১২:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লারমার চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক, আদিবাসী অধিকার উপেক্ষিত

গরিব-মেহনতি মানুষের বন্ধু ও সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সোহরাব হাসান, নাজমুল হক প্রধান, রাজেকুজ্জামান রতন, আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, দীপায়ন খীসা, জাকির হোসেন, এহসান মাহমুদ, সাইফুর রহমান তপন, শামসুল হুদা ও শিরিন হক প্রমুখ।

সোহরাব হাসান বলেন, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন কেবল পাহাড়ি জনগণের নয়, গোটা দেশের নিপীড়িত মানুষের নেতা। ১৯৭২ সালের সংবিধানে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকারের দাবি তুলেছিলেন। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন— ‘আমি একজন চাকমা, আমি বাঙালি নই।’ এই উচ্চারণই ছিল বাঙালি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক।”

সাইফুর রহমান তপন বলেন, “লারমার চিন্তা যুগের চেয়ে অনেক অগ্রসর। আজও তাঁর দর্শন প্রাসঙ্গিক, কারণ আদিবাসীরা এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।”

দীপায়ন খীসা বলেন, “১০ নভেম্বর একসময় পালন করাও ছিল অপরাধ। শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্রে দিনটি ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল। আজও জুলাই সনদে আদিবাসীদের নাম নেই, অথচ মুখে বহুত্ববাদী বাংলাদেশের কথা বলা হয়।” তিনি আরও বলেন, “দলীয় সরকারগুলো না হোক, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তত আদিবাসীদের পাশে দাঁড়াবে—এটাই প্রত্যাশা, কিন্তু পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়েও কোনো ঘোষণা দেয়নি।”

অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, “২৪ শে জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থানের চেতনা আজ মৌলবাদী শক্তির কাছে হাইজ্যাক হয়েছে। লারমা সেই সময়ই স্বপ্ন দেখেছিলেন—একটি অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার।”

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “১৯৭২ সালের সংবিধানে শ্রমিক, নারী ও আদিবাসীদের অধিকার উল্লেখ হয়নি। তখন লারমা একমাত্র কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন।”

নাজমুল হক প্রধান বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও রাষ্ট্র কাঠামোয় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো এখনও সেই মানসিকতা অর্জন করতে পারেনি।”

আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, “লারমা ছাত্রজীবন থেকেই জুম্ম জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়েছেন। ১৯৭১ সালে গণপরিষদে তিনি ‘আদিবাসীকে বাঙালি’ বানানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। কণ্ঠরোধের চেষ্টা মোকাবেলায় বিকল্প পথ বেছে নিয়েছিলেন।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. গজেন্দ্র নাথ মাহাতো এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব হিরন মিত্র চাকমা ও ত্রিজিনাদ চাকমা। অনুষ্ঠানের শেষে প্রতিবাদী গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে লারমার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

লারমার চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক, আদিবাসী অধিকার উপেক্ষিত

আপডেট সময় : ০৭:০৮:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

গরিব-মেহনতি মানুষের বন্ধু ও সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সোহরাব হাসান, নাজমুল হক প্রধান, রাজেকুজ্জামান রতন, আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, দীপায়ন খীসা, জাকির হোসেন, এহসান মাহমুদ, সাইফুর রহমান তপন, শামসুল হুদা ও শিরিন হক প্রমুখ।

সোহরাব হাসান বলেন, “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন কেবল পাহাড়ি জনগণের নয়, গোটা দেশের নিপীড়িত মানুষের নেতা। ১৯৭২ সালের সংবিধানে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের অধিকারের দাবি তুলেছিলেন। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন— ‘আমি একজন চাকমা, আমি বাঙালি নই।’ এই উচ্চারণই ছিল বাঙালি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক।”

সাইফুর রহমান তপন বলেন, “লারমার চিন্তা যুগের চেয়ে অনেক অগ্রসর। আজও তাঁর দর্শন প্রাসঙ্গিক, কারণ আদিবাসীরা এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।”

দীপায়ন খীসা বলেন, “১০ নভেম্বর একসময় পালন করাও ছিল অপরাধ। শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্রে দিনটি ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল। আজও জুলাই সনদে আদিবাসীদের নাম নেই, অথচ মুখে বহুত্ববাদী বাংলাদেশের কথা বলা হয়।” তিনি আরও বলেন, “দলীয় সরকারগুলো না হোক, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তত আদিবাসীদের পাশে দাঁড়াবে—এটাই প্রত্যাশা, কিন্তু পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়েও কোনো ঘোষণা দেয়নি।”

অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, “২৪ শে জানুয়ারির গণঅভ্যুত্থানের চেতনা আজ মৌলবাদী শক্তির কাছে হাইজ্যাক হয়েছে। লারমা সেই সময়ই স্বপ্ন দেখেছিলেন—একটি অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার।”

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “১৯৭২ সালের সংবিধানে শ্রমিক, নারী ও আদিবাসীদের অধিকার উল্লেখ হয়নি। তখন লারমা একমাত্র কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন।”

নাজমুল হক প্রধান বলেন, “বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও রাষ্ট্র কাঠামোয় বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো এখনও সেই মানসিকতা অর্জন করতে পারেনি।”

আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, “লারমা ছাত্রজীবন থেকেই জুম্ম জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়েছেন। ১৯৭১ সালে গণপরিষদে তিনি ‘আদিবাসীকে বাঙালি’ বানানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। কণ্ঠরোধের চেষ্টা মোকাবেলায় বিকল্প পথ বেছে নিয়েছিলেন।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. গজেন্দ্র নাথ মাহাতো এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব হিরন মিত্র চাকমা ও ত্রিজিনাদ চাকমা। অনুষ্ঠানের শেষে প্রতিবাদী গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে লারমার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এমআর/সবা