০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভুয়া নথি দিয়ে অন্যের জমি ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা 

কক্সবাজারের মহেশখালী কালারমারছড়ায় ইয়াহিয়া খান জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অন্যের জমি ভাগিয়ে নেয়াই যেনো বাদশার পেশায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি এমন একটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। কালারমারছড়া মৌজার বিএস ৯৪০, ৪০৬, ২১৮ ও ৭৪২ খতিয়ানের জমির ভুয়া কাগজপত্র সাজিয়ে বাদশা নিজের নামে নামজারী করার চেষ্টা করছেন। অথচ তিন ওয়ারিশের ক্রয় করা জমি উল্লিখিত খতিয়ানের পরিবর্তে হরিয়ারছড়া মৌজার ৬৩, ৯১ ও ৯২ খতিয়ান থেকে নেয়া বাদশার পিতা তাজর মুল্লুকের ৪৩ শতক জমির টাকা ইতোপূর্বেই ভাগিয়ে নিয়েছেন তিনি যার খতিয়ান নম্বর-৪৪২।
এরপরও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সম্প্রতি পূর্বের নকল কাগজপত্র দিয়ে জমির মূল মালিক মৃত জবেদা খাতুন (চাঁদ বিবি), আম্বিয়া খাতুন ও ফাতেমা খাতুনের অবশিষ্ট জমিটুকু ভাগিয়ে নিতে চাইছেন অভিযুক্ত ইয়াহিয়া খান বাদশা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন মূল মালিকের ওয়ারিশরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন জমির বৈধ ওয়ারিশ ইমান আলী, আয়েশা খাতুন ও মফিজুর রহমান।
অভিযোগে তারা বলেন- ২৮৪ নাম্বার ডকেটের অধীনে ভুয়া নামজারী খতিয়ানের আবেদন করেন অভিযুক্ত ইয়াহিয়া খান বাদশা। পরে এ বিষয়ে সরজমিন তদন্তে আসলে এতে আপত্তি জানান জমির মূল ওয়ারিশরা। পরে তদন্ত রিপোর্টে আপত্তি জানিয়ে আগামি রবিবার শুনানির দিন ধার্য্য করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ভুমি কর্মকর্তা। শুধু তা-ই নয়- ভুমি সংশ্লিষ্টরা সরজমিন তদন্তে আসলে একই এলাকার মৃত মুক্তার আহমদ নামে অপর একজনের জমির দখলও নিজের দখল বলে দেখান প্রতারক বাদশা। গত ২৭ আগস্ট তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর জমা দেওয়া অভিযোগে নামজারীর কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার দাবি জানান। তাঁদের দাবি, প্রতারক বাদশার এ জালিয়াতির ষড়যন্ত্র থামানো না গেলে তাঁরা পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন এবং আইনি জটিলতায় পড়বেন।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, একাধিকবার অন্যের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা করেছেন তিনি। এমনকি এ নিয়ে গ্রামে একাধিক সালিশ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে অভিযোগকারীদের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি পূর্বে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে পিতা তাজর মুল্লুকের নামে একটি সৃজিত খতিয়ান তৈরি করেছিলেন, যার নম্বর ৪৪২। সেখানে তিনটি পৃথক খতিয়ান থেকে নেওয়া মোট ১৩৫ কড়া বা ৪৩ শতক জমি অধিগ্রহণ দেখানো হয়। এরপর তিনি ওই জমির ক্ষতিপূরণের টাকা তুলেও নিয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত এল-এ মামলা নম্বর ছিল ০৪/২০১৩-১৪ এবং আবেদন নম্বর ছিল ৯৩৯। অথচ এসব অভিযোগের পরও তিনি থামেননি, বরং আরও জমি আত্মসাৎ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, মৃত তাজর মুল্লুকের মোট ওয়ারিশ সংখ্যা আটজন। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রথম ৪৪২ নম্বর খতিয়ান পিতার নামে করলেও নব্য খতিয়ান করার চেষ্টা করছেন ওয়ারিশদের নামে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, একের পর এক ভুয়া নামজারী খতিয়ান তৈরি করা তাঁর পেশায় পরিণত হয়েছে। জমি আত্মসাৎকে কেন্দ্র করে এলাকায় তিনি প্রভাব খাটান এবং সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এভাবে ধীরে ধীরে একটি জালিয়াতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, যা স্থানীয় জমি মালিকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগকারীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাদশা প্রতারণা চালিয়ে গেলেও তাঁরা কখনো আইনের সুবিচার পাননি। পূর্বে করা সালিশে তাঁর দোষ প্রমাণিত হলেও প্রশাসনিক কাঠামোর ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে তিনি বারবার রক্ষা পেয়েছেন। এবার তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমির কাছে সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁদের আশা, এবার অন্তত প্রশাসন প্রতারকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং জমির ন্যায্য মালিকদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাফর ইকবাল জানান, প্রাপ্ত আবেদনের ভিত্তিতে নতুন নামজারীর কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, জালিয়াতি কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে কেউই বৈধ মালিকদের অধিকার হরণ করতে পারবে না। প্রশাসন ন্যায়ের পথে রয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। তাঁর এ আশ্বাসে স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও প্রতারক বাদশার শাস্তি কার্যকর হবে কিনা তা নিয়েই এখন প্রধান প্রশ্ন।
জনপ্রিয় সংবাদ

ভুয়া নথি দিয়ে অন্যের জমি ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা 

