০৩:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশজুড়ে বাড়ছে সহিংসতা-খুনোখুনি

  • ২০১৬-২০২৪ সাল পর্যন্ত গড় খুন ছিল ৮-১০
  • ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুন হয়েছেন ২৯১১
  • যা গড়ে প্রতিদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার ১১ জন
  • হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন ব্যক্তির তথ্য চেয়েছে পুলিশ

‘অতীতের আধিপত্য বলয় থেকে বেরিয়ে আসলেও এখন নব্য ফ্যাসিবাদ লক্ষ্য করছি। সহিংসতা-খুনোখুনি বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা। অপরাধ দমনে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’
– সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক, সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক, ঢাবি

‘জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে’
– শেখ মো. সাজ্জাদ আলী, ডিএমপি কমিশনার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। এ ইস্যুতে ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ভোটের মাঠেও সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তবে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে টার্গেট কিলিংয়ে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অনেকের ধারণা, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে দেশি-বিদেশি চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তার সুযোগে ক্রমেই বাড়ছে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। প্রেমঘটিত ঘটনা, পারিবারিক , জমিজমা, রাজনৈতিক বিরোধ, পূর্বশত্রুতার জেরে দেশজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে সহিংসতা-খুনোখুনি। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে প্রতিদিন গড় খুন ছিল ৮-১০ জন। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুন হয়েছেন ২৯১১ জন। যা সারা দেশে গড়ে প্রতিদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন ১১ জন। ফলে জাতী যখন নির্বাচনমুখী, ঠিক তখনই দেশজুড়ে বাড়ছে এদিকে রাজধানীর পল্টন এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা চালায় অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা। মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তদের একজন শনাক্ত হলেও তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা। অপরাধীরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন ব্যক্তির তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হকের মতে, অতীতের আধিপত্য বলয় থেকে বেরিয়ে আসলেও এখন নব্য ফ্যাসিবাদ লক্ষ্য করছি। ঐক্য না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে। মতবিরোধ থাকায় বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সহিংসতা-খুনোখুনি বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা। সমাজ থেকে অপরাধ দমনে অপরাধী যেই হোক, তার দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা নির্বাচনের আগে ও পরে এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেছেন, দেশের জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ঠুটাপাখুরি এলাকায় প্রায় ১৪ একর জমি মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় আব্দুল আজিজ এবং নাসির উদ্দিনের লোকজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৬ জন আহত হয়।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয়পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১০টার দিকে শরীয়তপুরের সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের বালার বাজার এলাকায় জমি থেকে ইট ভাটার মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলেন, হাকিম মৃধা ও তার ভাইয়ের ছেলে আবজাল মৃধা। অন্য পক্ষের আহতরা হলেন, মোস্তফা ব্যাপারী ও তার ছেলে নীরব ব্যাপারী।
এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম সবুজ বাংলাকে বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠিয়েছি। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ মজুপুর এলাকায় ঘরে ঢুকে ছকিনা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত ছকিনা বেগম ওই এলাকার মৃত সফিক উল্লাহর স্ত্রী। নিহতের সন্তানরা প্রবাসে থাকেন। পুত্রবধূরা পামাপাশি রুমে বসবাস করে। কে বা কারা তাকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্বশত্রুতার কারণে ওই নারীকে হত্যা করা হতে পারে। তবে এটি ডাকাতিতে বাধা দেওয়ার কারণে হয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখাসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে, গত ১১ ডিসেম্বর দুপুরে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের শ্যামবাজার মাওলাবক্স চক্ষু হাসপাতালের সামনে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ভূঁইয়াকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত আব্দুর রহমান শ্যামবাজার কাঁচাবাজার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন।
সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, নয়ন নামের এক যুবক তাকে গুলি করে পালিয়ে গেছে। তবে ঘটনার তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে একই দিন রাত সোয়া ৭টার দিকে পুরান ঢাকার লালবাগ চৌরাস্তা মোড়ে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে মো. রিয়াদ নামের এক যুবক যুবক খুন হয়েছে। পথচারী মোহাম্মদ ফাহিমসহ স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিয়াদ লালবাগের স্থায়ী বাসিন্দা মো. সালামের ছেলে। বর্তমানে লালবাগ শহীদ নগরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। এক বছর বয়সী এক ছেলে আছে তার। হাসপাতালে নিহতের মা নাছিমা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয় রিয়াদ। এরপর খবর পাই ছেলে ঢামেক হাসপাতালে। ছুটে এসে ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লালবাগের শহীদ নগর ২ নম্বর গেট এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত যুবক চুড়ি কারখানায় কাজ করতেন বলে জানা গেছে। সেদিন ঘটনাস্থল থেকে বিকেল ৪টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বোন মোছা. সুরাইয়া সবুজ বাংলাকে বলেন, আমার ভাই একটি চুড়ি কারখানায় কাজ করতেন। গত ৮ ডিসেম্বর আবির ও নীরব নামে দুই যুবকের সঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে তার ঝগড়া হয়। সেই ঘটনার জেরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে খবর পেয়ে আমরা তাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ঝগড়ার পর ওই দিন রাতেই আমার ভাই আবিরের কাছে মাফ চেয়েছিল। তারপরও কেন তাকে হত্যা করা হলো, এ প্রশ্ন করে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুরাইয়া।
এ দুটি খুনের বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিন আলী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, পুর্বশত্রুতার জের ধরে ঘটনা দুটি ঘটেছে। তবে ঘটনার তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।
এর আগে, গত ৮ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের নিজ বাসায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। পরদিন ৯ ডিসেম্বর দুপুরে নিহত লায়লা ফিরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে খণ্ডকালীন গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১০ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চরকারা গ্রামে আয়েশার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বির দাদার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কক্ষ তল্লাশি করে গৃহকর্মী আয়েশা কর্তৃক চোরাইকৃত একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। পরে সিএমএম আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত গৃহকর্মী ও তার স্বামীকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর সকালে রংপুরের কাউনিয়ায় উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম খোপাতি গ্রামে ইজার উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক খোকা মিয়ার জমিতে মাটি কাটার চেষ্টা করেন। তখন খোকা মিয়া বাধা দিলে ইজার উদ্দিন ও তার লোকজন তাকে লাঠি দিয়ে মারধর এবং লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। তার চিৎকারে ছেলে জাকির হোসেন ও স্ত্রী শরিফা বেগম এগিয়ে গেলে তাদেরকেও লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন ইজার উদ্দিনের লোকজন। পরে স্থানীয়রা খোকা মিয়াসহ তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ ডিসেম্বর দুপুরে খোকা মিয়া মারা যান। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। তবে তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহী শহরের রাজপাড়া থানার আলীগঞ্জ পূর্বপাড়া এলাকায় মো. শান্ত (২৬) নামে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক কর্মীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। পূর্ব বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত শান্ত পূর্বপাড়ার মো. হাসনাতের ছেলে এবং কাশিয়াডাঙ্গা থানা জামায়াতের শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্মী ছিলেন।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মালেক সবুজ বাংলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি- পূর্ববিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।
এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে গুরুতর আহত হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী ওসমান হাদি। ঢাকা মেডিকেলে জরুরি অস্ত্রোপচার শেষে তাকে বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
হতাহতের স্বজনদের দাবি, যে বুড়িগঙ্গার সমতল অঞ্চলে অবস্থিত শহর ঢাকা শহর থেকে খুন শব্দটি মুছে যাক, মানুষের মধ্যে ফিরে আসুক স্থিরতা আর সহমর্মিতা।
এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনের বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে।
এতে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। এই ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো। ডিসি মতিঝিল : ০১৩২০০৪০০৮০ ও ওসি পল্টন : ০১৩২০০৪০১৩২। সন্ধানদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং উপযুক্ত পুরস্কৃত করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেশজুড়ে একের পর এক সহিংসতা আর খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সাধারণ জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও সম্প্রতি রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে খুনের ঘটনা। একের পর এক নৃশংস ঘটনায় জনমনে বেড়েছে আতঙ্ক। রাত বাড়লেই যেন অপরাধীরা মেতে ওঠেন অপরাধের মহোৎসবে, এমন অবস্থার মধ্যেও প্রয়োজনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় বের হচ্ছেন নগরবাসী। বাইরে জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বললেও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহিংসতা বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা।
