- মশা মারতে ড্রোন, ব্যাঙের ব্যবহার, সব উদ্যোগই ব্যর্থ
- লার্ভা দমনে ছাড়া হয় ব্যাঙ, হাঁস, তেলাপিয়া ও গাপ্পি মাছ
- ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা থেমে নেই
প্রতিবছরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা থেমে নেই। মশা দমনে তদারকির দায়িত্বে থাকা কাউন্সিলররাও নেই এক বছর ধরে। এতে বর্তমানে দুই সিটি করপোরেশনের মশা দমনে দেখা দিয়েছে হযবরল অবস্থা, যার কারণে হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। রাজধানীতে মশা দমনে বারবার নগর কর্তৃপক্ষ নিয়েছিল অভিনব সব কৌশল। মশার উৎপত্তিস্থল শনাক্তে ব্যবহার করা হয়েছিল ড্রোন। আবার পানিতে লার্ভা দমনে ছাড়া হয়েছিল ব্যাঙ, হাঁস, তেলাপিয়া ও গাপ্পি মাছ। কিন্তু সবই ব্যর্থ হয়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। নগরবাসীকে মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে গত ১০ বছরে দুই সিটি করপোরেশন বাজেটে বরাদ্দ রেখেছিল প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বরাদ্দ ছিল ৫৬০ কোটি টাকার বেশি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৭০ কোটি টাকা। এরপরও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি মশার উপদ্রব। নগরবাসীর অভিযোগ, মশা থেকে তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে, আর এতে তারা রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। সিটি করপোরেশনের নামমাত্র কার্যক্রমে মশা কমার বদলে আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৪ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ১১.৯৫ কোটি), ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩.২৫ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ১৬.৮৫ কোটি), ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২০ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ১৭.৫০ কোটি), ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২১ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ১৭.৫০ কোটি), ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৯.৩০ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ৫৮ কোটি), ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ৫০.৫০ কোটি), ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৫ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ৫১.৫৩ কোটি), ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৬ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ৫২.৫০ কোটি), ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৪.৫০ কোটি টাকা (সংশোধিত বাজেট ৮৭.৫০ কোটি) এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) গত ১০ অর্থবছরে প্রায় ২৭০ কোটি টাকা মশক নিধনে বরাদ্দ দেয়। যার মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২.৫০ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১.৫০ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৫.৬০ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৬ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩২.৭৫ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০.০২ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১.০২ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৮.৮৩ কোটি টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪৪.৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালিত এক জরিপে (প্রাক-বর্ষা) দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব স্বাভাবিক মানদণ্ডের তুলনায় উদ্বেগজনক হারে বেশি। জরিপে ব্যবহৃত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ অনুযায়ী কোনো এলাকায় এডিস লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে হিসেবে ধরা হয়। জরিপে দেখা যায়, দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। অর্থাৎ এসব এলাকায় ১০০টি পানির পাত্রের মধ্যে ২০টিরও বেশি জায়গায় এডিস মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। ফলে এলাকাগুলোকে ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো ২, ৮, ১২, ১৩, ২২ ও ৩৪। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো ৩, ৪, ২৩, ৩১, ৪১, ৪৬ ও ৪৭। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণসহ মশার বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি কর্মী নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছেন। মশক, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা দুটি স্তরে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমাদের কর্মীরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। অন্য বছরের তুলনায় ডেঙ্গু এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে অনেকটা। এছাড়া, মশার ওষুধ ঠিকমতো ছিটানো হচ্ছে কি না, সেটি আমরা তদারকি করছি।’
























