০৯:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিয়ন্ত্রণহীন ইজিবাইক: বছরে ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি

  • ৭০ লাখ অবৈধ ইজিবাইকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি
  • আরটিএ ও শুল্ক নীতির জটিলতায় আটকা দেশীয় প্রযুক্তির ইভি
  • বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি: স্বাস্থ্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে, পদক্ষেপ জরুরি

‘বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে একাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লাইট কমার্শিয়াল ভেহিকল তৈরি করছে এবং সারাদেশে চার্জিং স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কার্যকর নীতিমালা ছাড়া এগুলো সফল হবে না’- অধ্যাপক শামসুল হক, পরিবহন বিশেষজ্ঞ

ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন চলে প্রায় ৭০ লাখ অবৈধ ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার, যাকে সাধারণভাবে ইজিবাইক বলা হয়। এসব যানবাহনের কোনো বৈধ নিবন্ধন নেই, নেই সরকারের অনুমোদন, তারপরও দিনের পর দিন নির্ভারভাবে চলেই যাচ্ছে। অথচ এই বিশালসংখ্যক অবৈধ ইজিবাইক প্রতি বছর দেশের জাতীয় গ্রিড থেকে আনুমানিক ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি করছে। সংশি¬ষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে চাপে ফেলছে না, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এদিকে, দেশীয় উদ্যোক্তারা পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার তৈরি করলেও তা অনুমোদন পাচ্ছেনা। বিআরটিএ এর নানা জটিলতায় তা টাকে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে একাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লাইট কমার্শিয়াল ভেহিকল তৈরি করছে এবং সারাদেশে চার্জিং স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কার্যকর নীতিমালা ছাড়া এগুলো সফল হবে না।
জানা গেছে, দেশের একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে, যখন বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ‘বাঘ’ তৈরি শুরু করে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই বাহনটি ছিল সম্পূর্ণ বৈধ, কেন্দ্রীয় বিআরটিএ অনুমোদিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছরের প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এই বৈধ যানটি আজও রাস্তায় নামতে পারেনি, শুধুমাত্র জেলা বিআরটিএ অফিসগুলোর অনুমোদন না পাওয়ার কারণে। ‘বাঘ’-এর উদ্যোক্তা কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আমরা বুয়েটসহ দেশে-বিদেশে ৪২ মাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিআরটিএর কেন্দ্রীয় অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু প্রতিটি জেলার রোড ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) কাছে আবেদন করেও তারা আমাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এটা কেবল বৈধ উদ্যোগের প্রতি বৈষম্য নয়, বরং দেশীয় প্রযুক্তির ওপর এক ধরনের অবমূল্যায়ন।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, ‘বাঘ’ শুধুমাত্র একটি যানবাহন নয়, এটি একটি পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং আধুনিক শহর পরিবহন ব্যবস্থার অংশ হতে পারত। এতে রয়েছে সোয়াপেবল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, সোলার চার্জিং সিস্টেম, জিপিএস এবং ওয়াইফাই সংযোগ, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট সুবিধা, এবং সাত জন যাত্রী বহনের ক্ষমতা। একবার চার্জে এটি ১২০ কিলোমিটার চলতে পারে এবং সৌরবিদ্যুতে অতিরিক্ত আরও ২৫-৩০ কিলোমিটার চলতে পারে। প্রতি কিলোমিটার যাত্রায় খরচ পড়ে মাত্র ৪০-৪৫ পয়সা। স্টিল ফ্রেমে তৈরি এই যানবাহন টেকসই ও দুর্ঘটনাবিরোধী, অর্থাৎ নিরাপদ। অপরদিকে, অবৈধ ইজিবাইকগুলো ব্যাটারির জন্য অবৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ নেয়, যার কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা নেই। এদের চার্জিং স্টেশনগুলো বেপরোয়াভাবে স্থাপন করা হয়, যা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং শর্ট সার্কিট, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা ঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়া অনেক পুরোনো ব্যাটারির অকার্যকর পুনঃব্যবহার এবং সিসা দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআর,বি-র সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকার ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসা পাওয়া গেছে। মূলত ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা ও ইজিবাইকের সিসা-নির্ভর ব্যবস্থার কারণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সিসা শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত করে, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সূচক মাত্র ৪২ (১০০-এর মধ্যে)। ঢাকার বাতাসে বস্তুকণার মাত্রা বৈশ্বিক মানের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি। পরিবেশবিদরা বারবার সতর্ক করছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামী প্রজন্ম এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব থ্রি হুইলার ভচালু হলে রাজধানীর যাত্রীরা কম খরচে নিরাপদ যাতায়াত পাবেন, সরকার প্রতি বছর অন্তত ১০-১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে, এবং আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট সুবিধা থেকেও অর্থায়ন সম্ভব হবে। কিন্তু সমস্যার জায়গা শুধু অনুমোদনেই সীমাবদ্ধ নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক কাঠামোও এই উদ্যোগের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ডিজেলচালিত বাস বা গাড়িতে শুল্ক ২৫-৩০ শতাংশ, সেখানে বৈদ্যুতিক বাস বা থ্রি-হুইলারে শুল্ক পড়ছে ৪০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এমন বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থায় বৈধ ও পরিবেশবান্ধব যানবাহন উৎপাদন কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলছেন তারা।
এদিকে সরকার ঢাকায় ৪০০টি বৈদ্যুতিক বাস নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের আওতায় দুটি চার্জিং ডিপো তৈরি হচ্ছে পূর্বাচল ও কাঁচপুরে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বাস আনলেই চলবে না। প্রয়োজন পরিবহন নীতিতে সংস্কার, চার্জিং অবকাঠামো শক্তিশালী করা এবং বেসরকারি খাতকে উৎসাহ দেওয়া। না হলে এ প্রকল্পও ব্যর্থ হতে পারে।
এ বিষয়ে বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, চীন ও ভিয়েতনাম ইভিকে জাতীয় অগ্রাধিকারে তুলেছে। অথচ বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক পরিবহনের পথে নানা বাধা। কর কাঠামো ও সরকারি উদাসীনতায় উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে নিজস্ব অটোমোবাইল শিল্প গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে একাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লাইট কমার্শিয়াল ভেহিকল তৈরি করছে এবং সারাদেশে চার্জিং স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কার্যকর নীতিমালা ছাড়া এগুলো সফল হবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈদগাঁওয়ে ৪৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম শুরু

