রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে মহানবী (সা:) এর জন্মদিন পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। দিনটি উদযাপনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বের করা হয় জশনে জুলুস র্যালি। দিনটি উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় আশেকানে গাউছিয়া রাহমানিয়া মঈনিয়া সহিদীয়া’র র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামে জনসমুদ্রে পরিণত হয় ঐতিহ্যবাহী জসনে জুলুসের র্যালি। দেশের মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লীরা। বিশেষ এ দিনটি উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনা সভায় মহানবী রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণকর সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানান ধর্মীয় নেতারা।
১২-ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষ্যে গত শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘আশেকানে গাউছিয়া রাহমানিয়ে মঈনিয়া সাহিদিয়া মাইজভান্ডারীয়া’। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ আশেকান ও ভক্তবৃন্দ সমাে বশে জড়ো হন। এতে সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী সবাইকে ফরজের পাশপাশি রাসুলের সুন্নতের ওপর বেশী বেশী আমল করার আহ্বান জানান। এরপর সৈয়দ সহিদউদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারির নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন থেকে বের হয়ে মৎসভবন- হাইকোর্ট চত্বর ও প্রেসক্লাব হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে সমাবেশ ও আলোচনা সভায় বাংলাদেশ তথা বিশ্ব মুসলিমদের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ দোয়া এবং মোনাজাত করা হয়।
এদিকে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস এবার জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। ওইদিন সকাল ১০টায় নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা থেকে জুলুস শুরু হয়। আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আয়োজনে এটি ৫৪তম জুলুস।
জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দেন দরবারে সিরিকোটের সাজ্জাদানশিন পীর আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (ম জি আ)। সঙ্গে ছিলেন হজরত সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ (ম জি আ), সৈয়দ মুহাম্মদ মেহমুদ আহমদ শাহ (ম জি আ)।
জশনে জুলুসকে ঘিরে শনিবার সকাল থেকে কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি থেকেও জুলুসপ্রেমিরা ভিড় করেন। জুলুস শুরুর আগ থেকেই ষোলশহর, বিবিরহাট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, দুই নম্বর গেইট, জিইসি এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে মাইলের পর মাইল হেঁটে জুলুসে অংশগ্রহণকারীদের শরবত, পানি, রুটি, জিলাপি, খেজুর, কলা, চকলেট দিয়ে আপ্যায়ন করছেন ভক্তরা।
হামদ, নাতে রাসূল, দরুদ ও সেøাগানে মুখরিত ছিল পুরো জশনে জুলুস। তবে এবারের জুলুসে জাতীয় পতাকা, আনজুমান ট্রাস্টের পতাকা ছাড়া অন্য যে কোনো পতাকা, ড্রাম সেট আনা, নারীর অংশগ্রহণ ও খাবার নিক্ষেপ নিষিদ্ধ ছিল। জশনে জুলুস বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, জিইসি ঘুরে একই পথে ফিরে জামেয়া মাদরাসার জুলুস মাঠে শেষ হয়। সেখানে মাহফিল, জোহর নামাজ ও দেশ জাতির সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়। জুলুসের সার্বিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসন ও নির্ধারিত স্বেচ্ছাসেবকদের দিকনির্দেশনা বিশেষ করে আনজুমান ট্রাস্ট ঘোষিত নিয়ম মেনে চলার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন আনজুমানের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার।
চট্টগ্রামে জশনে জুলুসের প্রবর্তন হয়েছে ১৯৭৪ সালের ১২ রবিউল আউয়াল। দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরিফের (পাকিস্তান) তৎকালীন সাজ্জাদানশীন, আধ্যাত্মিক সাধক, আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রা.) এ জশনে জুলুসের প্রবর্তন করেন। জুলুসের মধ্য দিয়ে প্রিয় নবিজির প্রতি সম্মান ও বিশ্বশান্তির বার্তা দেওয়া হয়।
এছাড়া দিনটি উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মসজিদ ও সরকারি ধর্মীয় স্থাপনায় বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ১২-ই রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান ও মসজিদে মসজিদে ধর্মপ্রাণ লাখ লাখ মুসুল্লীদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্র শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।


