৪০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ ঢাকা শহর নানা অসংগতিতে তিলোত্তমা তকমাটি হারিয়েছে বহু আগেই। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, জনঘনত্বের এ শহর ক্রমশ আতঙ্কের নগরী হয়ে উঠছে। বিস্তৃত হচ্ছে পুরোনো আন্ডারওয়ার্ল্ড বাহিনী। খুন শব্দটি ভেসে বেড়াচ্ছে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শত্রুতা থেকে পূর্বকল্পিত আধিপত্য বিস্তারে একে অপরের জীবন কেড়ে নিচ্ছে নির্মমভাবে। যে খুনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনীতি, প্রেম, আর্থিক লেনদেন, পারিবারিক কলহ, দখল-চাঁদাবাজি, বিরোধীমত দমন ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ইস্যু। আর এতে বাবা-মা হারাচ্ছেন তার সন্তানকে, কখনো সন্তান হচ্ছে পিতৃ-মাতৃহারা।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৫ সলের জানুয়ারিতে দেশে খুন হয় ২৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০, এপ্রিলে গিয়ে তা বেড়ে দাড়ায় ৩৩৮ জনে। এছাড়া মে’তে খুন হন ৩৪১ জন, জুনে গিয়ে এ সূচক আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪ জনে। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এ ১০ মাসের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেল এক দশকের মধ্যে দেশে দৈনিক গড়ে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে চলতি বছর।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত সরকারের শাসনামলে ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছরে দেশে গড় খুন ছিল ৮ থেকে ১০ জনে। কিন্তু ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুনের সংখ্যা এসে ঠেকে ২৯১১টি। সে হিসাবে দেশে গড় দৈনিক খুনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।
দেশের সাধারণ জনগণ বলছেন, দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে মানুষ দিন দিন প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে। সেইসঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে অবনতি হচ্ছে রাজনৈতিক ও পারিবারিক সম্পর্কের। পাড়া-মহল্লাকেন্দ্রিক বাড়ছে আধিপত্যের লড়াই। এতে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি আর অপরাধের মাত্রা।
নগরবাসীরা জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে, রাত ১০টার পরই বাইরে চলাচলে বেশ ঝুঁকি থাকে। ছাড় পান না রিকশাচালকরাও, তাদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা-পয়সা নিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যান ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, দেশের পটপরিবর্তনে সবাই ভেবেছিল, অফরাধের মাত্রা কমে আসবে। কিন্তু বর্তমানে আমরা যা দেখছি, তা উদ্বেগজনক। অতীতের আধিপত্য বলয় থেকে বেরিয়ে আসলেও এখন নব্য ফ্যাসিবাদ লক্ষ্য করছি। ঐক্য না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে। মতবিরোধ থাকায় বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সহিংসতা-খুনোখুনি বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা। সমাজ থেকে অপরাধ দমনে অপরাধী যেই হোক, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা নির্বাচনের আগে ও পরে এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে। তিনি বলেন, অপরাধ দমনে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর পেছনে রাজনৈতিতক সদিচ্ছার বড় অভাব রয়েছে। এতে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দোদুল্যমানতা কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। অপরাধ বিবেচনায় ছাড়া পাচ্ছে অপরাধীরা।
তিনি আরও বলেন, আগে যে দুর্বল ছিল এখন শক্তিশালী হয়েছে, সে তো প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবেই। কাউকে হত্যা করলে বা কারও কোনোকিছু দখল করলে সেটা মামলা হতেও পারে, নাও পারে। মামলা হলে গ্রেপ্তার হতেও পারে, নাও পারে। এখনই অপরাধ করার “সময়”-এ সময়টাকে তারা কাজে লাগাচ্ছে। সুতরাং এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দলগুলোর ঐক্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের বিকল্প নেই। তা না হলে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী সবুজ বাংলাকে বলেন, দেশের জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর বিকেলে নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশজুড়ে বাড়ছে সহিংসতা-খুনোখুনি

আপডেট সময় : ০৯:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ২০১৬-২০২৪ সাল পর্যন্ত গড় খুন ছিল ৮-১০
  • ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুন হয়েছেন ২৯১১
  • যা গড়ে প্রতিদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার ১১ জন
  • হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন ব্যক্তির তথ্য চেয়েছে পুলিশ

‘অতীতের আধিপত্য বলয় থেকে বেরিয়ে আসলেও এখন নব্য ফ্যাসিবাদ লক্ষ্য করছি। সহিংসতা-খুনোখুনি বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা। অপরাধ দমনে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে’
– সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক, সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক, ঢাবি

‘জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে’
– শেখ মো. সাজ্জাদ আলী, ডিএমপি কমিশনার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট। এ ইস্যুতে ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ভোটের মাঠেও সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। তবে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আধিপত্য বিস্তারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদদে টার্গেট কিলিংয়ে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অনেকের ধারণা, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে দেশি-বিদেশি চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তার সুযোগে ক্রমেই বাড়ছে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। প্রেমঘটিত ঘটনা, পারিবারিক , জমিজমা, রাজনৈতিক বিরোধ, পূর্বশত্রুতার জেরে দেশজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে সহিংসতা-খুনোখুনি। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে প্রতিদিন গড় খুন ছিল ৮-১০ জন। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুন হয়েছেন ২৯১১ জন। যা সারা দেশে গড়ে প্রতিদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন ১১ জন। ফলে জাতী যখন নির্বাচনমুখী, ঠিক তখনই দেশজুড়ে বাড়ছে এদিকে রাজধানীর পল্টন এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা চালায় অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা। মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তদের একজন শনাক্ত হলেও তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা। অপরাধীরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন ব্যক্তির তথ্য দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হকের মতে, অতীতের আধিপত্য বলয় থেকে বেরিয়ে আসলেও এখন নব্য ফ্যাসিবাদ লক্ষ্য করছি। ঐক্য না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে। মতবিরোধ থাকায় বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সহিংসতা-খুনোখুনি বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা। সমাজ থেকে অপরাধ দমনে অপরাধী যেই হোক, তার দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা নির্বাচনের আগে ও পরে এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে। ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেছেন, দেশের জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ঠুটাপাখুরি এলাকায় প্রায় ১৪ একর জমি মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় আব্দুল আজিজ এবং নাসির উদ্দিনের লোকজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১৬ জন আহত হয়।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশরাফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয়পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে, গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১০টার দিকে শরীয়তপুরের সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের বালার বাজার এলাকায় জমি থেকে ইট ভাটার মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরা হলেন, হাকিম মৃধা ও তার ভাইয়ের ছেলে আবজাল মৃধা। অন্য পক্ষের আহতরা হলেন, মোস্তফা ব্যাপারী ও তার ছেলে নীরব ব্যাপারী।
এ ব্যাপারে পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম সবুজ বাংলাকে বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠিয়েছি। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, গত ১২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার দক্ষিণ মজুপুর এলাকায় ঘরে ঢুকে ছকিনা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত ছকিনা বেগম ওই এলাকার মৃত সফিক উল্লাহর স্ত্রী। নিহতের সন্তানরা প্রবাসে থাকেন। পুত্রবধূরা পামাপাশি রুমে বসবাস করে। কে বা কারা তাকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্বশত্রুতার কারণে ওই নারীকে হত্যা করা হতে পারে। তবে এটি ডাকাতিতে বাধা দেওয়ার কারণে হয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখাসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে, গত ১১ ডিসেম্বর দুপুরে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের শ্যামবাজার মাওলাবক্স চক্ষু হাসপাতালের সামনে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ভূঁইয়াকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত আব্দুর রহমান শ্যামবাজার কাঁচাবাজার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন।
সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, নয়ন নামের এক যুবক তাকে গুলি করে পালিয়ে গেছে। তবে ঘটনার তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।
এদিকে একই দিন রাত সোয়া ৭টার দিকে পুরান ঢাকার লালবাগ চৌরাস্তা মোড়ে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে মো. রিয়াদ নামের এক যুবক যুবক খুন হয়েছে। পথচারী মোহাম্মদ ফাহিমসহ স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিয়াদ লালবাগের স্থায়ী বাসিন্দা মো. সালামের ছেলে। বর্তমানে লালবাগ শহীদ নগরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। এক বছর বয়সী এক ছেলে আছে তার। হাসপাতালে নিহতের মা নাছিমা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয় রিয়াদ। এরপর খবর পাই ছেলে ঢামেক হাসপাতালে। ছুটে এসে ছেলেকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।
এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে লালবাগের শহীদ নগর ২ নম্বর গেট এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে মোহাম্মদ হোসেন নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত যুবক চুড়ি কারখানায় কাজ করতেন বলে জানা গেছে। সেদিন ঘটনাস্থল থেকে বিকেল ৪টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বোন মোছা. সুরাইয়া সবুজ বাংলাকে বলেন, আমার ভাই একটি চুড়ি কারখানায় কাজ করতেন। গত ৮ ডিসেম্বর আবির ও নীরব নামে দুই যুবকের সঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে তার ঝগড়া হয়। সেই ঘটনার জেরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে খবর পেয়ে আমরা তাকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ঝগড়ার পর ওই দিন রাতেই আমার ভাই আবিরের কাছে মাফ চেয়েছিল। তারপরও কেন তাকে হত্যা করা হলো, এ প্রশ্ন করে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুরাইয়া।
এ দুটি খুনের বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিন আলী দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, পুর্বশত্রুতার জের ধরে ঘটনা দুটি ঘটেছে। তবে ঘটনার তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।
