০৭:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দশ মাসে কারাগারে ৯৫ বন্দির মৃত্যু

যথাসময়ে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ

কারাগারে অসুস্থ বন্দিরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় মারা যাচ্ছেন এমন অভিযোগ করেছেন মৃত বন্দিদের স্বজনরা। কারাবন্দিদের স্বজনদের অভিযোগ, কারা কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হলে হয়তো তারা বেঁচে যেতেন। কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৯৫ জন বন্দি মারা গেছেন। এর মধ্যে ২২ জন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (মিডিয়া ও উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৯৫ জন বন্দি মারা গেছেন। এর মধ্যে ২২ জনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে, আর ৭৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত ৯৫ বন্দির মধ্যে পাঁচজন নারী। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) ডেপুটি জেলার জান্নাতুল তাইবা বলেন, ২৫ অক্টোবর হাজতি বন্দি সোহাগ শিকদার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবারও ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ব্রট ডেড’ উল্লেখ করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। বিষয়টি এখন পুলিশের তদন্তাধীন। তিনি জানান, সোহাগের মৃত্যুর দুই দিন আগে তাকে ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত। কারাগারে ফেরার দুই দিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান। অন্যদিকে ৩০ অক্টোবর কয়েদি (নম্বর৬৯৫৯/এ) আইয়ুব নবীকেও ঢামেকে নেওয়া হলে চিকিৎসক সকাল ৭টায় মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর কারণও ‘ব্রট ডেড’ উল্লেখ করা হয়। টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে ৫ অক্টোবর তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়ে কেরানীগঞ্জ কারাগারে ফেরেন। এরপর আবার অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। গোপালপুর থানার একটি মামলায় তিনি ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। এ ছাড়া গত ৬ নভেম্বর হাজতি বন্দি মামুনুর রশিদকে (৩৪) ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকেও ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করা হয়। তিনি ২৯ অক্টোবর মিরপুরের রূপনগর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, কারাগার থেকে প্রায়ই বন্দি রোগীদের চিকিৎসার জন্য আনা হয়। যাদের ভর্তি দরকার, তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে মাঝে মাঝে একদম নড়াচড়া-বিহীন অবস্থায় বন্দিদের আনা হয়, পরীক্ষা করে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা গেছেন। তখন ব্রট ডেড ঘোষণা করা হয়। তিনি আরও বলেন, এই বন্দিদের হাসপাতালে আনার কত ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে, তা ফরেনসিক চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। এই চিকিৎসক আরও বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগারে কারা হাসপাতাল আছে। কারাগারের ভেতরে কোনো বন্দি মারা গেলে সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরাই তাকে মৃত ঘোষণা করার কথা।
সোহাগের ছোট ভাই সবুজ শিকদার জানান, মৃত্যুর চার মাস আগে মাদক মামলায় মিরপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠায়। সোহাগ টিবি (যক্ষ্মা) রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং পাশাপাশি মাদকাসক্তও ছিলেন। তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর আগে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে সোহাগকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল এবং কয়েক দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তাকে কারাগারে নেওয়ার ঠিক দুই দিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। সবুজ শিকদারের অভিযোগ, কারা কর্তৃপক্ষ আমার ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল ঠিকই, কিন্তু তখন রোগের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কারাগারে অসুস্থ হওয়ার প্রথম দিকে যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতো, আমার ভাই হয়তো বেঁচে যেত। এদিকে, আইয়ুব নবীর ছোট ভাই গোলাম নবী জানান, গোপালপুর থানার একটি মামলায় টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে ছিলেন আইয়ুব নবী। সেখান থেকে কখন তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য আনা হয়, তা তিনি জানতেন না। গোলাম নবী বলেন, কারাগার থেকে অসুস্থতার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে যাই, গিয়ে দেখি আইয়ুব নবীর লাশ। যতটুকু জেনেছি, কারারক্ষীরা হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার আসলেই পূর্ণ চিকিৎসা হয়েছিল কি না জানি না। তিনি লিভারে পানি জমার সমস্যায় ভুগছিলেন। অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, আইয়ুব নবীর সঠিক সময় চিকিৎসার উদ্যোগ যদি নেওয়া হতো, অবশ্যই কারাগার থেকে পরিবারকে বিষয়টি জানানো হতো যে, অমুক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। কারাগার থেকে পরিবারকে হাসপাতালের কথা জানানো হলে আমরা গিয়ে তার লাশ দেখতে পাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নথি অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর সকাল ৭টায় চিকিৎসক কারাবন্দি আইয়ুব নবীকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকেও ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করা হয়।
কারা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ৭৪টি কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও চিকিৎসা-সুবিধা আছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) ১৭২ শয্যার একটি হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে চিকিৎসক ও নার্সরা বন্দিদের চিকিৎসা ও সেবার কাজ করেন। সেখানে ছোটখাটো অস্ত্রোপচার, ইসিজি, এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা এবং সরকারি বরাদ্দের ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। গুরুতর অসুস্থ বন্দিদের কারা চিকিৎসকরা লিখিতভাবে সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার সুপারিশ করেন, এরপর কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম মেনে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাদের হাসপাতালে পাঠায়। সূত্রটি আরও জানায়, কারাগারে থাকা বিচারাধীন আসামিদের বলা হয় হাজতি, আর যাদের সাজা কার্যকর হয়েছে তারা কয়েদি। তবে সবাই কারাবন্দি এবং তারা আদালতের আমানত। আদালত তাদের যেভাবে কারাগারে পাঠায়, তেমনি সুস্থ অবস্থায় ফেরত পাওয়ার অধিকার রাখে। ফলে কোনো বন্দি অসুস্থ হলে কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার সুযোগ নেই। যদি কোনো বন্দি গুরুতর অসুস্থ হন এবং তাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তবে নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির না করতে পারলে হাসপাতালের নথিপত্র আদালতে জমা দিতে হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

