০৮:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খেলাপি ঋণে দেউলিয়ার প্রান্তে ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

  • ৯০ শতাংশ ‘খারাপ ঋণ’ বেড়েছে বিপৎসীমায়
  • মূলধন সংকট ও প্রভিশন ঘাটতির ধাক্কায় সংকট অব্যাহত
  • অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের টিকে থাকার লড়াই

‘গত ১৫ বছরে যা লুটপাট হয়েছে, তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট গভর্নেন্সের মানোন্নয়ন অপরিহার্য’- সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, চেয়ারম্যান, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি

 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক আজ এক মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে এই ব্যাংকগুলোর শ্রেণীকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এখন দাঁড়িয়েছে বিপুল ১,৪৬,৩৬২ কোটি টাকায়। এই ঋণের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১,৩২,৪৯৯ কোটি টাকা ‘খারাপ’ বা ‘ক্ষতি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ এই ঋণ পুনরুদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। সাধারণ অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিস্থিতি সামনে রেখে ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে দেশের এই বড়ো চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক শিগগিরই তার দায়িত্ব পালন থেকে অক্ষম হয়ে পড়বে। অর্থাৎ, যেগুলো দেশের অর্থনীতির প্রধান সহায় ছিল, তারা নিজেই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যে যে ঋণ খেলাপির আওতায় পড়েছে, তার ৯০ শতাংশই ‘খারাপ ঋণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ সেই ঋণ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু তাই নয়, এসব ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তুলনায় প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণের মাত্রাও যথেষ্ট কম। জনতা ব্যাংক সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এখানে মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ খেলাপি হয়েছে এবং এর ৯৩ শতাংশ ‘খারাপ ঋণ’ হিসেবে চিহ্নিত। জনতা ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার –৩.২৫ শতাংশ, যা অর্থাৎ ঋণাত্মক। নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে ১২.৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা মারাত্মক সংকটে। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২,২৫৭ কোটি টাকা, যার প্রায় ৪০ শতাংশ খেলাপি। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২২,১৭৯ কোটি টাকা এবং ৪৪ শতাংশ ঋণ খেলাপি। সোনালী ব্যাংক তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকলেও তাদেরও খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের বেশি।
এদিকে, এসব ব্যাংকের আরেকটি বড়ো সমস্যা হলো মূলধনের সংকট। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধনের প্রাক্কালে থাকা হার (সিআরএআর) অনেক কম, যা ব্যাংকগুলোর টেকসই পরিচালনার জন্য গুরুতর হুমকি। জনতা ব্যাংকের ঋণাত্মক মূলধন হার ছাড়াও অগ্রণীর মাত্র ১.৯৭ শতাংশ, রূপালীর ২.৮৬ শতাংশ এবং সোনালীর ১০.১০ শতাংশ। এছাড়া প্রভিশন ঘাটতিও ব্যাপক সমস্যা। ব্যাংকগুলো খারাপ ঋণ ও সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য যথেষ্ট অর্থ সংরক্ষণ করতে পারছে না। এই ঘাটতি পূরণ করতে তাদের নেট মুনাফার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো শুধু খেলাপি ঋণ নিয়ে নয়, বরং পর্যাপ্ত মূলধন ও ঝুঁকিমুক্ত অর্থসংস্থান করতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এই কারণে ব্যাংকিং খাতের ভিত দগদগ করছে।
অন্যদিকে, জনতা ব্যাংক দেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হলেও বর্তমানে সবচেয়ে বিপন্ন। মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ খেলাপি এবং তার প্রায় ৯৩ শতাংশ ‘খারাপ ঋণ’ হিসেবে চিহ্নিত। ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততার হার ঋণাত্মক, যা এর আর্থিক অবস্থা বুঝিয়ে দেয়। বর্তমানে তারা লোকসান মোকাবিলায় কিছুটা সাফল্য পেয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ২,০৭১ কোটি টাকা ক্ষতি কমিয়েছে। তবে ব্যাংকটির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, সোনালী ব্যাংক তুলনামূলকভাবে বেশি স্থিতিশীল। তাদের খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশ, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এছাড়া, মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১০.১০ শতাংশ, যা কমপক্ষে ১০ শতাংশের শর্ত পূরণ করে। ব্যাংকটি সাম্প্রতিক ছয় মাসে ৫৯১ কোটি টাকা মুনাফাও করেছে। তবে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি রোধ করতে এবং আরও বেশি স্থিতিশীল হতে হবে।
এদিকে, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ৪০.৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় অপরিবর্তিত। তাদের মূলধন মাত্র ১.৯৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি ১১৪ কোটি টাকা লাভ করেছে, যা আগের বছরের ক্ষতির থেকে অনেক কম। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪৪ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের মূলধন মাত্র ২.৮৬ শতাংশ। তাদের নেট মুনাফাও কমে ৮.৩৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই কঠোর পুনর্গঠন, একীভূতকরণ ও প্রভিশন বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি তা না করা হয়, তবে এগুলো খুব শীঘ্রই আর দেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সমাধান নিতে হবে। এছাড়া কর্পোরেট গভর্নেন্স উন্নয়ন এবং সরকারি মূলধন সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পিএলসির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, অনেক দীর্ঘ সময় ধরে খেলাপি ঋণগুলো প্রকৃত অর্থে খেলাপি হিসেবে গণ্য হয়নি। বরং দীর্ঘদিন এসব ঋণ গোপনে রাখা হয়েছে। আমাদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে নতুন ঋণ দেওয়ার চেয়ে খারাপ ঋণ রিকভারির উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া।
তিনি সতর্ক করে বলেন, গত ১৫ বছরে যা লুটপাট হয়েছে, তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে।” এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট গভর্নেন্সের মানোন্নয়ন অপরিহার্য। অর্থাৎ সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া ব্যাংকগুলো টিকে থাকতে পারবে না।
অগ্রণী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, সরকারি মূলধন সহায়তা অনেক পেয়েছি, তবে নতুন মূলধন না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না। মূলধন সংকট নিরসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া আদায়ে জোর দিতে হবে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈদগাঁওয়ে ৪৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম শুরু