আপডেট সময় : ০৭:৩০:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কক্সবাজারের মহেশখালী কালারমারছড়ায় ইয়াহিয়া খান জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে অন্যের জমি ভাগিয়ে নেয়াই যেনো বাদশার পেশায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি এমন একটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। কালারমারছড়া মৌজার বিএস ৯৪০, ৪০৬, ২১৮ ও ৭৪২ খতিয়ানের জমির ভুয়া কাগজপত্র সাজিয়ে বাদশা নিজের নামে নামজারী করার চেষ্টা করছেন। অথচ তিন ওয়ারিশের ক্রয় করা জমি উল্লিখিত খতিয়ানের পরিবর্তে হরিয়ারছড়া মৌজার ৬৩, ৯১ ও ৯২ খতিয়ান থেকে নেয়া বাদশার পিতা তাজর মুল্লুকের ৪৩ শতক জমির টাকা ইতোপূর্বেই ভাগিয়ে নিয়েছেন তিনি যার খতিয়ান নম্বর-৪৪২।
এরপরও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সম্প্রতি পূর্বের নকল কাগজপত্র দিয়ে জমির মূল মালিক মৃত জবেদা খাতুন (চাঁদ বিবি), আম্বিয়া খাতুন ও ফাতেমা খাতুনের অবশিষ্ট জমিটুকু ভাগিয়ে নিতে চাইছেন অভিযুক্ত ইয়াহিয়া খান বাদশা। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন মূল মালিকের ওয়ারিশরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেন জমির বৈধ ওয়ারিশ ইমান আলী, আয়েশা খাতুন ও মফিজুর রহমান।
অভিযোগে তারা বলেন- ২৮৪ নাম্বার ডকেটের অধীনে ভুয়া নামজারী খতিয়ানের আবেদন করেন অভিযুক্ত ইয়াহিয়া খান বাদশা। পরে এ বিষয়ে সরজমিন তদন্তে আসলে এতে আপত্তি জানান জমির মূল ওয়ারিশরা। পরে তদন্ত রিপোর্টে আপত্তি জানিয়ে আগামি রবিবার শুনানির দিন ধার্য্য করেন সংশ্লিষ্ট এলাকার ভুমি কর্মকর্তা। শুধু তা-ই নয়- ভুমি সংশ্লিষ্টরা সরজমিন তদন্তে আসলে একই এলাকার মৃত মুক্তার আহমদ নামে অপর একজনের জমির দখলও নিজের দখল বলে দেখান প্রতারক বাদশা। গত ২৭ আগস্ট তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবর জমা দেওয়া অভিযোগে নামজারীর কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার দাবি জানান। তাঁদের দাবি, প্রতারক বাদশার এ জালিয়াতির ষড়যন্ত্র থামানো না গেলে তাঁরা পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন এবং আইনি জটিলতায় পড়বেন।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, একাধিকবার অন্যের সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা করেছেন তিনি। এমনকি এ নিয়ে গ্রামে একাধিক সালিশ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে অভিযোগকারীদের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি পূর্বে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে পিতা তাজর মুল্লুকের নামে একটি সৃজিত খতিয়ান তৈরি করেছিলেন, যার নম্বর ৪৪২। সেখানে তিনটি পৃথক খতিয়ান থেকে নেওয়া মোট ১৩৫ কড়া বা ৪৩ শতক জমি অধিগ্রহণ দেখানো হয়। এরপর তিনি ওই জমির ক্ষতিপূরণের টাকা তুলেও নিয়েছেন। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত এল-এ মামলা নম্বর ছিল ০৪/২০১৩-১৪ এবং আবেদন নম্বর ছিল ৯৩৯। অথচ এসব অভিযোগের পরও তিনি থামেননি, বরং আরও জমি আত্মসাৎ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, মৃত তাজর মুল্লুকের মোট ওয়ারিশ সংখ্যা আটজন। জালিয়াতির মাধ্যমে প্রথম ৪৪২ নম্বর খতিয়ান পিতার নামে করলেও নব্য খতিয়ান করার চেষ্টা করছেন ওয়ারিশদের নামে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, একের পর এক ভুয়া নামজারী খতিয়ান তৈরি করা তাঁর পেশায় পরিণত হয়েছে। জমি আত্মসাৎকে কেন্দ্র করে এলাকায় তিনি প্রভাব খাটান এবং সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এভাবে ধীরে ধীরে একটি জালিয়াতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, যা স্থানীয় জমি মালিকদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগকারীরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাদশা প্রতারণা চালিয়ে গেলেও তাঁরা কখনো আইনের সুবিচার পাননি। পূর্বে করা সালিশে তাঁর দোষ প্রমাণিত হলেও প্রশাসনিক কাঠামোর ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে তিনি বারবার রক্ষা পেয়েছেন। এবার তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভূমির কাছে সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁদের আশা, এবার অন্তত প্রশাসন প্রতারকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং জমির ন্যায্য মালিকদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাফর ইকবাল জানান, প্রাপ্ত আবেদনের ভিত্তিতে নতুন নামজারীর কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, জালিয়াতি কিংবা প্রতারণার মাধ্যমে কেউই বৈধ মালিকদের অধিকার হরণ করতে পারবে না। প্রশাসন ন্যায়ের পথে রয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। তাঁর এ আশ্বাসে স্থানীয়দের মধ্যে আশার সঞ্চার হলেও প্রতারক বাদশার শাস্তি কার্যকর হবে কিনা তা নিয়েই এখন প্রধান প্রশ্ন।