০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভাসমান বেডে সবজি চাষে সফলতা দেখছেন চাষীরা

  • সবুজ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৯:২১:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩
  • 91

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পতিত বিলে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চষীরা।দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির দিনে নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রয় করে বাড়তি আয় করছেন চাষীরা।

ভাসমান বেডে সবজি পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।কচুরিপানা পঁচিয়ে বেড তৈরি করে এর ওপর নানা জাতের সবজি চাষ করছেন তারা। এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন। এ পদ্ধতিতে আবাদকৃত সবজির ফলন অনেক ভালো হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৭ টি ইউনিয়নে ২১ টি প্রদর্শনীর আওতায় ৮৪ টি ভাসমান সবজি চাষ করা হয়েছে। পতিত বিলে ভাসমান সবজি চাষে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে বীজ সার সরবরাহ, বেড তৈরির খরচ ও বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ সহায়তা দেয়ায় চাষিদের ভাসমান বেডে সবজি চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। একদিকে এই কাজে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। ভাসমান বেডে সবজি চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। তাছাড়া কোনো কীটনাশকও দিতে হয় না। ফলে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পতিত বিলে পানির ওপরে লম্বালম্বিভাবে দুটি বাঁশ ও কলাগাছ ফেলে ভাসমান বেড তৈরি করেছেন চাষিরা। বেডের ওপর কুচুরি পানা ও শেওলার স্তুুপ করে তা পঁচে শুকিয়ে তার ওপর সামান্য মাটি ছিটিয়ে দিয়ে ৫-৭ দিন পরেই ওই ভাসমান বেডের ওপর চাষ করছেন পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, পালংশাক, কলমি শাক, ঢেঁড়শ, বরবটি, লাউ, মসলা ও সিম। এতে দেখা যায় মাসখানেকের মধ্যেই সবজি বাজারজাতের উপযোগী হয়ে যায়। যা একদিকে তাদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটাতে সক্ষম হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। এসব এলাকায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ নতুন বলে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আগ্রহ বাড়ছে।

ধরনিবাড়ি ইউনিয়নের কিশামত মধুপুর কেকতির পাড় গ্রামের সাইদুল জানান, পতিত বিলটিতে ৪টি করে ১২ টি ভাসমান বেড তৈরি করে নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। আগামীতে বিলটিতে আরও বেশি বেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব হবে বলে তারা জানান।

একই এলাকার ভাসমান সবজি চাষি এনামুল বলেন, চারটি করে বেড তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার টাকা। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পুরন করার পরেও প্রায় ৭ হাজার টাকার সবজি বাজারে বিক্রি করেছেন। তাতে প্রায় ২ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল।

থেতরাই ইউনিয়নের আবেদ আলী জানান, ৪ ফুট পানির ওপর ভাসমান বেড করা খুবই কষ্টসাধ্য। কষ্ট হলেও আমরা সাফল্য পেয়েছি। বাজারে এই বেডের সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাজাহান জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ করতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রদর্শনীতে ভাসমান বেডে দেয়া হচ্ছে। ভাসমান বেডে সবজি চাষ করতে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও বেড তৈরি করতে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, পতিত পকুর, খাল ও বিলে ভাসমান বেডে সবজি চাষে দিন দিন কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে ভাসমান সবজির চাষ বিনা খরচে প্রদর্শনীতে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই অনেক আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষকরা সবজির উচ্চমূল্য পাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আগামীতে এ উপজেলায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

ভাসমান বেডে সবজি চাষে সফলতা দেখছেন চাষীরা

আপডেট সময় : ০৯:২১:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি 

কুড়িগ্রামের উলিপুরে পতিত বিলে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চষীরা।দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির দিনে নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রয় করে বাড়তি আয় করছেন চাষীরা।

ভাসমান বেডে সবজি পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন চাষীরা।কচুরিপানা পঁচিয়ে বেড তৈরি করে এর ওপর নানা জাতের সবজি চাষ করছেন তারা। এক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণসহ কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন। এ পদ্ধতিতে আবাদকৃত সবজির ফলন অনেক ভালো হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৭ টি ইউনিয়নে ২১ টি প্রদর্শনীর আওতায় ৮৪ টি ভাসমান সবজি চাষ করা হয়েছে। পতিত বিলে ভাসমান সবজি চাষে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিনামূল্যে বীজ সার সরবরাহ, বেড তৈরির খরচ ও বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ সহায়তা দেয়ায় চাষিদের ভাসমান বেডে সবজি চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। একদিকে এই কাজে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। ভাসমান বেডে সবজি চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। তাছাড়া কোনো কীটনাশকও দিতে হয় না। ফলে সম্পূর্ণ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পতিত বিলে পানির ওপরে লম্বালম্বিভাবে দুটি বাঁশ ও কলাগাছ ফেলে ভাসমান বেড তৈরি করেছেন চাষিরা। বেডের ওপর কুচুরি পানা ও শেওলার স্তুুপ করে তা পঁচে শুকিয়ে তার ওপর সামান্য মাটি ছিটিয়ে দিয়ে ৫-৭ দিন পরেই ওই ভাসমান বেডের ওপর চাষ করছেন পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, লাল শাক, পালংশাক, কলমি শাক, ঢেঁড়শ, বরবটি, লাউ, মসলা ও সিম। এতে দেখা যায় মাসখানেকের মধ্যেই সবজি বাজারজাতের উপযোগী হয়ে যায়। যা একদিকে তাদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটাতে সক্ষম হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন। এসব এলাকায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ নতুন বলে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আগ্রহ বাড়ছে।

ধরনিবাড়ি ইউনিয়নের কিশামত মধুপুর কেকতির পাড় গ্রামের সাইদুল জানান, পতিত বিলটিতে ৪টি করে ১২ টি ভাসমান বেড তৈরি করে নানা জাতের সবজি চাষ করা হয়েছে। আগামীতে বিলটিতে আরও বেশি বেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব হবে বলে তারা জানান।

একই এলাকার ভাসমান সবজি চাষি এনামুল বলেন, চারটি করে বেড তৈরি করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৫ হাজার টাকা। পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পুরন করার পরেও প্রায় ৭ হাজার টাকার সবজি বাজারে বিক্রি করেছেন। তাতে প্রায় ২ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল।

থেতরাই ইউনিয়নের আবেদ আলী জানান, ৪ ফুট পানির ওপর ভাসমান বেড করা খুবই কষ্টসাধ্য। কষ্ট হলেও আমরা সাফল্য পেয়েছি। বাজারে এই বেডের সবজির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাজাহান জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষ করতে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের প্রদর্শনীতে ভাসমান বেডে দেয়া হচ্ছে। ভাসমান বেডে সবজি চাষ করতে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও বেড তৈরি করতে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, পতিত পকুর, খাল ও বিলে ভাসমান বেডে সবজি চাষে দিন দিন কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে ভাসমান সবজির চাষ বিনা খরচে প্রদর্শনীতে দেয়া হয়েছে। এ কারণেই অনেক আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষকরা সবজির উচ্চমূল্য পাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আগামীতে এ উপজেলায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করেন।