একনেক সভায় ৪৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার ২২ প্রকল্প অনুমোদন

দশ মাসে কারাগারে ৯৫ বন্দির মৃত্যু

আপডেট সময় : ০৭:৩১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

কারাগারে অসুস্থ বন্দিরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় মারা যাচ্ছেন এমন অভিযোগ করেছেন মৃত বন্দিদের স্বজনরা। কারাবন্দিদের স্বজনদের অভিযোগ, কারা কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হলে হয়তো তারা বেঁচে যেতেন। কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৯৫ জন বন্দি মারা গেছেন। এর মধ্যে ২২ জন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (মিডিয়া ও উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল-ফরহাদ বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকার কেরানীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে ৯৫ জন বন্দি মারা গেছেন। এর মধ্যে ২২ জনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়েছে, আর ৭৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃত ৯৫ বন্দির মধ্যে পাঁচজন নারী। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) ডেপুটি জেলার জান্নাতুল তাইবা বলেন, ২৫ অক্টোবর হাজতি বন্দি সোহাগ শিকদার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে আবারও ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। চিকিৎসক সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘ব্রট ডেড’ উল্লেখ করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। বিষয়টি এখন পুলিশের তদন্তাধীন। তিনি জানান, সোহাগের মৃত্যুর দুই দিন আগে তাকে ঢাকা মেডেকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি যক্ষ্মায় আক্রান্ত। কারাগারে ফেরার দুই দিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান। অন্যদিকে ৩০ অক্টোবর কয়েদি (নম্বর৬৯৫৯/এ) আইয়ুব নবীকেও ঢামেকে নেওয়া হলে চিকিৎসক সকাল ৭টায় মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর কারণও ‘ব্রট ডেড’ উল্লেখ করা হয়। টাঙ্গাইল জেলা কারাগার থেকে ৫ অক্টোবর তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়ে কেরানীগঞ্জ কারাগারে ফেরেন। এরপর আবার অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। গোপালপুর থানার একটি মামলায় তিনি ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। এ ছাড়া গত ৬ নভেম্বর হাজতি বন্দি মামুনুর রশিদকে (৩৪) ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকেও ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করা হয়। তিনি ২৯ অক্টোবর মিরপুরের রূপনগর থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, কারাগার থেকে প্রায়ই বন্দি রোগীদের চিকিৎসার জন্য আনা হয়। যাদের ভর্তি দরকার, তাদের ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে মাঝে মাঝে একদম নড়াচড়া-বিহীন অবস্থায় বন্দিদের আনা হয়, পরীক্ষা করে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তারা মারা গেছেন। তখন ব্রট ডেড ঘোষণা করা হয়। তিনি আরও বলেন, এই বন্দিদের হাসপাতালে আনার কত ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে, তা ফরেনসিক চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। এই চিকিৎসক আরও বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগারে কারা হাসপাতাল আছে। কারাগারের ভেতরে কোনো বন্দি মারা গেলে সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরাই তাকে মৃত ঘোষণা করার কথা।
