- তালা কাটার সরঞ্জাম জব্দ, আলামত সংগ্রহ সিআইডি’র
- তদন্তে নেমেছে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা
এবার হযরত শাহজালাল (রাঃ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হাউসের স্ট্রং ভল্টের তালা ভেঙে চারটি রিভলভার চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আগের আর বর্তমান ইনভেন্টরি মিলিয়ে চারটি রিভালবার কম পাওয়া গেছে। আর এই অস্ত্রগুলো সরকারের কোনো বাহিনীর ব্যবহারের জন্য আমদানি করা হয়েছিল। কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টীত কার্গো ভিলেজে চুরির এ ঘটনা ৫ দিন আগে ঘটলেও থানায় জিডি ও তদন্তকালে ঘটনা জানাজানি হয়। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিমানবন্দর থানাসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৮ অক্টোবর ভল্টের তালা ভেঙ্গে এই চারটি রিভলভার চুরির এ ঘটনা ঘটে। ওই দিনই বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। জিডিটি দায়ের করেন সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জামাল হোসেন। তবে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে গত ২ নভেম্বর। মামলার পর ঘটনাস্থল থেকে তালা কাটার সরঞ্জাম উদ্ধার এবং আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক দল।
জিডিতে মো. জামাল হোসেন উল্লেখ করেন, বিমানবন্দরের কার্গো আমদানি কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমের মালামাল ২৪ অক্টোবর বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার নেয়ামূল, বিমানের জিএম কার্গো নজমুল হুদা, এনএসআইর অতিরিক্ত পরিচালক ফিরোজ রব্বানীসহ অনেকের উপস্থিতিতে ইনভেন্ট্রি শেষ করা হয়। এরপর সব মালামাল ভল্টে রেখে সবার উপস্থিতিতে বিমান সিকিউরিটির প্রতিনিধির স্বাক্ষরসহ শিকল দিয়ে তালা লাগিয়ে ভল্ট সিলগালা করা হয়। গত ২৭ অক্টোবর রাত ৯টা ৫০ মিনিটে পুলিশ সদস্য, আনসারসহ সর্বশেষ সিলগালা দেখে এসেছিলেন তিনি। পরের দিন সকাল ৭টা ৭ মিনিটের দিকে বিমান নিরাপত্তা শাখার ডিউটি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম খানের মাধ্যমে জানতে পারেন, স্ট্রং রুমের ভল্টের তালা লাগানো নেই। বিষয়টি ডিজিএম সিকিউরিটিকে জানিয়ে বিমানবন্দরে আসেন তিনি। ডিজিএম সিকিউরিটিও বিমানবন্দরে আসেন। বিমান নিরাপত্তা ডিউটি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম খান ও ডিজিএম সিকিউরিটি উভয়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যসহ স্ট্রং রুমের ভল্টের কাছে গিয়ে দেখতে পান কোনও তালা লাগানো নেই।
কার্গো ভিলেজ সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৪ অক্টোবর ভল্টের ইনভেন্ট্রিতে ১৮টি ইনট্যাক রিভলভার ও তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত রিভলভার ছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবর যখন ওই ভল্টের তালা ভাঙা দেখতে পাওয়া যায়, তখন বিমানসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন সেখানে জানান। সেখানে আগের ইনভেন্ট্রিতে ১৮টি ইনট্যাক পিস্তলের মধ্যে চারটি পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ১৪টি রয়েছে। আর নষ্ট হওয়া তিনটি ঠিকই ছিল।
বিমানবন্দর সূত্র জানা যায়, কার্গো আমদানি কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমের ভল্টে সাধারণত মূল্যবান জিনিসপত্র এবং জরুরি কাগজপত্র রাখা হয়। আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় নথি, শুল্কসংক্রান্ত কাগজপত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক দলিলপত্র রাখা হয়। এছাড়া বেশি মূল্যবান কিছু আমদানি করা পণ্য সাময়িকভাবে ভল্টে রাখা হয়। সাধারণত স্বর্ণ, হীরা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ উচ্চমূল্যের ও সহজে বহনযোগ্য পণ্য নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়ে থাকে। সেখান থেকে পণ্য বের করতে হলে কয়েকজনের স্বাক্ষর লাগে। কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে বলেই স্ট্রং রুম বলা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ১৮ অক্টোবর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজটি কড়া নিরাপত্তায় রয়েছে। স্পর্শকাতর স্থানে সাধারণ মানুষের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন নিরাপত্তার মধ্যেই সুরক্ষিত স্ট্রং ভল্টের তালা কেটে লুটপাট করা হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবে একটি শক্তিশালী চক্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) কার্গো নাজমুল হুদা বলেন, আমি ওখানে ছিলাম না। এ বিষয়ে এখন কিছুই বলতে পারবো না।
এদিকে জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এসএম মাইনুল ইসলাম বলেন, আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। কার্গো হাউসের আশপাশের সিসি ক্যামেরা পুড়ে গেছে। ফলে সিসি ক্যামেরা থেকে তেমন কোনও তথ্য পাইনি। আমরা সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তদন্তের পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাসলিমা আক্তার বলেন, কার্গো হাউসের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। আমরা শুধু গেটের দায়িত্ব পালন করি। মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করেছে। আমরাও তদন্ত করছি। এছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সেখান থেকে তালা কাটার সরঞ্জাম ও বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক দল।
