খেলাপি ঋণে দেউলিয়ার প্রান্তে ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

আপডেট সময় : ০৭:৫৫:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৯০ শতাংশ ‘খারাপ ঋণ’ বেড়েছে বিপৎসীমায়
  • মূলধন সংকট ও প্রভিশন ঘাটতির ধাক্কায় সংকট অব্যাহত
  • অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের টিকে থাকার লড়াই

‘গত ১৫ বছরে যা লুটপাট হয়েছে, তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট গভর্নেন্সের মানোন্নয়ন অপরিহার্য’- সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, চেয়ারম্যান, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি

 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক আজ এক মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে এই ব্যাংকগুলোর শ্রেণীকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা এখন দাঁড়িয়েছে বিপুল ১,৪৬,৩৬২ কোটি টাকায়। এই ঋণের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১,৩২,৪৯৯ কোটি টাকা ‘খারাপ’ বা ‘ক্ষতি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ এই ঋণ পুনরুদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। সাধারণ অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই পরিস্থিতি সামনে রেখে ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, যদি এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে দেশের এই বড়ো চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক শিগগিরই তার দায়িত্ব পালন থেকে অক্ষম হয়ে পড়বে। অর্থাৎ, যেগুলো দেশের অর্থনীতির প্রধান সহায় ছিল, তারা নিজেই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যে যে ঋণ খেলাপির আওতায় পড়েছে, তার ৯০ শতাংশই ‘খারাপ ঋণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ সেই ঋণ পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। শুধু তাই নয়, এসব ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তুলনায় প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণের মাত্রাও যথেষ্ট কম। জনতা ব্যাংক সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এখানে মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ খেলাপি হয়েছে এবং এর ৯৩ শতাংশ ‘খারাপ ঋণ’ হিসেবে চিহ্নিত। জনতা ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হার –৩.২৫ শতাংশ, যা অর্থাৎ ঋণাত্মক। নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে ১২.৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন। অর্থাৎ ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা মারাত্মক সংকটে। অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩২,২৫৭ কোটি টাকা, যার প্রায় ৪০ শতাংশ খেলাপি। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২২,১৭৯ কোটি টাকা এবং ৪৪ শতাংশ ঋণ খেলাপি। সোনালী ব্যাংক তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকলেও তাদেরও খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশের বেশি।
এদিকে, এসব ব্যাংকের আরেকটি বড়ো সমস্যা হলো মূলধনের সংকট। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধনের প্রাক্কালে থাকা হার (সিআরএআর) অনেক কম, যা ব্যাংকগুলোর টেকসই পরিচালনার জন্য গুরুতর হুমকি। জনতা ব্যাংকের ঋণাত্মক মূলধন হার ছাড়াও অগ্রণীর মাত্র ১.৯৭ শতাংশ, রূপালীর ২.৮৬ শতাংশ এবং সোনালীর ১০.১০ শতাংশ। এছাড়া প্রভিশন ঘাটতিও ব্যাপক সমস্যা। ব্যাংকগুলো খারাপ ঋণ ও সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য যথেষ্ট অর্থ সংরক্ষণ করতে পারছে না। এই ঘাটতি পূরণ করতে তাদের নেট মুনাফার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রেই যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো শুধু খেলাপি ঋণ নিয়ে নয়, বরং পর্যাপ্ত মূলধন ও ঝুঁকিমুক্ত অর্থসংস্থান করতেও ব্যর্থ হচ্ছে। এই কারণে ব্যাংকিং খাতের ভিত দগদগ করছে।
