০২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আতঙ্কের নাম গ্যাস বিস্ফোরণ

  • চলতি বছর ৫৮০টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ
  • ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি
  • প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২২ জন

সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এটি যেন প্রতিদিনকার এক আতঙ্কের নাম। বাসাবাড়ি, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার দিন দিন যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও বাড়ছে। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে ঘটে এসব দুর্ঘটনা।
এদিকে, চলতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ১ হাজার ৬০০টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ৫৮০টি ঘটেছে এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে- এমন তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল। তিনি বলেন, এসব দুর্ঘটনায় বিভিন্ন স্থাপনায় ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে প্যানেল আলোচনায় তিনি এ তথ্য দেন।
ডিজি জাহেদ কামাল জানান, ‘ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এ সময় অনেক ফায়ার ফাইটার আহত হয়েছেন। আর সম্প্রতি কেমিক্যাল বিস্ফোরণে আমাদের তিনজন সহকর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন। এই ঘটনাগুলো আমাদের আরও সচেতন হওয়ার প্রেরণা দেয়। তিনি বলেন, ‘এলপিজি সেক্টর দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। যার সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই এখন থেকেই নিরাপত্তা ও সচেতনতা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।
ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক আরও জানান, অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘আমরা ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত বইয়ে অগ্নিনিরাপত্তা সম্পর্কিত পাঠ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি, ২০২৬ সালের বইয়ে এটি অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার বিকল্প নেই,’ বলেন তিনি। তিনি আরও যোগ করেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে দুর্ঘটনা কমেছে, এলপিজি খাতেও তেমন প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বর্তমানে দেশের ৫৩৭টি ফায়ার স্টেশনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ৯৯৭টি স্টেশনে উন্নীত করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে থাকা সেই গ্যাস থেকে আগুন ধরে যেতে পারে। অন্যদিকে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর উচিত বাজারে সরবরাহের আগে অবশ্যই সিলিন্ডারগুলো তদারকি করা। চলতিবছরে জানুয়ারি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫টিরও বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২২ জন, আহত হয়েছে প্রায় ৯৮ জনের অধিক। রান্নাঘর, দোকান কিংবা উৎসব যেখানেই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানেই যেন লুকিয়ে রয়েছে মৃত্যুর ফাঁদ। এই বিস্ফোরণ কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ, ভেঙে দিচ্ছে পরিবার, ধ্বংস করে দিচ্ছে ভবিষ্যৎ। গত ৬ মাসে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রশ্ন উঠছে এই প্রাণহানির দায় আসলে কার? গত ২ জুলাই রাতে ভাটারার পূর্ব নূরেরচলা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করতে গিয়ে হানিফের লুঙ্গিতে আগুন ধরে যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার বাবা হালিম শেখ, মা শিউলি বেগম (৪৫) এবং হালিমের বোন রহিমা বেগম (৫০) দগ্ধ হন। প্রথমে ৩ জুলাই সকালে মৃত্যু হয় হানিফ শেখ (২৪)। পরে ৬ জুলাই রাতে ছেলের পর মারা গেলেন তার বাবা মো. হালিম শেখ (৫০)। রান্নাঘরে ডিম ভাজতে গিয়ে হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগে যায় হানিফের তার লুঙ্গিতে। হানিফের চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা দৌড়ে এসে তাকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরাও দগ্ধ হন। পরে চার জনকেই উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ৯ জুন সোমবার সকালে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর চারিগ্রাম এলাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সুবর্ণা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সুবর্ণার শ্বশুর মো. হাসান দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে বেলুন ফুলিয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করতেন। সোমবার সকালে হঠাৎ সিলিন্ডারটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম জানান, প্রাথমিক তদন্তে যানতেপারি, পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ছয় মাসে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনাই যথেষ্ট ভয়াবহ। এর মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে। ২৫ এপ্রিল রাতে রান্নাঘরের গ্যাস লিক হয়ে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন একই পরিবারের ৯ জন। