চট্টগ্রামের কালুরঘাটে রেল ও সড়কসহ বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প ধীরগতিতে এগোচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হতে আরও সময় লাগবে, কারণ এখনো পরামর্শক (কনসালটেন্ট) নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। রেল ভবনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে পরামর্শক নিয়োগের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল, কিন্তু এখনো চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হবে। পরামর্শক নিয়োগের পরই সেতুর চূড়ান্ত ডিজাইন করা হবে এবং এরপর টেন্ডার আহ্বান করা হবে। রেল ভবনের এক কর্মকর্তা জানান, পরামর্শক নিয়োগের পর ড্রয়িং–ডিজাইন চূড়ান্ত করা হবে। তারপর ৭ ধারার নোটিশ জারি করে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে। ডিসির এলএ ফান্ডে জমা দেওয়ার পর প্রকল্পের পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়া ২০২৬ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ কুদরত–ই–খুদা বলেন, “নতুন কালুরঘাট সেতুর পরামর্শক নিয়োগের টেন্ডার মার্চে আহ্বান করা হয়েছিল। ডিসেম্বরে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে। এরপর সেতুর ডিজাইন চূড়ান্ত করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
কালুরঘাট নতুন সেতুর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ২২ জনের একটি তালিকা পাঠায়। তাদের মধ্যে ৮টি গ্রুপ দরপত্র দাখিল করেছে। যাচাই–বাছাই শেষে ৫টি প্রতিষ্ঠান শর্টলিস্ট করা হয়। সেই তালিকা থেকে একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখনও চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
চট্টগ্রামবাসীর বহু প্রত্যাশিত এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৪ মে। এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কালুরঘাটে রেল–কাম–রোড সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।
রেল ভবনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন সেতুর প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১১,৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণের জন্য ৭,১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দক্ষিণ কোরিয়া দিচ্ছে, আর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৪,৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।
প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর জানায়, এক্সট্রা ডোজ টাইপ সেতুটি দুই পাশে দুটি ডুয়াল গেজ রেলপথ, দুই লেনের সড়ক এবং উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ পথচারীর জন্য সুবিধাসহ তৈরি হবে। নদীর উপর সাতটি স্প্যান থাকবে।
প্রকল্প অনুযায়ী, ২০২৬ সালের শুরুতে মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে এবং ২০৩০ সালে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরীকে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরামর্শক নিয়োগে দীর্ঘ সময় লাগায় প্রকল্পে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। তবে একবার নিয়োগ সম্পন্ন হলে ডিজাইন চূড়ান্ত ও টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত এগোবে।
এমআর/সবা























