জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর চট্টগ্রামের শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বস্তি ও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা রায়ের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে (রাজসাক্ষী) হওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ ওয়াসিমের বাবা শফি আলম বলেন, সকাল থেকেই তিনি রায় ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন। রায় শুনে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন এবং দেশবাসীর মতো আনন্দিত হয়েছেন। তার দাবি, শেখ হাসিনাসহ সকল পরিকল্পনাকারী, হামলাকারী ও নির্দেশদাতাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তের মা কহিনূর আক্তার বলেন, “আমার সন্তানকে আর ফেরত পাব না; কিন্তু হাসিনার ফাঁসির রায় শুনে কিছুটা শান্তি পাচ্ছি।” তিনি রায়ের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, “হাসিনাকে দেশে এনে বিচার কার্যকরে আন্তর্জাতিক মহল ও রাষ্ট্র যেন সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেয়।”
শান্তর বাবা জাকির হোসেন জানান, সন্তানকে হারানোর বেদনা কখনোই দূর হবে না। তবে তিনি আশা করেন, রায় দ্রুত কার্যকর হলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তার মতে, ড. ইউনুস চাইলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা সম্ভব।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চোখ হারানো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভ হোসেন বলেন, রায়ের পাশাপাশি সব মামলার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি জানান, গুলি চালনার ঘটনায় জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি, যুবলীগ নেতা বাবরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে হাছান মাহমুদ, মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আ জ ম নাছির উদ্দিন ও রেজাউল করিমসহ হোতাদের বিরুদ্ধেও বিচার হওয়া প্রয়োজন।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সরকারি বাহিনীর গুলিতে ওয়াসিম, শান্ত, ফারুকসহ বহু তরুণ নিহত হন। জুলাইয়ের আন্দোলনে চট্টগ্রামে মোট ১৬ জন শহীদ এবং ৯০০ জনের বেশি ছাত্র–জনতা আহত হন, যাদের অনেকেই স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এসব ঘটনায় ১৫১টি মামলা হলেও দেড় বছরেও মাত্র একটি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে।
তদন্তের ধীরগতিতে উদ্বেগ জানিয়ে শহীদ শান্তর মা কহিনূর আক্তার বলেন, বিচারহীনতার দেশ হিসেবে শঙ্কা থেকেই যায়। তিনি দাবি করেন, সব মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করে বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
এমআর/সবা























