০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ি অধিকার রক্ষার প্রতীক ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আন্দোলনের প্রতীক। তিনি পাহাড়ের শিক্ষা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয়, ভাষা ও সংস্কৃতির দাবিতে তিনি ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর।

আজ সোমবার এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার উদযাপন কমিটির আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ন সমন্বয়কারী জাকির হোসেন।

আলোচনা সভায় বিএমএসসি সধিারণ সম্পাদক অংশৈয়েসিং মারমা বলেন, এম এন লারমা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ১৯৭২ সালে সংবিধান গণপরিষদে তিনি পাহাড় ও সমতলের মানুষের অধিকারের প্রশ্নটি জোরালোভাবে উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখন পঞ্চাশটিরও বেশি জনগোষ্ঠীকে ‘জাতি’ নামের এক পরিচয়ে বেঁধে দেন। এরপর ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু হয় সশস্ত্র আন্দোলন, যা টিকে থাকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। সে সময়ে সরকার আন্দোলনকে ‘বিচ্ছিন্নবাদী’ বলে অভিহিত করলেও পরে একে ‘যুক্তিক সংগ্রাম’ হিসেবে মেনে নেয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হলেও সাতাশ বছর পেরিয়ে গেলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের খবর মূলধারার গণমাধ্যমে গুরুত্ব পায় না। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হলেও ১২ হাজার বম জনগোষ্ঠীর দুর্দশা অদৃশ্য থেকে যায়। এর মধ্যে চার হাজারের বেশি বম মানুষ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী এবং কয়েক হাজার বম ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ এসব খবরও গণমাধ্যমে স্থান পায় না।

এমএন লারমা পাহাড়ের শিক্ষার উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তিনি সবসময় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থস ম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা বলেন, শৈশবে একটি আহত পাখিকে পরিচর্যা করে সুস্থ করে তোলার ঘটনাকে তিনি লারমার মানবিকতা ও পরিবেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনার সময় তিনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকারের দাবি জানান এবং সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেন—“আমি বাঙালি নই, আমি একজন পাহাড়ি।”

সাংবাদিক এহসান মাহমুদ বলেন, বিট্রিশরা যেমন ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতি অনুসরণ করেছিল, স্বাধীনতার পর থেকেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই একই নীতি বহাল রয়েছে। সবসময় ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ কৌশলে শাসন চালানো হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও নিজেকে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। পাকিস্তান আমলেও এম এন লারমা পাহাড়িদের অধিকারের প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাকিস্তানের সাময়িক সরকার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে যখন বলা হলো জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে বাঙালি পরিচয়ে বাঁধা হবে, তখন তিনি প্রতিবাদ জানান। তিনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধকিার দাবি করলওে সরকার প্রত্যাখ্যান করলে তিনি গণপরিষদ র্বজন কর। তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর যে ঐকমত কমিশন গঠিত হয়েছিল, সেখানে কোনো আদিবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আর ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নে সরকার বারবার তালবাহানা করছে।

সভায় অরও বক্তব্য দেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপায়ন খিসা, লেখক ও গবেষক পাবেল পার্থ। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবনী পাঠ করেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

জীববৈচিত্র্য ও পাহাড়ি অধিকার রক্ষার প্রতীক ছিলেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা

আপডেট সময় : ০৮:৪৭:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আন্দোলনের প্রতীক। তিনি পাহাড়ের শিক্ষা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয়, ভাষা ও সংস্কৃতির দাবিতে তিনি ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর।

আজ সোমবার এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার উদযাপন কমিটির আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পার্বত্য চট্রগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমা সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ন সমন্বয়কারী জাকির হোসেন।

আলোচনা সভায় বিএমএসসি সধিারণ সম্পাদক অংশৈয়েসিং মারমা বলেন, এম এন লারমা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। ১৯৭২ সালে সংবিধান গণপরিষদে তিনি পাহাড় ও সমতলের মানুষের অধিকারের প্রশ্নটি জোরালোভাবে উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখন পঞ্চাশটিরও বেশি জনগোষ্ঠীকে ‘জাতি’ নামের এক পরিচয়ে বেঁধে দেন। এরপর ১৯৭৬ সাল থেকে শুরু হয় সশস্ত্র আন্দোলন, যা টিকে থাকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। সে সময়ে সরকার আন্দোলনকে ‘বিচ্ছিন্নবাদী’ বলে অভিহিত করলেও পরে একে ‘যুক্তিক সংগ্রাম’ হিসেবে মেনে নেয়। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হলেও সাতাশ বছর পেরিয়ে গেলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের খবর মূলধারার গণমাধ্যমে গুরুত্ব পায় না। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হলেও ১২ হাজার বম জনগোষ্ঠীর দুর্দশা অদৃশ্য থেকে যায়। এর মধ্যে চার হাজারের বেশি বম মানুষ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী এবং কয়েক হাজার বম ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ এসব খবরও গণমাধ্যমে স্থান পায় না।

এমএন লারমা পাহাড়ের শিক্ষার উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় তিনি সবসময় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থস ম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা বলেন, শৈশবে একটি আহত পাখিকে পরিচর্যা করে সুস্থ করে তোলার ঘটনাকে তিনি লারমার মানবিকতা ও পরিবেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনার সময় তিনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচয়, ভাষা, সংস্কৃতি ও অধিকারের দাবি জানান এবং সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেন—“আমি বাঙালি নই, আমি একজন পাহাড়ি।”

সাংবাদিক এহসান মাহমুদ বলেন, বিট্রিশরা যেমন ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতি অনুসরণ করেছিল, স্বাধীনতার পর থেকেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই একই নীতি বহাল রয়েছে। সবসময় ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ কৌশলে শাসন চালানো হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও নিজেকে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। পাকিস্তান আমলেও এম এন লারমা পাহাড়িদের অধিকারের প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাকিস্তানের সাময়িক সরকার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে যখন বলা হলো জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে বাঙালি পরিচয়ে বাঁধা হবে, তখন তিনি প্রতিবাদ জানান। তিনি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধকিার দাবি করলওে সরকার প্রত্যাখ্যান করলে তিনি গণপরিষদ র্বজন কর। তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর যে ঐকমত কমিশন গঠিত হয়েছিল, সেখানে কোনো আদিবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আর ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়নে সরকার বারবার তালবাহানা করছে।

সভায় অরও বক্তব্য দেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দীপায়ন খিসা, লেখক ও গবেষক পাবেল পার্থ। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবনী পাঠ করেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।