০৩:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিপদের সময় ভরসার নাম মোস্তাফিজ

তিনি খুব বেশি কথা বলেন না। শান্ত স্বভাব, মৃদুভাষী। মোস্তাফিজুর রহমান যেন মাঠের বাইরে এক রহস্যময় চরিত্র—যার হাসি লুকিয়ে থাকে চোখের কোণে, যার কথাগুলো সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রভাবশালী। সাংবাদিকদের কাছে তাঁকে পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মতো, আর পেলেও, প্রশ্নের জবাব হয়ত এক শব্দেই শেষ।

কিন্তু সতীর্থদের কাছে? ভিন্ন এক মোস্তাফিজ। হাস্যরসপ্রিয়, প্রাণবন্ত, মজার মানুষ। কে সবচেয়ে বেশি মজা করেন? জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের তালিকায় ওপরের সারিতে থাকবেন মোস্তাফিজই।

 

মাঠের বাইরে তাঁর এমন এক দৃশ্য কিছুদিন আগেই দেখা গেছে। এশিয়া কাপ চলাকালীন আবুধাবি থেকে দুবাইয়ের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। সবাই লাগেজ তুলে দিয়েছে বাসে। মোস্তাফিজ এলেন শেষে। হোটেলের গেটের বদলে দৌড় দিলেন পেস কোচ শেন টেইটের দিকে। লাগেজটা একবার ছুঁইয়ে দিলেন টেইটের গায়ে, আবার সরিয়ে নিলেন। দুজনেই হাসছেন, মুখে কোনো কথা নেই—শুধু বোঝা যাচ্ছে, এই ‘দুষ্টুমিতে’ কতটুকু বন্ধুত্ব লুকিয়ে।

শেন টেইট পরদিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “আমার কাজই হলো ওকে খুশি রাখা। আত্মবিশ্বাস দিতে পারলেই বাকি কাজ ও নিজেই করে ফেলবে।”

সেই কথার প্রমাণ মিলেছে ঠিক পরদিনই—এশিয়া কাপের সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে।

প্রথম ৬ ওভারে তাসকিন একটি উইকেট নিলেও, লঙ্কানরা তুলে ফেলেছিল ৫৩ রান। চাপের মুহূর্তে বল হাতে আসেন মোস্তাফিজ। প্রথম ওভারে দেন মাত্র ৩ রান। পরের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজ ফিরিয়ে দেন কুশল মেন্ডিসকে—ভাঙে জুটি।

এরপর ১৪তম ওভারে মোস্তাফিজ ফেরান কুশল পেরেরাকে। ১৭তম ওভারে চাপের মুহূর্তে এসে শানাকাকে প্রায় ফিরিয়েই দিয়েছিলেন, তবে ক্যাচ মিস! তবুও ওভারটা গেল রান না দিয়েই।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৯তম ওভার। শরীফুলের লাগাতার দুই ছক্কা হজমের পর বোলিংয়ে এলেন মোস্তাফিজ। প্রথম বলে রান আউট, চতুর্থ বলে মেন্ডিসের উইকেট, আর শেষ বলে হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে ওভার শেষ করলেন মাত্র ৫ রান দিয়ে।

 

পুরো ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট! বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম নায়ক তিনিই।

এ তো কেবল এক ম্যাচের গল্প। মোস্তাফিজ তো বাংলাদেশের জন্য বিপদের সময়ে সামনে এসেছেন বহুবার।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৭.৯২।

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জয় (৫৭) যার খেলার সাক্ষী, সেই তিনিই—মোস্তাফিজুর রহমান। সেই ম্যাচগুলোতে তিনি ৬.২০ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১০৩ উইকেট!

২০২৫ সালে ছবিটা আরও স্পষ্ট। মোস্তাফিজ খেলেন, বাংলাদেশ জেতে। এ বছর তিনি না খেললে ৮ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। তাঁর খেলা ১১ ম্যাচে হার মাত্র একটি, সেটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে—পরবর্তীতে যাদেরই হারিয়ে সুপার ফোরে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা।

সেই জয়ে ম্যাচের হিরো ছিলেন সাইফ হাসান, কিন্তু ম্যাচ শেষে তিনিই বলেছিলেন
“উনি যখনই বল হাতে আসেন, দল একটা সংকটের মধ্যে থাকে। বেশিরভাগ সময়েই উনি ডেলিভার করেন।”

আর তাই, তিনি বাংলাদেশের ‘বিপদের বন্ধু’—ত্রাতা হয়ে মাঠে নামেন যখন দল চাপে।

মোস্তাফিজ যদি খুশি থাকেন, বাংলাদেশ দলও জিততে থাকে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