সোহাগের ছোট ভাই সবুজ শিকদার জানান, মৃত্যুর চার মাস আগে মাদক মামলায় মিরপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠায়। সোহাগ টিবি (যক্ষ্মা) রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং পাশাপাশি মাদকাসক্তও ছিলেন। তিনি আরও বলেন, মৃত্যুর আগে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে সোহাগকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল এবং কয়েক দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তাকে কারাগারে নেওয়ার ঠিক দুই দিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়। সবুজ শিকদারের অভিযোগ, কারা কর্তৃপক্ষ আমার ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল ঠিকই, কিন্তু তখন রোগের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কারাগারে অসুস্থ হওয়ার প্রথম দিকে যদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হতো, আমার ভাই হয়তো বেঁচে যেত। এদিকে, আইয়ুব নবীর ছোট ভাই গোলাম নবী জানান, গোপালপুর থানার একটি মামলায় টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে ছিলেন আইয়ুব নবী। সেখান থেকে কখন তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য আনা হয়, তা তিনি জানতেন না। গোলাম নবী বলেন, কারাগার থেকে অসুস্থতার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে যাই, গিয়ে দেখি আইয়ুব নবীর লাশ। যতটুকু জেনেছি, কারারক্ষীরা হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার আসলেই পূর্ণ চিকিৎসা হয়েছিল কি না জানি না। তিনি লিভারে পানি জমার সমস্যায় ভুগছিলেন। অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, আইয়ুব নবীর সঠিক সময় চিকিৎসার উদ্যোগ যদি নেওয়া হতো, অবশ্যই কারাগার থেকে পরিবারকে বিষয়টি জানানো হতো যে, অমুক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়েছে। কারাগার থেকে পরিবারকে হাসপাতালের কথা জানানো হলে আমরা গিয়ে তার লাশ দেখতে পাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নথি অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর সকাল ৭টায় চিকিৎসক কারাবন্দি আইয়ুব নবীকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকেও ‘ব্রট ডেড’ ঘোষণা করা হয়।
কারা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে ৭৪টি কারাগারে বন্দিদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক ও চিকিৎসা-সুবিধা আছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) ১৭২ শয্যার একটি হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে চিকিৎসক ও নার্সরা বন্দিদের চিকিৎসা ও সেবার কাজ করেন। সেখানে ছোটখাটো অস্ত্রোপচার, ইসিজি, এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা এবং সরকারি বরাদ্দের ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। গুরুতর অসুস্থ বন্দিদের কারা চিকিৎসকরা লিখিতভাবে সরকারি হাসপাতালে নেওয়ার সুপারিশ করেন, এরপর কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ম মেনে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাদের হাসপাতালে পাঠায়। সূত্রটি আরও জানায়, কারাগারে থাকা বিচারাধীন আসামিদের বলা হয় হাজতি, আর যাদের সাজা কার্যকর হয়েছে তারা কয়েদি। তবে সবাই কারাবন্দি এবং তারা আদালতের আমানত। আদালত তাদের যেভাবে কারাগারে পাঠায়, তেমনি সুস্থ অবস্থায় ফেরত পাওয়ার অধিকার রাখে। ফলে কোনো বন্দি অসুস্থ হলে কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলার সুযোগ নেই। যদি কোনো বন্দি গুরুতর অসুস্থ হন এবং তাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তবে নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে হাজির না করতে পারলে হাসপাতালের নথিপত্র আদালতে জমা দিতে হয়।