অবশেষে নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার দীর্ঘ দশ বছর পর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুকাঙ্খিত খুলনা-মংলা রেলপথ। আগামী ৯ নভেম্বর এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুলনা মংলা রেললাইন চালু হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌ বন্দর মোংলার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
এদিকে, রেলপথ পরিদর্শনে আগামীকাল শনিবার খুলনা সফরে আসছেন রেলপথ মন্ত্রী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ট্রানজিট সুবিধার আওতায় মোংলা বন্দর থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং নেপাল, ভুটানের পণ্য পরিবহনে সাশ্রয় ও সহজ করতে খুলনার ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা বন্দর জেটি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে। শুরুতে প্রকল্প মেয়াদ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার।
২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোংলা-খুলনা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।
তবে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। সে সঙ্গে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসেন অ্যান্ড টুব্রো রূপসা নদীর ওপর রেলসেতুর নির্মাণকাজ করেছে। বাকি কাজ করেছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।
প্রকল্পটির কাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে আছে রূপসা নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণ, মূল রেললাইন স্থাপন এবং টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিংস্থাপন। শুরু থেকেই প্রকল্পটি নানা ধরনের বাধার মুখে পড়ে। তিন বছর মেয়াদের কাজটির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিতে সময় লাগে দুই বছর।
আর এ ধীরগতির কারণে তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পটি ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। দুই দফায় প্রকল্প সংশোধনের কারণে এই ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। তবে, তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, খুলনা-মোংলা রেলপথের নির্মাণ কাজ শেষের পথে। অক্টোবরের শেষে খুলনা-মোংলা রেলপথ (ফুলতলা রেলস্টেশন থেকে মোংলা বন্দরের দিগরাজ) দিয়ে রেল চলাচল শুরুর পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে কাজ। রেলপথের ৯৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি মাত্র দুই শতাংশ রেলপথ ও কিছু ফিনিশিংয়ের নির্মাণ কাজ চলমান। চলতি মাসের মধ্যেই এসব কাজ সম্পন্ন হবে।
সবকিছুতে চলছে শেষ সময়ে ছোঁয়া। তবে নগরীর জিরোপয়েন্ট এলাকার কাছে রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের ক্রসিং এলাকায় লাইন কিছুটা দেবে আছে। যা ঠিক করার কাজ চলছে। এছাড়া আরও কিছু স্থানেই লাইন দেবে গেছে। এই এলাকার স্টেশনের ভবনের দেওয়ালে এরই মধ্যে বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে। রেলক্রসিং বা সিগন্যালের কাজ এখনো হয়নি।
প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, খুলনা-মোংলা রেললাইনটি নভেম্বরে উদ্বোধনের সম্ভাবনা আছে।
অপরদিকে, রাজনৈতিক সফরে আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওইদিন খুলনার ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। একইদিন খুলনা-মোংলা রেল লাইনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রেলপথ মন্ত্রী খুলনায় আসছেন কাল :
এদিকে, খুলনা-মোংলা রেলপথ পরিদর্শনে রেলপথমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম সুজন এক দিনের সফরে আগামীকাল (১৪ অক্টোবর) শনিবার খুলনা সফরে আসছেন।
সফরসূচি অনুযায়ী মন্ত্রী ১৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টায় খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে খুলনা-মোংলা রেলওয়ে প্রকল্পের এলাইনমেন্ট (সেতু নম্বর-১০) পর্যন্ত মোটর ট্রলিযোগে পরিদর্শন, দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রকল্পের মোহাম্মদ নগর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন এবং দুপুর একটায় মোহাম্মদ নগর থেকে বাগেরহাট জেলায় নবনির্মিত মোংলা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত মোটর ট্রলিযোগে পরিদর্শন করবেন। ঐদিন বিকালে মন্ত্রী ঢাকার উদ্দেশ্যে মোংলা ত্যাগ করবেন।

