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে পাঁচজন মারা যায়। রাজধানীর ভাটারা ও হাজারীবাগেও আটজন দগ্ধ হয়। যার মধ্যে একজন গত শুক্রবার মারা যায়। দগ্ধদের মধ্যে শিশু, গৃহবধূ ও একই পরিবারের একাধিক প্রজন্ম ছিল। এ যেন এক রাতেই একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার গল্প। তার আগে, পূর্ব আফতাবনগরের এক পরিবারের চারজন ও পুরান ঢাকার বংশালে চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবে ছয়জন দগ্ধ এবং ফেব্রুয়ারিতে সাভারের আশুলিয়ার গুমাইল এলাকায় রান্নার সময় একটি পুরনো সিলিন্ডার ও অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের কারণে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন ১১ জন। স্থানীয়রা জানান, সেখানে কোনো প্রকার নিরাপত্তা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত সিলিন্ডার। এই ঘটনায় শিউলি, সুমন ও শারমিন নামে তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘২ শতাংশ এলপি গ্যাস ও ৫ শতাংশ লাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস বাতাসের সংস্পর্শে এলেই তা ভাসতে থাকে এবং একপর্যায়ে তা বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তাই মানসম্মত সিলিন্ডার ব্যবহারের বিকল্প নেই। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তদারকিও বাড়াতে হবে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর। গবেষণায় যা উঠে এসেছে: গবেষণায় দায়ী হিসেবে উঠে এসেছে, ব্যক্তি বা পরিবারের অসচেতনতা, লাইসেন্সধারী বিক্রেতাদের দায়িত্বহীনতা এবং রাষ্ট্রীয় তদারকির দুর্বলতা। গবেষকরা স্পষ্টভাবে বলছেন, এই ত্রিমাত্রিক অবহেলার কারণেই বারবার ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সামগ্রিক প্রতিকারে তারা কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। যেমন, বিএসটিআই কর্তৃক সিলিন্ডারের মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করা, এলপিজি নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় গাইডলাইন প্রণয়ন, বাজারে অনুমোদিত কোম্পানির তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ, স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস সেফটি হেল্পলাইন চালু এবং স্কুল-কলেজে নিরাপদ গ্যাস ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া। এই ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে যে বিষয়টি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে সামনে আসে, তা হলো দায়িত্বে অবহেলা, অসচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থাপনা। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি গবেষণা, যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণ, কাঠামোগত সমস্যা এবং সমাধানের পথ তুলে ধরা হয়েছে।
জার্নাল অফ লস প্রিভেনশন ইন দ্য প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ প্রকাশিত ফেইলিউর মেকানিজমস অব গ্যাস সিলিন্ডার এক্সপোজড টু ফায়ার শিরোনামের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কীভাবে গ্যাস সিলিন্ডার আগুনে পড়ে তাপ সঞ্চালনের ফলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়ে বিস্ফোরিত হয়। এখানে সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিম্নমানের ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সিলিন্ডার, যেগুলো তাপ সহ্য করতে পারে না এবং যেসব সিলিন্ডারে ওভারপ্রেশার রিলিফ ভাল্ব নেই। অন্যদিকে জার্নাল অফ বার্ন অ্যান্ড কেয়ার প্রকাশিত একটি গবেষণায় ডোমেস্টিক সিলিন্ডার ব্লাস্ট : অ্যা নেগলেক্ট টরপেডো শিরোনামে বলা হয়েছে, গৃহস্থালি পর্যায়ে ব্যবহারকারীদের গ্যাস সুরক্ষা বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। অনেকেই নিয়মিতভাবে রেগুলেটর পরিবর্তন করেন না, পাইপে ফাটল দেখলেও তা উপেক্ষা করেন। বাংলাদেশ জার্নাল থেকে পাওয়া রিস্ক পোটেনশিয়াল অব পাইপলাইন গ্যাস লিকস ইন ঢাকা সিটি গবেষণাটি পাইপলাইন গ্যাস নিয়ে হলেও গ্যাস বিস্ফোরণের ঝুঁকির জায়গা বোঝাতে সহায়ক। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকায় ১২ হাজার কিলোমিটার গ্যাস লাইন রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৬ শতাধিক স্থানে লিক রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন- বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান পরিদর্শক জানান, সাধারণত সিলিন্ডার নয়, বরং তার যন্ত্রাংশ যেমন রেগুলেটর, হোস পাইপ, ভাল্ব ইত্যাদি থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। অধিকাংশ যন্ত্রাংশই নিম্নমানের এবং মান নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাজারে পাওয়া যায়। এ ছাড়া সিলিন্ডার চুলার খুব কাছাকাছি রাখার প্রবণতা, ব্যবহার শেষে রেগুলেটর বন্ধ না করা এবং নিয়ম না মেনে রিফিল করা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ। সম্প্রতি প্রকাশিত তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের প্রতি সতর্কবার্তায় বলেন, চুলা জ্বালানোর অন্তত ২০ মিনিট আগে রান্নাঘরের জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে। গ্যাস লিকেজের আশঙ্কা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে রাইজারের চাবি বন্ধ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে। লিকেজ পরীক্ষায় মোমবাতি বা ম্যাচের কাঠি ব্যবহার করা বিপজ্জনক, যা একেবারেই নিষিদ্ধ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিস্ফোরণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিস্ফোরণের কারণে যাতে কেউ মারা না যায়, সেজন্য জনসাধারণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো এবং গণমাধ্যমে বার্তা প্রচারের দায়িত্ব সরকারের। যাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমাতুল্লাহ বলেন, গাড়িতে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে নির্দিষ্ট মেয়াদের তারিখ থাকে, যা সময় পার হলে ব্যবহার করা বিপজ্জনক। একইভাবে বাসাবাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারেও প্রেসার থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পর তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সিলিন্ডার পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও এখন পেট্রোবাংলা এই কাজ করছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

আতঙ্কের নাম গ্যাস বিস্ফোরণ

আপডেট সময় : ০৭:১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
  • চলতি বছর ৫৮০টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ
  • ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি
  • প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২২ জন

সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এটি যেন প্রতিদিনকার এক আতঙ্কের নাম। বাসাবাড়ি, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রান্নার কাজে সিলিন্ডারের গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার দিন দিন যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও বাড়ছে। পাশাপাশি ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকার সম্পদ। গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে ঘটে এসব দুর্ঘটনা।
এদিকে, চলতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ১ হাজার ৬০০টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ৫৮০টি ঘটেছে এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে- এমন তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল। তিনি বলেন, এসব দুর্ঘটনায় বিভিন্ন স্থাপনায় ২০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত ‘বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে প্যানেল আলোচনায় তিনি এ তথ্য দেন।
ডিজি জাহেদ কামাল জানান, ‘ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে এ সময় অনেক ফায়ার ফাইটার আহত হয়েছেন। আর সম্প্রতি কেমিক্যাল বিস্ফোরণে আমাদের তিনজন সহকর্মী শাহাদাতবরণ করেছেন। এই ঘটনাগুলো আমাদের আরও সচেতন হওয়ার প্রেরণা দেয়। তিনি বলেন, ‘এলপিজি সেক্টর দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। যার সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই এখন থেকেই নিরাপত্তা ও সচেতনতা জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি।
