০৯:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

লন্ডনে ভীড় বিএনপি নেতাদের

  • লবিং-তদবিরের অংশ হিসেবে লন্ডন সফর করেছেন নেতারা
  • বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক বিএন বিএনপির
  • মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তারেক রহমান

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। সেই সাথে সমানতালে চলছে প্রচারনাও। গত কয়েক মাসে মনোনয়ন লবিং-তদবিরের অংশ হিসেবে বিএনপির দলীয় এবং যুগপৎ আন্দোলনের নেতারা তারেক রহমানের সাক্ষাৎ লাভের জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডন সফর করেছেন। তবে বেশির ভাগই সাক্ষাৎ পাননি। দলীয় নেতা থেকে শুরু করে সমমনা দল ও জোটের নেতা, বুদ্ধিজীবী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতাও ভিড় করছেন সেখানে। দলের হাইকমান্ড তথা প্রিয় নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তত কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও সাক্ষাতের একটা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। তবে অনেককে বিফল মনোরথে লন্ডন থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। তবে অনেক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত যেসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন তাঁরা উৎফুল্ল মনে ঢাকায় ফিরছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করছেন কেউ কেউ।
এদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে চলেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ২০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি ১০০ আসনের মধ্যে অর্ধশত আসন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে। বাকি ৫০টি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় যাচাইবাছাই চলছে। এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রতিদিন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক করে চলেছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে অনেকে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন। অনেকে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ লাভের জন্য লন্ডন যাচ্ছেন। তবে তিনি কাউকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। তারেক রহমান নিজেই ফোন করে প্রার্থী মনোনয়নের সংকেত দিচ্ছেন। এ অবস্থায় যাঁরা এখনো সবুজসংকেত পাননি তাঁরা তারেক রহমানের ফোনের অপেক্ষায় রয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মাঠে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের ফোন করে নির্বাচনি প্রস্তুতির নির্দেশ দিচ্ছেন। দলটির গুলশান কার্যালয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক। সেসব বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন তারেক রহমান। জেলাভিত্তিক এই বৈঠকগুলোর ফলাফল অনুযায়ী এখন একেকটি আসনে একজন করে প্রার্থীকে বাছাই করা হচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার ও দলীয় মূল্যায়নের পর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ ৩০০ আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে জোটগত সমঝোতার কারণে অন্তত ৫০টি আসনে পরিবর্তন আনা হতে পারে। মাঠ থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরি করছেন তারেক রহমান। চলতি মাসের মধ্যে ২০০ প্রার্থীকেই মৌখিকভাবে সবুজসংকেত দেওয়া হবে। মিত্র বা সমমনা রাজনৈতিক দল এবং নিজের দলের জটিল কিছু আসনের প্রার্থিতা নিষ্পত্তির জন্য ১০০ আসন বাদ রেখে সবুজসংকেত প্রদানের জন্য এই তালিকা করছেন। সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনের মধ্যে কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-৪ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবীন, ঢাকা-৫ আসনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা-৫ আসনের প্রধান সমন্বয়ক নবীউল্লাহ নবী, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১৩ আসনে সমমনা দল এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা-১৭ আসনে সমমনা দল বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে চূড়ান্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া-১ আসনে কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৩ জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার, বগুড়া-৪ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন এবং বগুড়া-৫ আসনে সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লা-১ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-১ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নরসিংদী-২ ড. আবদুল মঈন খান, সিরাজগঞ্জ-২ ইকবাল হাসান মাহমুদ, কক্সবাজার-১ সালাহউদ্দিন আহমদ, ভোলা-৩ মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, নোয়াখালী-৩ বরকতউল্লা বুলু, নোয়াখালী-৪ মো. শাহজাহান, লক্ষ্মীপুর-৩ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, লালমনিরহাট-৩ আসাদুল হাবিব দুলু, জামালপুর-১ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, খুলনা-৩ রকিবুল ইসলাম বকুল, নেত্রকোনা-১ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, চুয়াডাঙ্গা-২ মাহমুদ হাসান খান, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, সিরাজগঞ্জ-৫ আমিরুল ইসলাম খান, নেত্রকোনা-৪ লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেকেই পার্টির পক্ষ থেকে সবুজসংকেত পেয়ে নির্বাচনি মাঠে কাজ করে চলেছেন। জানতে চাইলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘নড়াইল-২ আসনে ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন এই আসন থেকে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করার কথাও জানিয়েছেন।’ ড. ফরহাদ বলেন, ‘এজন্য পুরোদমে নির্বাচনি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি।’ আরেক শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জানান, তিনি শতভাগ আশাবাদী ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি তাকে মূল্যায়ন করবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে বিএনপি। দলটি এবার মাঠের পাশাপাশি ডিজিটাল দুনিয়াতেও সমানভাবে সক্রিয় হতে চায়। সে লক্ষ্যেই গঠন করা হচ্ছে নতুন একটি অনলাইন ও তৃণমূলভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ গ্রাসরুটস নেটওয়ার্ক-বিজিএন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিএনপি তাদের তৃণমূলের শক্তিকে সুসংগঠিত করবে এবং অনলাইন প্রচারকে আরও জোরদার করবে। একই সঙ্গে অপপ্রচার মোকাবিলায় কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বিজিএন গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর অনুমোদিত হয়েছে। দলটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতা ২০টি আসনের সমন্বয় করবেন। বিজিএন-এর অধীনে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে দুজন করে ৬০০ জন স্নাতক পাস অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এই অ্যাক্টিভিস্টরা সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করবেন এবং নিয়মিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। বিজিএন স্থায়ী কমিটিতে নিয়মিত রিপোর্ট জমা দেবে, যা দলের নীতিনির্ধারণী আলোচনায় ব্যবহৃত হবে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য অ্যাক্টিভিস্টদের সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী জমা পড়েছে এবং সেখান থেকে যাচাইবাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে বিভাগভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। বিকেল ৪টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বৈঠক ঘিরে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পক্ষে নেতাকর্মীরা গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন। এতে ওই এলাকার সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ও জনভোগান্তি তৈরি হতে দেখা গেছে। বৈঠকে রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন—মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন, সদস্য রাজশাহী জেলা বিএনপি; অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, সদস্য গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপি; ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম; মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা; অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা, সাবেক আহ্বায়ক রাজশাহী মহানগর বিএনপি; সৈয়দ শাহীন শওকত, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজশাহী বিভাগ; অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী মহানগর বিএনপি; অধ্যাপক কামাল হোসেন, সদস্যসচিব বাগমারা উপজেলা বিএনপি এবং আবু সাঈদ চাঁদ, আহ্বায়ক রাজশাহী জেলা বিএনপি। এছাড়া নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন। বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন-জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), রওনাকুল ইসলাম টিপু (বরিশাল-২), রাজীব আহসান (বরিশাল-৪), নজরুল ইসলাম খান (পিরোজপুর-১), গোলাম নবী আলমগীর (ভোলা-১), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী-১), নুরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-২) এবং নাজিম উদ্দীন আলম (ভোলা-১)। এছাড়া পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ঈদগাঁওয়ে ৪৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম শুরু

