সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কাটার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৯ সেপ্টেম্বর এক জরুরি নির্দেশনায় সিলেট জেলা প্রশাসন পুরো জেলায় পাহাড় ও টিলা কাটার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক পাহাড় ও টিলা কাটা চলমান রয়েছে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডের ফলে পাহাড়ি এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য ধ্বংস হচ্ছে, ভূমিধস, মাটি ক্ষয় এবং বন্যার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, “পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫” এর ৬(ঙ) ধারা অনুযায়ী সিলেট জেলায় অবৈধভাবে পাহাড় ও টিলা কাটা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে, তার বিরুদ্ধে উক্ত আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই আদেশ একটি সরকারি আদেশ হিসেবে গণ্য হবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।

প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে জেলার সচেতন নাগরিকদের মধ্যে স্বস্তি প্রকাশ পেলেও, বাস্তবায়ন নিয়েই রয়েছে কিছু প্রশ্ন। স্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধভাবে টিলা কেটে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা, বাণিজ্যিক স্থাপনা ও বসতঘর। প্রশাসনিক অভিযানের অভাব, আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অপরাধীরা দীর্ঘদিন ধরে পার পেয়ে আসছিল।
এদিকে পরিবেশবিদ ও গবেষকদের মতে, পাহাড় ও টিলা কাটা শুধু পরিবেশের ওপরই নয়, মানুষের জীবন-জীবিকার ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলে। তারা বলেন, এর ফলে জলাধার হ্রাস, কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়া, প্রাকৃতিক জলাধার ও নদীর উৎস শুকিয়ে যাওয়া এবং গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া—এসবই পাহাড় কাটা ও বন উজাড়ের পরোক্ষ ফলাফল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দ্রুত অভিযান শুরু হবে এবং স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় এই পদক্ষেপকে সময়োপযোগী ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব। একইসঙ্গে, প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি—এই নির্দেশ যেন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না থেকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত পরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।























