- শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলের অপরাধের তদন্তে পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার
- সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর
শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত অপরাধের তদন্তে পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা নিয়েও উঠে এসেছে উদ্বেগের বার্তা। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। এর পর থেকেই বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধীদের গণ-আটক এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে বড় ধরনের সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। এর অংশ হিসাবে হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তও শুরু করেছে দেশটি। আওয়ামী লীগ শাসনামলের শেষ বছরগুলোতে পুলিশ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন শেখ হাসিনা এবং তার কিছু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণ-বিক্ষোভের সময় মারাত্মক দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলায় রাজসাক্ষীও হয়েছেন। ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার লক্ষ্যে এই এই আইনি প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। কিন্তু একই সঙ্গে সাম্প্রতিক নানা প্রতিবেদনে চলমান নির্যাতনমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন করে উদ্বেগও প্রকাশ করছে তারা। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডিডাব্লিউকে বলেন, আমরা গত সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি, বিচার চেয়েছি। কিন্তু পরিস্থিতি এখনো একইরকম আছে। এটা তো চলতে পারে না। অক্টোবরের শেষদিকে ঢাকা-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, হাসিনার শাসনামলের অবসানের পর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ২৮১ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৪০ জন এবং আরও ১৫৩ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলোতে পুলিশ এবং সেনাসদস্যদের জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে অধিকারের প্রতিবেদনে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) তাদের অক্টোবরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার এবং হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটির হিসাবে, কেবল অক্টোবর মাসেই দেশের নানা স্থান থেকে ৬৬টি অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং একই সময়ে ১৩ জনের হেফাজতে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের নৌপুলিশের দেয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে নদী থেকে গড়ে ৪৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।২০২৪ সালে এই হার ছিল প্রতি মাসে গড়ে ৩৬। জানুয়ারিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির যুব সংগঠন যুবদলের নেতা তৌহিদুল ইসলামকে কুমিল্লা শহর থেকে ধরে নিয়ে যায় যৌথবাহিনী। পরদিন গোমতী নদীর কাছে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ইসলামের মৃত্যুর পর ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে সরকার স্থানীয় সেনা কমান্ডারকে প্রত্যাহার করে এবং ইসলামের মৃত্যুর তদন্ত শুরুর কথা জানায়। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার তীব্র অবনতি ঘটেছিল। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) এর বার্ষিক র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ ২০০৯ সালে ১২১তম স্থান থেকে ২০২৪ সালে ১৬৫তম স্থানে নেমে এসেছিল। ২০২৫ সালে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, বাংলাদেশ ১৪৯তম অবস্থানে উঠে এসেছে। কিন্তু এখনও বাংলাদেশ ‘অত্যন্ত গুরুতর’ বিভাগেই রয়ে গেছে। ৬ নভেম্বর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক এক আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, কেউ কেউ বলেন, এখন নাকি মবের ভয় আছে। কিন্তু আমি সেই ভয় দেখতে পাই না। যারা সেই সময় দোসর (শেখ হাসিনা বা আওয়ামী শাসনের) ছিল তারা মবের ভয় পাচ্ছেন। সিপিজের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিচালক বেহ লি ই ডিডাব্লিউকে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা আমাদের জন্য এখনও গভীর উদ্বেগের বিষয়। কিছু সংস্কার করা হলেও, ‘এই সংস্কারগুলো যথেষ্ট নয়’ বলে মনে করেন তিনি।
























