০৭:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণভোটের খরচে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন বেশি প্রয়োজন: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হুঁশিয়ার করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগে ইচ্ছেমতো দাবি আদায় এবং বিএনপির বিজয় ঠেকানোর চেষ্টাকারীরা রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনছে।

দেশের কৃষি ও কৃষকদের বাঁচানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আলু চাষিদের যে ভর্তুকি প্রয়োজন, আবদার মেটাতে গিয়ে গণভোট করতে গেলে সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে। গণভোটের চেয়ে তাই আলু চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি প্রয়োজন। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে গণভোট উৎপাদনের চেয়ে পেঁয়াজের সংরক্ষণাগার বেশি প্রয়োজন। কিন্তু ওইসব চাষিদের কথা বলার মতো দেশে কেউ নেই, এটাই দুর্ভাগ্য।

বুধবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলেচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু দল জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। সরকারকে হুমকি না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানান তারেক রহমান।

এ সময় দেশের বেশকিছু অসংগতি তুলে ধরে গণভোটের অপ্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি জামায়াত আমিরের প্রস্তাবিত নারীদের ৫ ঘণ্টার কাজ করার বিষয়েও সমালোচনা করেন তিনি।

তাকের রহমান বলেন, ৮ ঘণ্টার জায়গায় পোশাক কারখানায় যদি নারীরা ৫ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে বাকি সময়ের অর্থ কে দেবে? এর মাধ্যমে কি নারীদের কাজের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে না। গণভোটের চেয়ে নারীদের মধ্যে চাকরি সংকুচিত হওয়ার যে আতঙ্ক সেটি কাটানো বেশি প্রয়োজন।

দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াতে হলে জনগণের দ্বারা একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তিনি অভিযোগ করেন, নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে কিছু দল, যারা রাজপথে আমাদের সঙ্গী ছিল তারা নির্বাচন নিয়ে জটিলতা তৈরি করছে। পতিতদের ফেরার সুযোগ তৈরি করছে। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুপ্ত থাকা দলটির ছাতার নিচে পতিত ফ্যাসিস্টরা আশ্রয় নিয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, আমি আবারো ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জনগণের মুখোমুখী হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতাকর্মীদেরবাইরেও কিন্তু অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠি রয়েছেন।

‘এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয়জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিলো অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন। কিন্তু এইসব আলোচনায় অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় সেই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠির নিত্যদিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি আলোচিত হয়েছিল?

তিনি আরও বলেন, আমন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? নারীর নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিলো? দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠির প্রতিটিদিনের জীবন যুদ্ধের কথা কি রাজনীতিবিদদের আলোচনার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছিলো?

‘দেশে কিন্তু শুধু কোটা সংস্কার নয় নিরাপদ সড়কের জন্যও তুমুল আন্দোলন হয়েছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গত এক বছরে দেশে সড়ক পথে কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার মানুষ।’

তারেক রহমান বলেন, বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতদের তালিকায় বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে শত শত দফা নিয়ে আলোচনা হলেও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি কি আলোচনায় জায়গা করে নিতে পেরেছিলো? এইসব প্রশ্নগুলো কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

লালমনিরহাটে বিদ্যুৎ-জ্বালানি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্যাবের মানববন্ধন

গণভোটের খরচে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন বেশি প্রয়োজন: তারেক রহমান

আপডেট সময় : ০৯:৪৫:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হুঁশিয়ার করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগে ইচ্ছেমতো দাবি আদায় এবং বিএনপির বিজয় ঠেকানোর চেষ্টাকারীরা রাজনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনছে।

দেশের কৃষি ও কৃষকদের বাঁচানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আলু চাষিদের যে ভর্তুকি প্রয়োজন, আবদার মেটাতে গিয়ে গণভোট করতে গেলে সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে। গণভোটের চেয়ে তাই আলু চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি প্রয়োজন। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে গণভোট উৎপাদনের চেয়ে পেঁয়াজের সংরক্ষণাগার বেশি প্রয়োজন। কিন্তু ওইসব চাষিদের কথা বলার মতো দেশে কেউ নেই, এটাই দুর্ভাগ্য।

বুধবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলেচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু দল জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। সরকারকে হুমকি না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানান তারেক রহমান।

এ সময় দেশের বেশকিছু অসংগতি তুলে ধরে গণভোটের অপ্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি জামায়াত আমিরের প্রস্তাবিত নারীদের ৫ ঘণ্টার কাজ করার বিষয়েও সমালোচনা করেন তিনি।

তাকের রহমান বলেন, ৮ ঘণ্টার জায়গায় পোশাক কারখানায় যদি নারীরা ৫ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে বাকি সময়ের অর্থ কে দেবে? এর মাধ্যমে কি নারীদের কাজের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে না। গণভোটের চেয়ে নারীদের মধ্যে চাকরি সংকুচিত হওয়ার যে আতঙ্ক সেটি কাটানো বেশি প্রয়োজন।

দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াতে হলে জনগণের দ্বারা একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তিনি অভিযোগ করেন, নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে কিছু দল, যারা রাজপথে আমাদের সঙ্গী ছিল তারা নির্বাচন নিয়ে জটিলতা তৈরি করছে। পতিতদের ফেরার সুযোগ তৈরি করছে। ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুপ্ত থাকা দলটির ছাতার নিচে পতিত ফ্যাসিস্টরা আশ্রয় নিয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, আমি আবারো ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বর্তমান দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে হুমকি ধামকি না দিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে জনগণের মুখোমুখী হোন। আমাদের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মনে রাখা দরকার নিজ নিজ দলীয় সমর্থক নেতাকর্মীদেরবাইরেও কিন্তু অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় এক বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠি রয়েছেন।

‘এই লাখো কোটি অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয়জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা বাস্তবায়নের দিকে নজর দেয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, মাসের পর মাস ধরে দেশের জনগণ দেখে আসছিলো অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় পার করে দিয়েছেন। কিন্তু এইসব আলোচনায় অরাজনৈতিক কিংবা নির্দলীয় সেই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠির নিত্যদিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কি আলোচিত হয়েছিল?

তিনি আরও বলেন, আমন্ত্রিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কৃষি-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কর্মসংস্থান নিয়ে আলোচনা করেছিলেন? নারীর নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছিলো? দেশের কৃষক শ্রমিক দিনমজুর স্বল্প আয়ের মানুষ কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠির প্রতিটিদিনের জীবন যুদ্ধের কথা কি রাজনীতিবিদদের আলোচনার তালিকায় স্থান করে নিতে পেরেছিলো?

‘দেশে কিন্তু শুধু কোটা সংস্কার নয় নিরাপদ সড়কের জন্যও তুমুল আন্দোলন হয়েছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গত এক বছরে দেশে সড়ক পথে কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী-শিশু ও পথচারী। আহত হয়েছেন ১৩ হাজার মানুষ।’

তারেক রহমান বলেন, বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি হতাহতদের তালিকায় বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নানা বিষয়ে শত শত দফা নিয়ে আলোচনা হলেও সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি কি আলোচনায় জায়গা করে নিতে পেরেছিলো? এইসব প্রশ্নগুলো কাউকে দোষারোপ করার জন্য নয়।

এমআর/সবা