০৬:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনী বিধান বদল আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি

প্রতীকি ছবি।

  • জোটের প্রার্থীর ভোট দলীয় প্রতীকে
  • ভোটারপ্রতি ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থী
  • মিথ্যা তথ্য দিলে এমপি পদ বাতিল, থাকছে ‘না’ ভোট
  • নির্বাচনে ভুয়া খবর ছড়ালে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা
  • নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির কেউ

 

জোট মনোনীত প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান রেখে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের গেজেট জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি ও গেজেট প্রকাশ হয়। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো রাজনৈতিক জোটের মনোনীত প্রার্থী হলেও তাকে নিজ দলের নির্বাচনী প্রতীকেই ভোটে অংশ নিতে হবে। অর্থাৎ, জোটগত প্রার্থীরাও আর অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। এছাড়া, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংংশোধন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পযবেক্ষণ নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি সংস্কার করেছে ইসি। নতুন সংশোধনীতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের পর বছরের যে কোনো সময় ভোটার তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা পেল ইসি।
গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর জোটের প্রতীকের সংশ্লিষ্ট ২০ অনুচ্ছেদে সংশোধন নিয়ে বিএনপি আপত্তি তুললেও জামায়াত ও এনসিপি সংশোধন বহাল রাখার দাবি তোলে। অবশেষে জোট করলেও ভোট করতে হবে স্ব স্ব দলের প্রতীকে-এমন বিধান রেখেই অধ্যাদেশ জারি হলো। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একগুচ্ছ সংশোধন আনা হয়েছে আরপিওতে। আরপিও সংশোধন হওয়ায় এর আলোকে দ্রুত দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা জারি করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করল সরকার। এতে জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট, ফেরারি আসামি ভোটে অযোগ্য, মিথ্যা তথ্য দিলে এমপি পদ বাতিল এমন এক গুচ্ছ নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। থাকছে ‘না’ ভোটও। সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অনুচ্ছেদ-২ সংশোধন করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী রাখা হয়েছে। এতে সেনা মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনকে আর আগের মতো বেগ পেতে হবে না। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। অনুচ্ছেদ-৮ সংশোধন করে ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন অফিসারের হাতে রাখা হয়েছে। আগে এ ক্ষমতা ডিসির হাতে ছিল। অনুচ্ছেদ ৯-এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বরখাস্ত করতে পারবেন, তবে ইসিকে অবহিত করতে হবে। অনুচ্ছেদ ১২-তে বলা হয়েছে, কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি ঘোষিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবে। তিনি আর প্রার্থী হতে পারবেন না। অনুচ্ছেদ-১৯-এর সংশোধনীতে ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকে, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। না ভোট বেশি পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। ফের একক প্রার্থী থাকলে তিনি নির্বাচিত হবেন। অনুচ্ছেদ- ২০ এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। অনুচ্ছেদ ২৬ এর সংশোধনীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ-২৭-এ আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং যোগ করা হয়েছে। প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী ও দেশের ভেতরে কয়েদিরা এ সুযোগ পাবেন। অনুচ্ছেদ ৩৬ এ বলা হয়েছে, ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। এছাড়াও সমভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনভোট হবে। প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ভোটার প্রতি ১০ টাকা, দলের ব্যয় দেখানো, অনুদানের অর্থের হিসাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ, উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক পর্যন্ত বদলিতে ইসির অনুমোদনের বিধান আনা হয়েছে। আবার মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব ও এআই অপব্যবহার রোধে প্রার্থী ও দলের বিষয়ে অপরাধ বিবেচনা শাস্তির বিধান আনা হয়েছে। এদিকে নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিত, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলে ইসির