ফায়ার সার্ভিস মহাপরিচালক আরও জানান, অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘আমরা ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত বইয়ে অগ্নিনিরাপত্তা সম্পর্কিত পাঠ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি, ২০২৬ সালের বইয়ে এটি অন্তর্ভুক্ত হবে। কারণ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার বিকল্প নেই,’ বলেন তিনি। তিনি আরও যোগ করেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে দুর্ঘটনা কমেছে, এলপিজি খাতেও তেমন প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বর্তমানে দেশের ৫৩৭টি ফায়ার স্টেশনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ৯৯৭টি স্টেশনে উন্নীত করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। সেই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে থাকা সেই গ্যাস থেকে আগুন ধরে যেতে পারে। অন্যদিকে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর উচিত বাজারে সরবরাহের আগে অবশ্যই সিলিন্ডারগুলো তদারকি করা। চলতিবছরে জানুয়ারি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত সারা দেশে ৩৫টিরও বেশি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২২ জন, আহত হয়েছে প্রায় ৯৮ জনের অধিক। রান্নাঘর, দোকান কিংবা উৎসব যেখানেই গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে, সেখানেই যেন লুকিয়ে রয়েছে মৃত্যুর ফাঁদ। এই বিস্ফোরণ কেড়ে নিচ্ছে প্রাণ, ভেঙে দিচ্ছে পরিবার, ধ্বংস করে দিচ্ছে ভবিষ্যৎ। গত ৬ মাসে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম থেকে এ তথ্য জানা গেছে। প্রশ্ন উঠছে এই প্রাণহানির দায় আসলে কার? গত ২ জুলাই রাতে ভাটারার পূর্ব নূরেরচলা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডারে রান্না করতে গিয়ে হানিফের লুঙ্গিতে আগুন ধরে যায়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার বাবা হালিম শেখ, মা শিউলি বেগম (৪৫) এবং হালিমের বোন রহিমা বেগম (৫০) দগ্ধ হন। প্রথমে ৩ জুলাই সকালে মৃত্যু হয় হানিফ শেখ (২৪)। পরে ৬ জুলাই রাতে ছেলের পর মারা গেলেন তার বাবা মো. হালিম শেখ (৫০)। রান্নাঘরে ডিম ভাজতে গিয়ে হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগে যায় হানিফের তার লুঙ্গিতে। হানিফের চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা দৌড়ে এসে তাকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরাও দগ্ধ হন। পরে চার জনকেই উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ৯ জুন সোমবার সকালে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর চারিগ্রাম এলাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সুবর্ণা আক্তার নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সুবর্ণার শ্বশুর মো. হাসান দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে বেলুন ফুলিয়ে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করতেন। সোমবার সকালে হঠাৎ সিলিন্ডারটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম জানান, প্রাথমিক তদন্তে যানতেপারি, পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারের কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ছয় মাসে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনাই যথেষ্ট ভয়াবহ। এর মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে। ২৫ এপ্রিল রাতে রান্নাঘরের গ্যাস লিক হয়ে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন একই পরিবারের ৯ জন। পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে পাঁচজন মারা যায়। রাজধানীর ভাটারা ও হাজারীবাগেও আটজন দগ্ধ হয়। যার মধ্যে একজন গত শুক্রবার মারা যায়। দগ্ধদের মধ্যে শিশু, গৃহবধূ ও একই পরিবারের একাধিক প্রজন্ম ছিল। এ যেন এক রাতেই একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার গল্প। তার আগে, পূর্ব আফতাবনগরের এক পরিবারের চারজন ও পুরান ঢাকার বংশালে চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবে ছয়জন দগ্ধ এবং ফেব্রুয়ারিতে সাভারের আশুলিয়ার গুমাইল এলাকায় রান্নার সময় একটি পুরনো সিলিন্ডার ও অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের কারণে বিস্ফোরণে দগ্ধ হন ১১ জন। স্থানীয়রা জানান, সেখানে কোনো প্রকার নিরাপত্তা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হচ্ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত সিলিন্ডার। এই ঘটনায় শিউলি, সুমন ও শারমিন নামে তিনজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ও জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘২ শতাংশ এলপি গ্যাস ও ৫ শতাংশ লাইনের প্রাকৃতিক গ্যাস বাতাসের সংস্পর্শে এলেই তা ভাসতে থাকে এবং একপর্যায়ে তা বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে। তাই মানসম্মত সিলিন্ডার ব্যবহারের বিকল্প নেই। পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তদারকিও বাড়াতে হবে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর। গবেষণায় যা উঠে এসেছে: গবেষণায় দায়ী হিসেবে উঠে এসেছে, ব্যক্তি বা পরিবারের অসচেতনতা, লাইসেন্সধারী বিক্রেতাদের দায়িত্বহীনতা এবং রাষ্ট্রীয় তদারকির দুর্বলতা। গবেষকরা স্পষ্টভাবে বলছেন, এই ত্রিমাত্রিক অবহেলার কারণেই বারবার ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সামগ্রিক