নিয়ন্ত্রণহীন ইজিবাইক: বছরে ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি

আপডেট সময় : ০৭:৩৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫
  • ৭০ লাখ অবৈধ ইজিবাইকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি
  • আরটিএ ও শুল্ক নীতির জটিলতায় আটকা দেশীয় প্রযুক্তির ইভি
  • বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি: স্বাস্থ্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে, পদক্ষেপ জরুরি

‘বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে একাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লাইট কমার্শিয়াল ভেহিকল তৈরি করছে এবং সারাদেশে চার্জিং স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কার্যকর নীতিমালা ছাড়া এগুলো সফল হবে না’- অধ্যাপক শামসুল হক, পরিবহন বিশেষজ্ঞ

ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন চলে প্রায় ৭০ লাখ অবৈধ ইলেকট্রিক থ্রি-হুইলার, যাকে সাধারণভাবে ইজিবাইক বলা হয়। এসব যানবাহনের কোনো বৈধ নিবন্ধন নেই, নেই সরকারের অনুমোদন, তারপরও দিনের পর দিন নির্ভারভাবে চলেই যাচ্ছে। অথচ এই বিশালসংখ্যক অবৈধ ইজিবাইক প্রতি বছর দেশের জাতীয় গ্রিড থেকে আনুমানিক ৩৯ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ চুরি করছে। সংশি¬ষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে চাপে ফেলছে না, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এদিকে, দেশীয় উদ্যোক্তারা পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার তৈরি করলেও তা অনুমোদন পাচ্ছেনা। বিআরটিএ এর নানা জটিলতায় তা টাকে আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে একাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লাইট কমার্শিয়াল ভেহিকল তৈরি করছে এবং সারাদেশে চার্জিং স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কার্যকর নীতিমালা ছাড়া এগুলো সফল হবে না।
জানা গেছে, দেশের একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালে, যখন বাঘ ইকো মোটরস লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক বৈদ্যুতিক থ্রি-হুইলার ‘বাঘ’ তৈরি শুরু করে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই বাহনটি ছিল সম্পূর্ণ বৈধ, কেন্দ্রীয় বিআরটিএ অনুমোদিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছরের প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন সরকারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এই বৈধ যানটি আজও রাস্তায় নামতে পারেনি, শুধুমাত্র জেলা বিআরটিএ অফিসগুলোর অনুমোদন না পাওয়ার কারণে। ‘বাঘ’-এর উদ্যোক্তা কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আমরা বুয়েটসহ দেশে-বিদেশে ৪২ মাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিআরটিএর কেন্দ্রীয় অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু প্রতিটি জেলার রোড ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) কাছে আবেদন করেও তারা আমাদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না। এটা কেবল বৈধ উদ্যোগের প্রতি বৈষম্য নয়, বরং দেশীয় প্রযুক্তির ওপর এক ধরনের অবমূল্যায়ন।