হাতে ক্ষমতা, আচরণ বিধি প্রতিপালনে ইসি কর্মকর্তাদেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান আনা হয়েছে। সরকার নতুন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন (আরপিও) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে। যা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও নির্বাচনি বিধানগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী যদি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকে, তবে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া, আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিদেরও ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে না। নতুন বিধান অনুযায়ী- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট ফের চালু হচ্ছে এবং সমভোটের ক্ষেত্রে পুনভোট হবে। জোটে ভোট প্রদান করলে নিজ দলের মার্কায় ভোট গণনা হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামানত নির্ধারিত হয়েছে ৫০ হাজার টাকা এবং দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা করা যেতে পারে। এ ছাড়া, আইটি সাপোর্টে পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। নির্বাচনি অনিয়ম ধরা পড়লে পুরো আসনের ভোট বাতিল করা যেতে পারে। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় এআই অপব্যবহার বা হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতির দায়িত্ব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের হাতে রাখা হয়েছে এবং তাদের তৈরি তালিকা কমিশনের অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে। রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। একজন এমপি প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ভোটার প্রতি ১০ টাকা হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বেশি খরচ করলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন- আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে সরকার। অনুদান হিসেবে প্রাপ্ত অর্থের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা যোগ করা হয়েছে, যা প্রার্থীরা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন। চূড়ান্ত আরপিও-র অনুচ্ছেদ ৪৪-এ নতুন সংযোজন অনুসারে, প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় ভোটার প্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও অনুচ্ছেদ ১৩-এ প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা জামানত, যা আগে ২০ হাজার টাকা ছিল। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় সমতা নিশ্চিত করা হবে বলে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ডিজিটাল যুগে নির্বাচনের সময়ে ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। এ ধরনের কর্মকাণ্ড রোধে সম্প্রতি জারি করা ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (আরপিও)–এ নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আরপিওতে ৭৩(ক) ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালে (মনোনয়ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের আগ পর্যন্ত) কেউ যদি জেনে-বুঝে কোনো প্রার্থী, রাজনৈতিক দল বা নির্বাচন কমিশনের সুনাম ক্ষুণ্ণ করা, ফলাফল প্রভাবিত করা বা নির্বাচনি পরিবেশ ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য, ছবি, ভিডিও, অডিও বা অন্য কোনো কনটেন্ট তৈরি, প্রকাশ, বিতরণ বা প্রচার করে—তবে তা দুর্নীতিপূর্ণ আচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের শাস্তি আরপিও ১৯৭২-এর ৭৩ ধারা অনুযায়ী সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন ধারায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সরঞ্জাম, স্বয়ংক্রিয় বট, ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা সিনথেটিক মিডিয়ার মাধ্যমে তৈরি বিভ্রান্তিকর কনটেন্টকেও অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য কেবল ব্যক্তি প্রার্থীকে লক্ষ্য করেই নয়, বরং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বা জনমত প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হলেও তা শাস্তিযোগ্য হবে। এছাড়া ভুয়া তথ্য সৃষ্টিকারীর পাশাপাশি তা প্রচার বা বিস্তারে জড়িত রাজনৈতিক দল, প্রচার সংগঠন বা গণমাধ্যমকেও যৌথভাবে দায়ী করা হবে। অর্থাৎ, বিভ্রান্তিকর তথ্যের উৎস ও প্রচারক-উভয়কেই আইনের আওতায় আনা হবে। ভুয়া খবরকে নির্বাচনে ‘দুর্নীতিপূর্ণ কাজের’ আওতায় আনা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় এর গুরুতর প্রভাব ও গণতন্ত্রের প্রতি হুমকির বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

