স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বহু প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবে রংপুর এখনো অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার—এমন অভিযোগ নগরবাসীর। সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা সংস্কার–বর্ধিতকরণসহ ১৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ফাইলবন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে মহানগরীর মানুষ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শহীদ আবু সাঈদ রংপুরকে দেশের এক নম্বর জেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও ১৬ মাসেও প্রকল্প অনুমোদন হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানের আগে ২০২১ সালে রাস্তা বর্ধিতকরণ, সংস্কার, ড্রেনেজ উন্নয়ন, শ্যামাসুন্দরী খালের ওপর ব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজের জন্য ১ হাজার ৬৫৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আশ্বাস মিললেও একনেকে প্রকল্পটি পাস হয়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটি তোলার কথা থাকলেও তার তিন দিন আগে, ১৫ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশন চিঠি দিয়ে জানায়—বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রয়োজন নেই। এরপর থেকেই প্রস্তাবটি ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে।

রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোট সড়ক ১ হাজার ৪৫৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৯৫৩ কিলোমিটার পাকা, বাকি ৫০৩ কিলোমিটার কাঁচা। পাকা সড়কের অন্তত ৩০০ কিলোমিটার এখন চলাচলের অযোগ্য। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই। জাহাজ কোম্পানি থেকে সাতমাথা, সার্কিট হাউস, বুড়িরহাট, মেডিকেল–মডার্ন মোড়, কুকরুল, বাবুপাড়া, তাজহাট, মাহিগঞ্জসহ নগরের প্রধান সড়কগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। কোথাও পুরো পিচ-খোয়া উঠে গেছে, কোথাও গভীর গর্তে জমে আছে পানি।
ভাঙাচোরা সড়কে চলাচল করতে গিয়ে স্কুলগামী শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগী, সাধারণ যাত্রী ও চালকরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়ছেন। বর্ষায় ডুবে গেছে সড়ক, শুষ্ক মৌসুমে ধুলার কারণে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট ও চোখের রোগ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে জাহাজ কোম্পানি–সাতমাথা সড়কের দুরাবস্থার প্রতিবাদে স্থানীয়রা সিটি কর্পোরেশনের ‘গায়েবানা জানাজা’ এবং রাস্তার ওপর ধান রোপণ করে নজর কাড়েন।
সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, তাঁর আমলেই ১৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে তোলা হয়েছিল, কিন্তু রিভাইসের নির্দেশ পেয়ে পুনরায় পাঠানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও প্রকল্প পাঠানো হলেও অনুমোদন মেলেনি।
সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজম আলী বলেন, ‘‘প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। অনুমোদন মিললে নগরীর সড়কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হবে।’’ তিনি আরও জানান, বরাদ্দ না থাকায় বড় পরিসরে কাজ করা যাচ্ছে না; তবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হচ্ছে।
এমআর/সবা
