প্রতিকারে তারা কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। যেমন, বিএসটিআই কর্তৃক সিলিন্ডারের মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়াকে আরও কঠোর করা, এলপিজি নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় গাইডলাইন প্রণয়ন, বাজারে অনুমোদিত কোম্পানির তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ, স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস সেফটি হেল্পলাইন চালু এবং স্কুল-কলেজে নিরাপদ গ্যাস ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া। এই ঘটনাগুলোর দিকে তাকালে যে বিষয়টি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে সামনে আসে, তা হলো দায়িত্বে অবহেলা, অসচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থাপনা। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা পর্যালোচনা করেছি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি গবেষণা, যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণ, কাঠামোগত সমস্যা এবং সমাধানের পথ তুলে ধরা হয়েছে।
জার্নাল অফ লস প্রিভেনশন ইন দ্য প্রসেস ইন্ডাস্ট্রিজ প্রকাশিত ফেইলিউর মেকানিজমস অব গ্যাস সিলিন্ডার এক্সপোজড টু ফায়ার শিরোনামের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কীভাবে গ্যাস সিলিন্ডার আগুনে পড়ে তাপ সঞ্চালনের ফলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়ে বিস্ফোরিত হয়। এখানে সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিম্নমানের ইস্পাত বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি সিলিন্ডার, যেগুলো তাপ সহ্য করতে পারে না এবং যেসব সিলিন্ডারে ওভারপ্রেশার রিলিফ ভাল্ব নেই। অন্যদিকে জার্নাল অফ বার্ন অ্যান্ড কেয়ার প্রকাশিত একটি গবেষণায় ডোমেস্টিক সিলিন্ডার ব্লাস্ট : অ্যা নেগলেক্ট টরপেডো শিরোনামে বলা হয়েছে, গৃহস্থালি পর্যায়ে ব্যবহারকারীদের গ্যাস সুরক্ষা বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। অনেকেই নিয়মিতভাবে রেগুলেটর পরিবর্তন করেন না, পাইপে ফাটল দেখলেও তা উপেক্ষা করেন। বাংলাদেশ জার্নাল থেকে পাওয়া রিস্ক পোটেনশিয়াল অব পাইপলাইন গ্যাস লিকস ইন ঢাকা সিটি গবেষণাটি পাইপলাইন গ্যাস নিয়ে হলেও গ্যাস বিস্ফোরণের ঝুঁকির জায়গা বোঝাতে সহায়ক। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকায় ১২ হাজার কিলোমিটার গ্যাস লাইন রয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৬ শতাধিক স্থানে লিক রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন- বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান পরিদর্শক জানান, সাধারণত সিলিন্ডার নয়, বরং তার যন্ত্রাংশ যেমন রেগুলেটর, হোস পাইপ, ভাল্ব ইত্যাদি থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। অধিকাংশ যন্ত্রাংশই নিম্নমানের এবং মান নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাজারে পাওয়া যায়। এ ছাড়া সিলিন্ডার চুলার খুব কাছাকাছি রাখার প্রবণতা, ব্যবহার শেষে রেগুলেটর বন্ধ না করা এবং নিয়ম না মেনে রিফিল করা বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ। সম্প্রতি প্রকাশিত তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের প্রতি সতর্কবার্তায় বলেন, চুলা জ্বালানোর অন্তত ২০ মিনিট আগে রান্নাঘরের জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে। গ্যাস লিকেজের আশঙ্কা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে রাইজারের চাবি বন্ধ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে। লিকেজ পরীক্ষায় মোমবাতি বা ম্যাচের কাঠি ব্যবহার করা বিপজ্জনক, যা একেবারেই নিষিদ্ধ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, বিস্ফোরণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিস্ফোরণের কারণে যাতে কেউ মারা না যায়, সেজন্য জনসাধারণকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো এবং গণমাধ্যমে বার্তা প্রচারের দায়িত্ব সরকারের। যাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। একই সঙ্গে নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমাতুল্লাহ বলেন, গাড়িতে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে নির্দিষ্ট মেয়াদের তারিখ থাকে, যা সময় পার হলে ব্যবহার করা বিপজ্জনক। একইভাবে বাসাবাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারেও প্রেসার থাকে এবং নির্দিষ্ট সময় পর তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সিলিন্ডার পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও এখন পেট্রোবাংলা এই কাজ করছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।