বিপদের সময় ভরসার নাম মোস্তাফিজ

আপডেট সময় : ১২:০৯:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তিনি খুব বেশি কথা বলেন না। শান্ত স্বভাব, মৃদুভাষী। মোস্তাফিজুর রহমান যেন মাঠের বাইরে এক রহস্যময় চরিত্র—যার হাসি লুকিয়ে থাকে চোখের কোণে, যার কথাগুলো সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রভাবশালী। সাংবাদিকদের কাছে তাঁকে পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মতো, আর পেলেও, প্রশ্নের জবাব হয়ত এক শব্দেই শেষ।

কিন্তু সতীর্থদের কাছে? ভিন্ন এক মোস্তাফিজ। হাস্যরসপ্রিয়, প্রাণবন্ত, মজার মানুষ। কে সবচেয়ে বেশি মজা করেন? জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের তালিকায় ওপরের সারিতে থাকবেন মোস্তাফিজই।

 

মাঠের বাইরে তাঁর এমন এক দৃশ্য কিছুদিন আগেই দেখা গেছে। এশিয়া কাপ চলাকালীন আবুধাবি থেকে দুবাইয়ের পথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। সবাই লাগেজ তুলে দিয়েছে বাসে। মোস্তাফিজ এলেন শেষে। হোটেলের গেটের বদলে দৌড় দিলেন পেস কোচ শেন টেইটের দিকে। লাগেজটা একবার ছুঁইয়ে দিলেন টেইটের গায়ে, আবার সরিয়ে নিলেন। দুজনেই হাসছেন, মুখে কোনো কথা নেই—শুধু বোঝা যাচ্ছে, এই ‘দুষ্টুমিতে’ কতটুকু বন্ধুত্ব লুকিয়ে।

শেন টেইট পরদিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “আমার কাজই হলো ওকে খুশি রাখা। আত্মবিশ্বাস দিতে পারলেই বাকি কাজ ও নিজেই করে ফেলবে।”

সেই কথার প্রমাণ মিলেছে ঠিক পরদিনই—এশিয়া কাপের সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে।

প্রথম ৬ ওভারে তাসকিন একটি উইকেট নিলেও, লঙ্কানরা তুলে ফেলেছিল ৫৩ রান। চাপের মুহূর্তে বল হাতে আসেন মোস্তাফিজ। প্রথম ওভারে দেন মাত্র ৩ রান। পরের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজ ফিরিয়ে দেন কুশল মেন্ডিসকে—ভাঙে জুটি।

এরপর ১৪তম ওভারে মোস্তাফিজ ফেরান কুশল পেরেরাকে। ১৭তম ওভারে চাপের মুহূর্তে এসে শানাকাকে প্রায় ফিরিয়েই দিয়েছিলেন, তবে ক্যাচ মিস! তবুও ওভারটা গেল রান না দিয়েই।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ১৯তম ওভার। শরীফুলের লাগাতার দুই ছক্কা হজমের পর বোলিংয়ে এলেন মোস্তাফিজ। প্রথম বলে রান আউট, চতুর্থ বলে মেন্ডিসের উইকেট, আর শেষ বলে হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে ওভার শেষ করলেন মাত্র ৫ রান দিয়ে।

 

পুরো ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ২০ রান দিয়ে ৩ উইকেট! বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম নায়ক তিনিই।

এ তো কেবল এক ম্যাচের গল্প। মোস্তাফিজ তো বাংলাদেশের জন্য বিপদের সময়ে সামনে এসেছেন বহুবার।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে তাঁর ইকোনমি রেট মাত্র ৭.৯২।

বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জয় (৫৭) যার খেলার সাক্ষী, সেই তিনিই—মোস্তাফিজুর রহমান। সেই ম্যাচগুলোতে তিনি ৬.২০ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ১০৩ উইকেট!

২০২৫ সালে ছবিটা আরও স্পষ্ট। মোস্তাফিজ খেলেন, বাংলাদেশ জেতে। এ বছর তিনি না খেললে ৮ ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ। তাঁর খেলা ১১ ম্যাচে হার মাত্র একটি, সেটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে—পরবর্তীতে যাদেরই হারিয়ে সুপার ফোরে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা।

সেই জয়ে ম্যাচের হিরো ছিলেন সাইফ হাসান, কিন্তু ম্যাচ শেষে তিনিই বলেছিলেন
“উনি যখনই বল হাতে আসেন, দল একটা সংকটের মধ্যে থাকে। বেশিরভাগ সময়েই উনি ডেলিভার করেন।”

আর তাই, তিনি বাংলাদেশের ‘বিপদের বন্ধু’—ত্রাতা হয়ে মাঠে নামেন যখন দল চাপে।

মোস্তাফিজ যদি খুশি থাকেন, বাংলাদেশ দলও জিততে থাকে।

এমআর/সবা