিছুকেই পরোয়া করে না। ফলে অন্যান্য যানবাহনগুলো অসহায়ের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। সরকার চাইলে এ যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিশ্বের যেসব শহরে আগে যানজট ছিল, কিন্তু এখন নিয়ন্ত্রিত যানজট, সেসব শহরের সড়ক ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের আমাদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে যানজট নিরসনে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এই কমিশন যানজটের প্রকৃত কারণ নির্ণয়সহ সমাধানের পরামর্শ দিতে ও প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের পরামর্শ দেবে। শহরের প্রাইভেট কারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অবৈধ দখলদারদের নিকট থেকে ফুটপাথ ও অন্যান্য রাস্তা দখলমুক্ত করতে হবে। গাড়িচালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি পার্ক করা ও গাড়ি ঘোরানো থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা দরকার। যানজট সমস্যার সমাধান করতে পারলেই রক্ষা পাবে জনগণ। এর ফলে আর নষ্ট হবে না মানুষের কর্মঘণ্টা। উপরন্তু তা দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান সহায়ক হয়ে উঠবে।