নির্বাচনী বিধান বদল আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি

আপডেট সময় : ০৭:০৭:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • জোটের প্রার্থীর ভোট দলীয় প্রতীকে
  • ভোটারপ্রতি ১০ টাকা ব্যয় করতে পারবেন প্রার্থী
  • মিথ্যা তথ্য দিলে এমপি পদ বাতিল, থাকছে ‘না’ ভোট
  • নির্বাচনে ভুয়া খবর ছড়ালে সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা
  • নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির কেউ

 

জোট মনোনীত প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান রেখে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের গেজেট জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি ও গেজেট প্রকাশ হয়। নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো রাজনৈতিক জোটের মনোনীত প্রার্থী হলেও তাকে নিজ দলের নির্বাচনী প্রতীকেই ভোটে অংশ নিতে হবে। অর্থাৎ, জোটগত প্রার্থীরাও আর অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন না। এছাড়া, ভোটার তালিকা আইন সংশোধন, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ বিধান আইন সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংংশোধন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, দেশি-বিদেশি পযবেক্ষণ নীতিমালা, সাংবাদিক নীতিমালাসহ সব ধরনের আইন-বিধি সংস্কার করেছে ইসি। নতুন সংশোধনীতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের পর বছরের যে কোনো সময় ভোটার তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা পেল ইসি।
গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর জোটের প্রতীকের সংশ্লিষ্ট ২০ অনুচ্ছেদে সংশোধন নিয়ে বিএনপি আপত্তি তুললেও জামায়াত ও এনসিপি সংশোধন বহাল রাখার দাবি তোলে। অবশেষে জোট করলেও ভোট করতে হবে স্ব স্ব দলের প্রতীকে-এমন বিধান রেখেই অধ্যাদেশ জারি হলো। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একগুচ্ছ সংশোধন আনা হয়েছে আরপিওতে। আরপিও সংশোধন হওয়ায় এর আলোকে দ্রুত দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা জারি করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের (আরপিও) অধ্যাদেশ জারি করল সরকার। এতে জোট করলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট, ফেরারি আসামি ভোটে অযোগ্য, মিথ্যা তথ্য দিলে এমপি পদ বাতিল এমন এক গুচ্ছ নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। থাকছে ‘না’ ভোটও। সোমবার (৩ নভেম্বর) রাতে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অনুচ্ছেদ-২ সংশোধন করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনী রাখা হয়েছে। এতে সেনা মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনকে আর আগের মতো বেগ পেতে হবে না। ২০০১ ও ২০০৮ সালের ভোটে এমন বিধান ছিল। অনুচ্ছেদ-৮ সংশোধন করে ভোটকেন্দ্র (পোলিং স্টেশন) প্রস্তুতের ক্ষেত্রে জেলা নির্বাচন অফিসারের হাতে রাখা হয়েছে। আগে এ ক্ষমতা ডিসির হাতে ছিল। অনুচ্ছেদ ৯-এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বরখাস্ত করতে পারবেন, তবে ইসিকে অবহিত করতে হবে। অনুচ্ছেদ ১২-তে বলা হয়েছে, কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি ঘোষিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবে। তিনি আর প্রার্থী হতে পারবেন না। অনুচ্ছেদ-১৯-এর সংশোধনীতে ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যদি একজন থাকে, তাহলে ব্যালট পেপারে ‘না’ ভোটের বিধান থাকবে। না ভোট বেশি পড়লে পুনরায় নির্বাচন হবে। ফের একক প্রার্থী থাকলে তিনি নির্বাচিত হবেন। অনুচ্ছেদ- ২০ এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। অনুচ্ছেদ ২৬ এর সংশোধনীতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ-২৭-এ আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং যোগ করা হয়েছে। প্রবাসী, সরকারি চাকরিজীবী ও দেশের ভেতরে কয়েদিরা এ সুযোগ পাবেন। অনুচ্ছেদ ৩৬ এ বলা হয়েছে, ভোট গণনার সময় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। এছাড়াও সমভোট পেলে লটারির পরিবর্তে পুনভোট হবে। প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ভোটার প্রতি ১০ টাকা, দলের ব্যয় দেখানো, অনুদানের অর্থের হিসাব ওয়েবসাইটে প্রকাশ, উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক পর্যন্ত বদলিতে ইসির অনুমোদনের বিধান আনা হয়েছে। আবার মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য, গুজব ও এআই অপব্যবহার রোধে প্রার্থী ও দলের বিষয়ে অপরাধ বিবেচনা শাস্তির বিধান আনা হয়েছে। এদিকে নিবন্ধন স্থগিত হলে প্রতীক স্থগিত, অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলে ইসির হাতে ক্ষমতা, আচরণ বিধি প্রতিপালনে ইসি কর্মকর্তাদেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দলের ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান আনা হয়েছে। সরকার নতুন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন (আরপিও) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে। যা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর যোগ্যতা ও নির্বাচনি বিধানগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী যদি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বা অন্য কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকে, তবে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ ছাড়া, আদালত ঘোষিত ফেরারি আসামিদেরও ভোট দেওয়ার অধিকার থাকবে না। নতুন বিধান অনুযায়ী- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট ফের চালু হচ্ছে এবং সমভোটের ক্ষেত্রে পুনভোট হবে। জোটে ভোট প্রদান করলে নিজ দলের মার্কায় ভোট গণনা হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামানত নির্ধারিত হয়েছে ৫০ হাজার টাকা এবং দল আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা করা যেতে পারে। এ ছাড়া, আইটি সাপোর্টে পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। নির্বাচনি অনিয়ম ধরা পড়লে পুরো আসনের ভোট বাতিল করা যেতে পারে। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় এআই অপব্যবহার বা হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতির দায়িত্ব জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের হাতে রাখা হয়েছে এবং তাদের তৈরি তালিকা কমিশনের অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে। রিটার্নিং অফিসার কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলে তা নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। একজন এমপি প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় ভোটার প্রতি ১০ টাকা হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বেশি খরচ করলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন- আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করেছে সরকার। অনুদান হিসেবে প্রাপ্ত অর্থের বিস্তারিত তালিকা প্রকাশের জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা যোগ করা হয়েছে, যা প্রার্থীরা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবেন। চূড়ান্ত আরপিও-র অনুচ্ছেদ ৪৪-এ নতুন সংযোজন অনুসারে, প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয় ভোটার প্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও অনুচ্ছেদ ১৩-এ প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা জামানত, যা আগে ২০ হাজার টাকা ছিল। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় সমতা নিশ্চিত করা হবে বলে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। ডিজিটাল যুগে নির্বাচনের সময়ে ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। এ ধরনের কর্মকাণ্ড রোধে সম্প্রতি জারি করা ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ (আরপিও)–এ নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আরপিওতে ৭৩(ক) ধারা সংযোজন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালে (মনোনয়ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের আগ পর্যন্ত) কেউ যদি জেনে-বুঝে কোনো প্রার্থী, রাজনৈতিক দল বা নির্বাচন কমিশনের সুনাম ক্ষুণ্ণ করা, ফলাফল প্রভাবিত করা বা নির্বাচনি পরিবেশ ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য, ছবি, ভিডিও, অডিও বা অন্য কোনো কনটেন্ট তৈরি, প্রকাশ, বিতরণ বা প্রচার করে—তবে তা দুর্নীতিপূর্ণ আচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এই অপরাধের শাস্তি আরপিও ১৯৭২-এর ৭৩ ধারা অনুযায়ী সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নতুন ধারায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সরঞ্জাম, স্বয়ংক্রিয় বট, ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা সিনথেটিক মিডিয়ার মাধ্যমে তৈরি বিভ্রান্তিকর কনটেন্টকেও অপরাধের আওতায় আনা হয়েছে। আইন অনুযায়ী, ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য কেবল ব্যক্তি প্রার্থীকে লক্ষ্য করেই নয়, বরং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বা জনমত প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হলেও তা শাস্তিযোগ্য হবে। এছাড়া ভুয়া তথ্য সৃষ্টিকারীর পাশাপাশি তা প্রচার বা বিস্তারে জড়িত রাজনৈতিক দল, প্রচার সংগঠন বা গণমাধ্যমকেও যৌথভাবে দায়ী করা হবে। অর্থাৎ, বিভ্রান্তিকর তথ্যের উৎস ও প্রচারক-উভয়কেই আইনের আওতায় আনা হবে। ভুয়া খবরকে নির্বাচনে ‘দুর্নীতিপূর্ণ কাজের’ আওতায় আনা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় এর গুরুতর প্রভাব ও গণতন্ত্রের প্রতি হুমকির বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।