অন্যদিকে, জনতা ব্যাংক দেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হলেও বর্তমানে সবচেয়ে বিপন্ন। মোট ঋণের ৭৬ শতাংশ খেলাপি এবং তার প্রায় ৯৩ শতাংশ ‘খারাপ ঋণ’ হিসেবে চিহ্নিত। ব্যাংকটির মূলধন পর্যাপ্ততার হার ঋণাত্মক, যা এর আর্থিক অবস্থা বুঝিয়ে দেয়। বর্তমানে তারা লোকসান মোকাবিলায় কিছুটা সাফল্য পেয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ২,০৭১ কোটি টাকা ক্ষতি কমিয়েছে। তবে ব্যাংকটির ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, সোনালী ব্যাংক তুলনামূলকভাবে বেশি স্থিতিশীল। তাদের খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশ, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। এছাড়া, মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১০.১০ শতাংশ, যা কমপক্ষে ১০ শতাংশের শর্ত পূরণ করে। ব্যাংকটি সাম্প্রতিক ছয় মাসে ৫৯১ কোটি টাকা মুনাফাও করেছে। তবে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি রোধ করতে এবং আরও বেশি স্থিতিশীল হতে হবে।
এদিকে, অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ৪০.৫ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় অপরিবর্তিত। তাদের মূলধন মাত্র ১.৯৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি ১১৪ কোটি টাকা লাভ করেছে, যা আগের বছরের ক্ষতির থেকে অনেক কম। রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪৪ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের মূলধন মাত্র ২.৮৬ শতাংশ। তাদের নেট মুনাফাও কমে ৮.৩৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে এখনই কঠোর পুনর্গঠন, একীভূতকরণ ও প্রভিশন বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি তা না করা হয়, তবে এগুলো খুব শীঘ্রই আর দেশের অর্থনীতিকে সহায়তা করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত সমাধান নিতে হবে। এছাড়া কর্পোরেট গভর্নেন্স উন্নয়ন এবং সরকারি মূলধন সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের পিএলসির চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, অনেক দীর্ঘ সময় ধরে খেলাপি ঋণগুলো প্রকৃত অর্থে খেলাপি হিসেবে গণ্য হয়নি। বরং দীর্ঘদিন এসব ঋণ গোপনে রাখা হয়েছে। আমাদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে নতুন ঋণ দেওয়ার চেয়ে খারাপ ঋণ রিকভারির উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া।
তিনি সতর্ক করে বলেন, গত ১৫ বছরে যা লুটপাট হয়েছে, তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে এক থেকে দুই বছর সময় লাগবে।” এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট গভর্নেন্সের মানোন্নয়ন অপরিহার্য। অর্থাৎ সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ছাড়া ব্যাংকগুলো টিকে থাকতে পারবে না।
অগ্রণী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, সরকারি মূলধন সহায়তা অনেক পেয়েছি, তবে নতুন মূলধন না দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে না। মূলধন সংকট নিরসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া আদায়ে জোর দিতে হবে।