জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর দীপঙ্কর দ্বীপ—যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখো তরুণের অনুপ্রেরণা—গত ১২ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ মারা গেছেন। প্রাণচঞ্চল ও কর্মঠ এ তরুণের অকাল মৃত্যু শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের নয়, সিলেটের তরুণ সমাজকেও গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে।
দীপই একমাত্র নন। গত কয়েক বছরে সিলেটজুড়ে একের পর এক তরুণ হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছেন। ২০, ২৫ বা ৩০ বছর বয়সী তরুণরা কোনো পূর্বলক্ষণ ছাড়াই হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, যা চিকিৎসকদেরও উদ্বিগ্ন করেছে।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনা—সিলেট নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ মফিজ মিয়া ও তার ভাই মকসুদ মিয়া হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যদের মতে, দুজনের কোনো বড় শারীরিক অসুখ ছিল না। স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যেও দুজনের মৃত্যুর ঘটনা অপ্রত্যাশিত ও মর্মান্তিক। একজন স্বজন বলেন, “আমরা ভাবতেই পারিনি এত কম বয়সে একসঙ্গে দুই ভাইকে হারাতে হবে। এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।”
চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম, জাঙ্কফুড ও ফাস্টফুড, ধূমপান, ভেপিং, দীর্ঘ সময় মোবাইল বা কম্পিউটারের সামনে বসা—এসব কারণ তরুণদের দ্রুত ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুর রউফ মুন্না জানান, চলতি নভেম্বর মাসে ১,২৩২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ বছরের নিচে ২৬ জন এবং ২০–৪০ বছর বয়সী ২৩০ জন। বিশেষ করে কম বয়সীদের মধ্যে হৃদরোগের হার উদ্বেগজনক।
অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউর রহমান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইলের সামনে বসা, হাঁটার অভাব, লিফট ব্যবহার, মানসিক চাপ—এসব জীবনযাপনের পরিবর্তন তরুণদের হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি সরাসরি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে হৃদয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
WHO সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী ডা. সুফী মুহাম্মদ খালিদ সতর্ক করেছেন, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক চাপ, ধূমপান, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা তরুণদের হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও ধূমপানমুক্ত জীবন হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকের পেছনে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, ধূমপান, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত জীবনযাপন দায়ী। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণও ঝুঁকি বাড়ায়।
সিলেট বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, ৩০ বছরের নিচে তরুণরাও হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। জীবনযাপনের দ্রুত পরিবর্তন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামের অভাব এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা—এসব মিলিয়ে তরুণদের হৃদরোগের ঝুঁকি ভয়াবহভাবে বেড়েছে। এখনই সচেতনতা বাড়ানো ও ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস কমানো জরুরি।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অতনু ভট্টাচার্য বলেন, তরুণদের অকাল হৃদরোগের পেছনে ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, জাঙ্কফুড, অনিয়মিত ঘুম এবং মানসিক চাপ দায়ী। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ না করলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।
এমআর/সবা


