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, ‘বাঘ’ শুধুমাত্র একটি যানবাহন নয়, এটি একটি পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী, নিরাপদ এবং আধুনিক শহর পরিবহন ব্যবস্থার অংশ হতে পারত। এতে রয়েছে সোয়াপেবল লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, সোলার চার্জিং সিস্টেম, জিপিএস এবং ওয়াইফাই সংযোগ, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা, মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট সুবিধা, এবং সাত জন যাত্রী বহনের ক্ষমতা। একবার চার্জে এটি ১২০ কিলোমিটার চলতে পারে এবং সৌরবিদ্যুতে অতিরিক্ত আরও ২৫-৩০ কিলোমিটার চলতে পারে। প্রতি কিলোমিটার যাত্রায় খরচ পড়ে মাত্র ৪০-৪৫ পয়সা। স্টিল ফ্রেমে তৈরি এই যানবাহন টেকসই ও দুর্ঘটনাবিরোধী, অর্থাৎ নিরাপদ। অপরদিকে, অবৈধ ইজিবাইকগুলো ব্যাটারির জন্য অবৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ নেয়, যার কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা নেই। এদের চার্জিং স্টেশনগুলো বেপরোয়াভাবে স্থাপন করা হয়, যা বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং শর্ট সার্কিট, অগ্নিকাণ্ডসহ নানা ঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়া অনেক পুরোনো ব্যাটারির অকার্যকর পুনঃব্যবহার এবং সিসা দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআর,বি-র সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকার ৯৮ শতাংশ শিশুর রক্তে বিপজ্জনক মাত্রায় সিসা পাওয়া গেছে। মূলত ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারখানা ও ইজিবাইকের সিসা-নির্ভর ব্যবস্থার কারণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সিসা শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত করে, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সূচক মাত্র ৪২ (১০০-এর মধ্যে)। ঢাকার বাতাসে বস্তুকণার মাত্রা বৈশ্বিক মানের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি। পরিবেশবিদরা বারবার সতর্ক করছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে আগামী প্রজন্ম এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।
সংশি¬ষ্টরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব থ্রি হুইলার ভচালু হলে রাজধানীর যাত্রীরা কম খরচে নিরাপদ যাতায়াত পাবেন, সরকার প্রতি বছর অন্তত ১০-১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে, এবং আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিট সুবিধা থেকেও অর্থায়ন সম্ভব হবে। কিন্তু সমস্যার জায়গা শুধু অনুমোদনেই সীমাবদ্ধ নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক কাঠামোও এই উদ্যোগের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ডিজেলচালিত বাস বা গাড়িতে শুল্ক ২৫-৩০ শতাংশ, সেখানে বৈদ্যুতিক বাস বা থ্রি-হুইলারে শুল্ক পড়ছে ৪০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত। এমন বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থায় বৈধ ও পরিবেশবান্ধব যানবাহন উৎপাদন কঠিন হয়ে দাঁড়ায় বলছেন তারা।
এদিকে সরকার ঢাকায় ৪০০টি বৈদ্যুতিক বাস নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের আওতায় দুটি চার্জিং ডিপো তৈরি হচ্ছে পূর্বাচল ও কাঁচপুরে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বাস আনলেই চলবে না। প্রয়োজন পরিবহন নীতিতে সংস্কার, চার্জিং অবকাঠামো শক্তিশালী করা এবং বেসরকারি খাতকে উৎসাহ দেওয়া। না হলে এ প্রকল্পও ব্যর্থ হতে পারে।
এ বিষয়ে বুয়েটের পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, চীন ও ভিয়েতনাম ইভিকে জাতীয় অগ্রাধিকারে তুলেছে। অথচ বাংলাদেশে বৈদ্যুতিক পরিবহনের পথে নানা বাধা। কর কাঠামো ও সরকারি উদাসীনতায় উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে নিজস্ব অটোমোবাইল শিল্প গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ইতোমধ্যে একাধিক বৈদ্যুতিক গাড়ি ও লাইট কমার্শিয়াল ভেহিকল তৈরি করছে এবং সারাদেশে চার্জিং স্টেশন গড়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু কার্যকর নীতিমালা ছাড়া এগুলো সফল হবে না।