০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাড়ছে যৌন নিপীড়ন

চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ধর্ষণের শিকার ৩৯০ নারী-শিশু

দেশে যৌন নিপীড়ণ ও ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৩৯০ জন যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি শিশু বর্বরোচিত ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে। সামাজিকভাবে ন্যায় বিচার না পাওয়ায় স্কুলছাত্রীসহ অন্তত ৫ জন আত্মহত্যা করেছেন।

পিবিআই এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ধর্ষণ ঘটেছে ভুক্তভোগীর পরিচিতজন, নিকটাত্মীয় বা বিবাহিত পুরুষদের দ্বারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েও নানা সামাজিক, মানসিক ও প্রযুক্তিগত কারণে যৌন নিপীড়ণ বাড়ছে। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক জানিয়েছেন, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার ধর্ষণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

রংপুর শহরে শ্বশুর কর্তৃক যৌন নিপীড়ণের পর এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। পুলিশ নিহতের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ৮ মাসে ৭২৫ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জন ধর্ষণের শিকার, ১৩৪ জন ধর্ষণের চেষ্টা, মামলা হয়েছে মাত্র ৪৩৬টি।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মাসে ৩৯০ জন কন্যাশিশু ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ২৯ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু।

পিবিআইর ২০১৪–২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার ৫০,৫৮৬ জন, গণধর্ষণ ৩,৬১১টি, ধর্ষণের কারণে মৃত্যু ৩২১ জন। ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মামলা হয়েছে ৭৩,৬৫২টি। ধর্ষকরা ২০.২৩% মাদকাসক্ত এবং ২৭.৩৮% পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। ভুক্তভোগীর ৭২.৬১% শিশু বা শিক্ষার্থী।

ধর্ষণের পেছনে রয়েছে অপরাধপ্রবণ মানসিকতা, নিয়ন্ত্রণহীন যৌন চাহিদা, সাইকোলজি ও মানসিক অস্থিরতা, মাদকাসক্তি, ক্ষমতার অপব্যবহার, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “ধর্ষণ একটি সামাজিক সমস্যা। শুধু আইন বা শাস্তি নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং রাষ্ট্রকেও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

ড. তৌহিদুল হক বলেন, “পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সবচেয়ে বেশি সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে, কারণ ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ণ সমাজের গভীর সমস্যার প্রতিফলন।”

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

মূল্যস্ফীতি এখনো ঊর্ধ্বমুখী

বাড়ছে যৌন নিপীড়ন

চলতি বছরের প্রথম ৮ মাসে ধর্ষণের শিকার ৩৯০ নারী-শিশু

আপডেট সময় : ০৯:১৯:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

দেশে যৌন নিপীড়ণ ও ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৩৯০ জন যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৫টি শিশু বর্বরোচিত ধর্ষণের পর হত্যা হয়েছে। সামাজিকভাবে ন্যায় বিচার না পাওয়ায় স্কুলছাত্রীসহ অন্তত ৫ জন আত্মহত্যা করেছেন।

পিবিআই এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ ধর্ষণ ঘটেছে ভুক্তভোগীর পরিচিতজন, নিকটাত্মীয় বা বিবাহিত পুরুষদের দ্বারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েও নানা সামাজিক, মানসিক ও প্রযুক্তিগত কারণে যৌন নিপীড়ণ বাড়ছে। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক জানিয়েছেন, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার ধর্ষণ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

রংপুর শহরে শ্বশুর কর্তৃক যৌন নিপীড়ণের পর এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। পুলিশ নিহতের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ৮ মাসে ৭২৫ জন শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ জন ধর্ষণের শিকার, ১৩৪ জন ধর্ষণের চেষ্টা, মামলা হয়েছে মাত্র ৪৩৬টি।

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮ মাসে ৩৯০ জন কন্যাশিশু ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ২৯ জন প্রতিবন্ধী কন্যাশিশু।

পিবিআইর ২০১৪–২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, ধর্ষণের শিকার ৫০,৫৮৬ জন, গণধর্ষণ ৩,৬১১টি, ধর্ষণের কারণে মৃত্যু ৩২১ জন। ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার মামলা হয়েছে ৭৩,৬৫২টি। ধর্ষকরা ২০.২৩% মাদকাসক্ত এবং ২৭.৩৮% পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। ভুক্তভোগীর ৭২.৬১% শিশু বা শিক্ষার্থী।

ধর্ষণের পেছনে রয়েছে অপরাধপ্রবণ মানসিকতা, নিয়ন্ত্রণহীন যৌন চাহিদা, সাইকোলজি ও মানসিক অস্থিরতা, মাদকাসক্তি, ক্ষমতার অপব্যবহার, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাব।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “ধর্ষণ একটি সামাজিক সমস্যা। শুধু আইন বা শাস্তি নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং রাষ্ট্রকেও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”

ড. তৌহিদুল হক বলেন, “পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সবচেয়ে বেশি সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে, কারণ ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ণ সমাজের গভীর সমস্যার প্রতিফলন।”

এমআর/সবা