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

লন্ডনে ভীড় বিএনপি নেতাদের

আপডেট সময় : ০৭:২০:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • লবিং-তদবিরের অংশ হিসেবে লন্ডন সফর করেছেন নেতারা
  • বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক বিএন বিএনপির
  • মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তারেক রহমান

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। সেই সাথে সমানতালে চলছে প্রচারনাও। গত কয়েক মাসে মনোনয়ন লবিং-তদবিরের অংশ হিসেবে বিএনপির দলীয় এবং যুগপৎ আন্দোলনের নেতারা তারেক রহমানের সাক্ষাৎ লাভের জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডন সফর করেছেন। তবে বেশির ভাগই সাক্ষাৎ পাননি। দলীয় নেতা থেকে শুরু করে সমমনা দল ও জোটের নেতা, বুদ্ধিজীবী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতাও ভিড় করছেন সেখানে। দলের হাইকমান্ড তথা প্রিয় নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তত কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও সাক্ষাতের একটা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। তবে অনেককে বিফল মনোরথে লন্ডন থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। তবে অনেক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত যেসব সৌভাগ্যবান ব্যক্তি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন তাঁরা উৎফুল্ল মনে ঢাকায় ফিরছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্টও করছেন কেউ কেউ।
এদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে চলেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে ২০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকি ১০০ আসনের মধ্যে অর্ধশত আসন যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের ছাড় দেওয়া হবে। বাকি ৫০টি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় যাচাইবাছাই চলছে। এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে প্রতিদিন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠক করে চলেছেন।
মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে অনেকে তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন। অনেকে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ লাভের জন্য লন্ডন যাচ্ছেন। তবে তিনি কাউকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না। তারেক রহমান নিজেই ফোন করে প্রার্থী মনোনয়নের সংকেত দিচ্ছেন। এ অবস্থায় যাঁরা এখনো সবুজসংকেত পাননি তাঁরা তারেক রহমানের ফোনের অপেক্ষায় রয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই মাঠে সক্রিয় হচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দুই শতাধিক আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের ফোন করে নির্বাচনি প্রস্তুতির নির্দেশ দিচ্ছেন। দলটির গুলশান কার্যালয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক। সেসব বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন তারেক রহমান। জেলাভিত্তিক এই বৈঠকগুলোর ফলাফল অনুযায়ী এখন একেকটি আসনে একজন করে প্রার্থীকে বাছাই করা হচ্ছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার ও দলীয় মূল্যায়নের পর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ ৩০০ আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে জোটগত সমঝোতার কারণে অন্তত ৫০টি আসনে পরিবর্তন আনা হতে পারে। মাঠ থেকে শুরু করে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরি করছেন তারেক রহমান। চলতি মাসের মধ্যে ২০০ প্রার্থীকেই মৌখিকভাবে সবুজসংকেত দেওয়া হবে। মিত্র বা সমমনা রাজনৈতিক দল এবং নিজের দলের জটিল কিছু আসনের প্রার্থিতা নিষ্পত্তির জন্য ১০০ আসন বাদ রেখে সবুজসংকেত প্রদানের জন্য এই তালিকা করছেন। সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরের ১৫টি আসনের মধ্যে কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-৪ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবীন, ঢাকা-৫ আসনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা-৫ আসনের প্রধান সমন্বয়ক নবীউল্লাহ নবী, ঢাকা-৮ আসনে মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১৩ আসনে সমমনা দল এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৬ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, ঢাকা-১৭ আসনে সমমনা দল বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে চূড়ান্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া-১ আসনে কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-৩ জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদার, বগুড়া-৪ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন এবং বগুড়া-৫ আসনে সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। সূত্র জানিয়েছে, কুমিল্লা-১ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-১ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নরসিংদী-২ ড. আবদুল মঈন খান, সিরাজগঞ্জ-২ ইকবাল হাসান মাহমুদ, কক্সবাজার-১ সালাহউদ্দিন আহমদ, ভোলা-৩ মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, নোয়াখালী-৩ বরকতউল্লা বুলু, নোয়াখালী-৪ মো. শাহজাহান, লক্ষ্মীপুর-৩ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, লালমনিরহাট-৩ আসাদুল হাবিব দুলু, জামালপুর-১ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, খুলনা-৩ রকিবুল ইসলাম বকুল, নেত্রকোনা-১ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, চুয়াডাঙ্গা-২ মাহমুদ হাসান খান, গাজীপুর-৫ ফজলুল হক মিলন, সিরাজগঞ্জ-৫ আমিরুল ইসলাম খান, নেত্রকোনা-৪ লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেকেই পার্টির পক্ষ থেকে সবুজসংকেত পেয়ে নির্বাচনি মাঠে কাজ করে চলেছেন। জানতে চাইলে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘নড়াইল-২ আসনে ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলাম। এবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়েছেন এই আসন থেকে আমাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে কাজ করার কথাও জানিয়েছেন।’ ড. ফরহাদ বলেন, ‘এজন্য পুরোদমে নির্বাচনি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি।’ আরেক শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জানান, তিনি শতভাগ আশাবাদী ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি তাকে মূল্যায়ন করবে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে বিএনপি। দলটি এবার মাঠের পাশাপাশি ডিজিটাল দুনিয়াতেও সমানভাবে সক্রিয় হতে চায়। সে লক্ষ্যেই গঠন করা হচ্ছে নতুন একটি অনলাইন ও তৃণমূলভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ গ্রাসরুটস নেটওয়ার্ক-বিজিএন। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিএনপি তাদের তৃণমূলের শক্তিকে সুসংগঠিত করবে এবং অনলাইন প্রচারকে আরও জোরদার করবে। একই সঙ্গে অপপ্রচার মোকাবিলায় কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এর অন্যতম উদ্দেশ্য। বিজিএন গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর অনুমোদিত হয়েছে। দলটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। প্রত্যেক কেন্দ্রীয় নেতা ২০টি আসনের সমন্বয় করবেন। বিজিএন-এর অধীনে দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে দুজন করে ৬০০ জন স্নাতক পাস অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এই অ্যাক্টিভিস্টরা সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করবেন এবং নিয়মিত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। বিজিএন স্থায়ী কমিটিতে নিয়মিত রিপোর্ট জমা দেবে, যা দলের নীতিনির্ধারণী আলোচনায় ব্যবহৃত হবে। এরই মধ্যে সম্ভাব্য অ্যাক্টিভিস্টদের সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী জমা পড়েছে এবং সেখান থেকে যাচাইবাছাইয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে বিভাগভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করে দলটি। বিকেল ৪টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়েছে। এতে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, বৈঠক ঘিরে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পক্ষে নেতাকর্মীরা গুলশান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছেন। এতে ওই এলাকার সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ও জনভোগান্তি তৈরি হতে দেখা গেছে। বৈঠকে রাজশাহী বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন—মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন, সদস্য রাজশাহী জেলা বিএনপি; অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, সদস্য গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপি; ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম; মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা; অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা, সাবেক আহ্বায়ক রাজশাহী মহানগর বিএনপি; সৈয়দ শাহীন শওকত, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজশাহী বিভাগ; অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী মহানগর বিএনপি; অধ্যাপক কামাল হোসেন, সদস্যসচিব বাগমারা উপজেলা বিএনপি এবং আবু সাঈদ চাঁদ, আহ্বায়ক রাজশাহী জেলা বিএনপি। এছাড়া নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন। বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন-জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), রওনাকুল ইসলাম টিপু (বরিশাল-২), রাজীব আহসান (বরিশাল-৪), নজরুল ইসলাম খান (পিরোজপুর-১), গোলাম নবী আলমগীর (ভোলা-১), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী-১), নুরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-২) এবং নাজিম উদ্দীন আলম (ভোলা-১)। এছাড়া পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।