০৯:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শর্ত লঙ্ঘন ও টেন্ডারবিহীন বিক্রিতে বিতর্ক

নান্দাইলে ব্রহ্মপুত্রে কোটি টাকার বালু ডাকাতির অভিযোগ

filter: 0; jpegRotation: 0; fileterIntensity: 0.000000; filterMask: 0; module:1facing:0; hw-remosaic: 0; touch: (-1.0, -1.0); modeInfo: ; sceneMode: Auto; cct_value: 0; AI_Scene: (-1, -1); aec_lux: 138.0; hist255: 0.0; hist252~255: 0.0; hist0~15: 0.0;

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারী মৌজায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে খননকাজে উত্তোলিত মাটি ও বালু বিক্রিকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার অনিয়ম, শর্ত লঙ্ঘন এবং টেন্ডারবিহীন বেচাকেনার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এ পরিস্থিতি “বালু ডাকাতির মহোৎসব” হিসেবে অভিহিত করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) খননকাজে উত্তোলিত বিক্রয়যোগ্য ১০ লক্ষ ঘনফুট বালু বিক্রির জন্য ২১ মে ২০২৫ তারিখে উপজেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে উন্মুক্ত নিলাম আহ্বান করেছিল। ২৭ মে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিলামে মেসার্স বিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ বালু ক্রয় করে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, নিলামের শর্ত অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে বালু অপসারণের কথা থাকলেও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার অনুমোদন দিয়ে সময় ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে ১৫ দিনে বালু অপসারণ সম্ভব, সেখানে ১০ মাস সময় বাড়ানোর যৌক্তিকতা কোথায়।

এছাড়া নিলামে নির্ধারিত ১০ লক্ষ ঘনফুট বালুর নির্দিষ্ট অবস্থান অপরিবর্তিত না রেখে পরবর্তীতে ডিসি পার্ক থেকে ঈশ্বরগঞ্জ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা উল্লেখ করে নতুন স্মারক তৈরি করা হয়েছে। এতে নিলাম বিজ্ঞপ্তির শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ।

সর্বাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ হচ্ছে, একই এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর খননকাজে উত্তোলিত প্রায় ৫০ লক্ষ ঘনফুট অতিরিক্ত বালু কোনো টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫–৬টি এক্সকাভেটর দিয়ে একটানা বালু উত্তোলন হচ্ছে। সারি সারি ১০ চাকা ও ৬ চাকার ড্রাম ট্রাক ও লরি ২৪ ঘণ্টা চলাচল করছে। এতে স্থানীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আশপাশের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ঝুঁকির মুখে পড়েছে, একই সঙ্গে নদীর স্বাভাবিক গতিপথও বিপন্ন হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন ২০–২২টি ড্রাম ট্রাক আর কয়েকটি লরি দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এখানে যা হচ্ছে, তা পরিষ্কার ডাকাতি। বারবার প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”

অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স বিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. বিল্লাল বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সাবেক ইউএনও সারমিনা সাত্তার আমাদের ১০ মাস সময় দিয়েছেন। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি।”

ময়মনসিংহ বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী মোহসীন আলম জানান, বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের বিষয়। উপ-সহকারী প্রকৌশলী আকবর মিয়া বলেন, “আমরা শুধু মাটি-বালুর পরিমাণ নির্ধারণ করি, এর বেশি কিছু বলতে পারি না।”

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা জান্নাত বলেন, “অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা দাবি করছেন, প্রশাসনের সদিচ্ছা ছাড়া এ ধরনের অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি রোধ করা সম্ভব নয়। নদী ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

শর্ত লঙ্ঘন ও টেন্ডারবিহীন বিক্রিতে বিতর্ক

নান্দাইলে ব্রহ্মপুত্রে কোটি টাকার বালু ডাকাতির অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৭:৪১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নের চরভেলামারী মৌজায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে খননকাজে উত্তোলিত মাটি ও বালু বিক্রিকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার অনিয়ম, শর্ত লঙ্ঘন এবং টেন্ডারবিহীন বেচাকেনার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এ পরিস্থিতি “বালু ডাকাতির মহোৎসব” হিসেবে অভিহিত করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) খননকাজে উত্তোলিত বিক্রয়যোগ্য ১০ লক্ষ ঘনফুট বালু বিক্রির জন্য ২১ মে ২০২৫ তারিখে উপজেলা বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে উন্মুক্ত নিলাম আহ্বান করেছিল। ২৭ মে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিলামে মেসার্স বিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ বালু ক্রয় করে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, নিলামের শর্ত অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে বালু অপসারণের কথা থাকলেও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার অনুমোদন দিয়ে সময় ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে ১৫ দিনে বালু অপসারণ সম্ভব, সেখানে ১০ মাস সময় বাড়ানোর যৌক্তিকতা কোথায়।

এছাড়া নিলামে নির্ধারিত ১০ লক্ষ ঘনফুট বালুর নির্দিষ্ট অবস্থান অপরিবর্তিত না রেখে পরবর্তীতে ডিসি পার্ক থেকে ঈশ্বরগঞ্জ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা উল্লেখ করে নতুন স্মারক তৈরি করা হয়েছে। এতে নিলাম বিজ্ঞপ্তির শর্ত লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ।

সর্বাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ হচ্ছে, একই এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর খননকাজে উত্তোলিত প্রায় ৫০ লক্ষ ঘনফুট অতিরিক্ত বালু কোনো টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ৫–৬টি এক্সকাভেটর দিয়ে একটানা বালু উত্তোলন হচ্ছে। সারি সারি ১০ চাকা ও ৬ চাকার ড্রাম ট্রাক ও লরি ২৪ ঘণ্টা চলাচল করছে। এতে স্থানীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আশপাশের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি ঝুঁকির মুখে পড়েছে, একই সঙ্গে নদীর স্বাভাবিক গতিপথও বিপন্ন হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন ২০–২২টি ড্রাম ট্রাক আর কয়েকটি লরি দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এখানে যা হচ্ছে, তা পরিষ্কার ডাকাতি। বারবার প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”

অভিযোগের বিষয়ে মেসার্স বিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. বিল্লাল বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সাবেক ইউএনও সারমিনা সাত্তার আমাদের ১০ মাস সময় দিয়েছেন। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করছি।”

ময়মনসিংহ বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী মোহসীন আলম জানান, বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের বিষয়। উপ-সহকারী প্রকৌশলী আকবর মিয়া বলেন, “আমরা শুধু মাটি-বালুর পরিমাণ নির্ধারণ করি, এর বেশি কিছু বলতে পারি না।”

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা জান্নাত বলেন, “অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা দাবি করছেন, প্রশাসনের সদিচ্ছা ছাড়া এ ধরনের অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি রোধ করা সম্ভব নয়। নদী ও পরিবেশের ক্ষতি রোধ করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এমআর/সবা