০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি—১৩ বছর পর চাকরি হারালেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক নিয়োগ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার ১৩ বছর পর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানকে সরকারি চাকরি বিধি ২০১৮ অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম—সিন্ডিকেট।

গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৮তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। বিধি অনুযায়ী চাকরিচ্যুতির আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে দায়মুক্তির সুযোগ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ—তিনটি তদন্তেই প্রমাণ পেলো জালিয়াতি

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘হলুদ দল’-এর নেতা তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইউজিসির পৃথক তদন্তে জালিয়াতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

২০১১ সালের নিয়োগে একের পর এক অনিয়ম

বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র অনুসন্ধানে জানা যায়—২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) ১টি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক ২টি স্থায়ী পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রভাষক পদে মোট ২২ জন আবেদন করেন, যার একজন ছিলেন তাবিউর রহমান।
২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাছাই বোর্ডে দুইজনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়—১. মোহা. মাহামুদুল হক, ২. নিয়ামুন নাহারকে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের পর ‘জালিয়াতি করে’ তাবিউর রহমানের নাম তৃতীয় অপেক্ষমাণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা মূল তালিকায় ছিল না।

এমনকি সুপারিশপত্রে কম্পিউটারে টাইপ করা ‘মেধাক্রমানুসারে’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘যে কোন’ লেখা হয়। এর মাধ্যমে সিন্ডিকেটকে বিভ্রান্ত করে নিম্নতালিকা থেকে যে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়।

সিন্ডিকেটেও জালিয়াতি

১৪ জানুয়ারির ২১তম সিন্ডিকেট সভায় ‘অপেক্ষমাণ দুজনের’ পরিবর্তে তৃতীয়জন হিসেবে তাবিউরের নাম অনুমোদন করা হয়। অথচ এর কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। এরপর ২২তম সিন্ডিকেটে ‘যে কাউকে’ শব্দটি আপত্তির কারণে বাতিল হলেও, তবুও আরেকটি জালিয়াতি ঘটে—অপেক্ষমাণ তালিকার সিরিয়াল বদলে দেওয়া হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া সত্ত্বেও মাহামুদুল হককে বাদ দিয়ে তাবিউরকে প্রথম অপেক্ষমাণ বানানো হয়।

অবৈধভাবে উচ্চপদে নিয়োগ

তাবিউর রহমান আবেদন করেছিলেন সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক পদের জন্য। কিন্তু তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপত্র পান, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।

নিয়ম অনুযায়ী পদ শূন্য হলে নতুন বিজ্ঞাপন দিতে হয়—কিন্তু সেটিও করা হয়নি। চাকরিচ্যুত শিক্ষক বললেন, চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, আমি শুনেছি বিষয়টি সিন্ডিকেটে উঠেছে। তবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাকে জানানো হয়নি। কোনো নোটিশও পাইনি।”

বেরোবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকত আলী বলেন “সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রেজুলেশন পাস হলেই এটি অফিসিয়ালি জানানো হবে।”

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি—১৩ বছর পর চাকরি হারালেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক নিয়োগ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার ১৩ বছর পর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানকে সরকারি চাকরি বিধি ২০১৮ অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম—সিন্ডিকেট।

গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৮তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। বিধি অনুযায়ী চাকরিচ্যুতির আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে দায়মুক্তির সুযোগ দিয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ—তিনটি তদন্তেই প্রমাণ পেলো জালিয়াতি

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘হলুদ দল’-এর নেতা তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইউজিসির পৃথক তদন্তে জালিয়াতির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

২০১১ সালের নিয়োগে একের পর এক অনিয়ম

বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্র অনুসন্ধানে জানা যায়—২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) ১টি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক ২টি স্থায়ী পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রভাষক পদে মোট ২২ জন আবেদন করেন, যার একজন ছিলেন তাবিউর রহমান।
২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাছাই বোর্ডে দুইজনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়—১. মোহা. মাহামুদুল হক, ২. নিয়ামুন নাহারকে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের পর ‘জালিয়াতি করে’ তাবিউর রহমানের নাম তৃতীয় অপেক্ষমাণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা মূল তালিকায় ছিল না।

এমনকি সুপারিশপত্রে কম্পিউটারে টাইপ করা ‘মেধাক্রমানুসারে’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘যে কোন’ লেখা হয়। এর মাধ্যমে সিন্ডিকেটকে বিভ্রান্ত করে নিম্নতালিকা থেকে যে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা হয়।

সিন্ডিকেটেও জালিয়াতি

১৪ জানুয়ারির ২১তম সিন্ডিকেট সভায় ‘অপেক্ষমাণ দুজনের’ পরিবর্তে তৃতীয়জন হিসেবে তাবিউরের নাম অনুমোদন করা হয়। অথচ এর কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। এরপর ২২তম সিন্ডিকেটে ‘যে কাউকে’ শব্দটি আপত্তির কারণে বাতিল হলেও, তবুও আরেকটি জালিয়াতি ঘটে—অপেক্ষমাণ তালিকার সিরিয়াল বদলে দেওয়া হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় হওয়া সত্ত্বেও মাহামুদুল হককে বাদ দিয়ে তাবিউরকে প্রথম অপেক্ষমাণ বানানো হয়।

অবৈধভাবে উচ্চপদে নিয়োগ

তাবিউর রহমান আবেদন করেছিলেন সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক পদের জন্য। কিন্তু তিনি অস্থায়ী ভিত্তিতে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগপত্র পান, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।

নিয়ম অনুযায়ী পদ শূন্য হলে নতুন বিজ্ঞাপন দিতে হয়—কিন্তু সেটিও করা হয়নি। চাকরিচ্যুত শিক্ষক বললেন, চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, আমি শুনেছি বিষয়টি সিন্ডিকেটে উঠেছে। তবে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাকে জানানো হয়নি। কোনো নোটিশও পাইনি।”

বেরোবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকত আলী বলেন “সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রেজুলেশন পাস হলেই এটি অফিসিয়ালি জানানো হবে।”

এমআর/সবা