এর আগে, গত ৮ ডিসেম্বর সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের নিজ বাসায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। পরদিন ৯ ডিসেম্বর দুপুরে নিহত লায়লা ফিরোজের স্বামী আ জ ম আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে খণ্ডকালীন গৃহকর্মী আয়েশাকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ১০ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চরকারা গ্রামে আয়েশার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বির দাদার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কক্ষ তল্লাশি করে গৃহকর্মী আয়েশা কর্তৃক চোরাইকৃত একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। পরে সিএমএম আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত গৃহকর্মী ও তার স্বামীকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর সকালে রংপুরের কাউনিয়ায় উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম খোপাতি গ্রামে ইজার উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক খোকা মিয়ার জমিতে মাটি কাটার চেষ্টা করেন। তখন খোকা মিয়া বাধা দিলে ইজার উদ্দিন ও তার লোকজন তাকে লাঠি দিয়ে মারধর এবং লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। তার চিৎকারে ছেলে জাকির হোসেন ও স্ত্রী শরিফা বেগম এগিয়ে গেলে তাদেরকেও লাঠি ও লোহার রড দিয়ে মারধর করেন ইজার উদ্দিনের লোকজন। পরে স্থানীয়রা খোকা মিয়াসহ তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ ডিসেম্বর দুপুরে খোকা মিয়া মারা যান। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে। তবে তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহী শহরের রাজপাড়া থানার আলীগঞ্জ পূর্বপাড়া এলাকায় মো. শান্ত (২৬) নামে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের এক কর্মীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। পূর্ব বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত শান্ত পূর্বপাড়ার মো. হাসনাতের ছেলে এবং কাশিয়াডাঙ্গা থানা জামায়াতের শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্মী ছিলেন।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মালেক সবুজ বাংলাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি- পূর্ববিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।
এদিকে গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন থানাধীন বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে গুরুতর আহত হন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী ওসমান হাদি। ঢাকা মেডিকেলে জরুরি অস্ত্রোপচার শেষে তাকে বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।
হতাহতের স্বজনদের দাবি, যে বুড়িগঙ্গার সমতল অঞ্চলে অবস্থিত শহর ঢাকা শহর থেকে খুন শব্দটি মুছে যাক, মানুষের মধ্যে ফিরে আসুক স্থিরতা আর সহমর্মিতা।
এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধ জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পল্টনের বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে।
এতে আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। এই ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো। ডিসি মতিঝিল : ০১৩২০০৪০০৮০ ও ওসি পল্টন : ০১৩২০০৪০১৩২। সন্ধানদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং উপযুক্ত পুরস্কৃত করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেশজুড়ে একের পর এক সহিংসতা আর খুনোখুনি বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে সাধারণ জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যেও সম্প্রতি রাজধানীতে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে খুনের ঘটনা। একের পর এক নৃশংস ঘটনায় জনমনে বেড়েছে আতঙ্ক। রাত বাড়লেই যেন অপরাধীরা মেতে ওঠেন অপরাধের মহোৎসবে, এমন অবস্থার মধ্যেও প্রয়োজনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তায় বের হচ্ছেন নগরবাসী। বাইরে জনগণের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বললেও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহিংসতা বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা।
৪০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ ঢাকা শহর নানা অসংগতিতে তিলোত্তমা তকমাটি হারিয়েছে বহু আগেই। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, জনঘনত্বের এ শহর ক্রমশ আতঙ্কের নগরী হয়ে উঠছে। বিস্তৃত হচ্ছে পুরোনো আন্ডারওয়ার্ল্ড বাহিনী। খুন শব্দটি ভেসে বেড়াচ্ছে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শত্রুতা থেকে পূর্বকল্পিত আধিপত্য বিস্তারে একে অপরের জীবন কেড়ে নিচ্ছে নির্মমভাবে। যে খুনগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনীতি, প্রেম, আর্থিক লেনদেন, পারিবারিক কলহ, দখল-চাঁদাবাজি, বিরোধীমত দমন ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা ইস্যু। আর এতে বাবা-মা হারাচ্ছেন তার সন্তানকে, কখনো সন্তান হচ্ছে পিতৃ-মাতৃহারা।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৫ সলের জানুয়ারিতে দেশে খুন হয় ২৯৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩০০, এপ্রিলে গিয়ে তা বেড়ে দাড়ায় ৩৩৮ জনে। এছাড়া মে’তে খুন হন ৩৪১ জন, জুনে গিয়ে এ সূচক আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৪ জনে। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এ ১০ মাসের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, গেল এক দশকের মধ্যে দেশে দৈনিক গড়ে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড হয়েছে চলতি বছর।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিগত সরকারের শাসনামলে ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বছরে দেশে গড় খুন ছিল ৮ থেকে ১০ জনে। কিন্তু ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুনের সংখ্যা এসে ঠেকে ২৯১১টি। সে হিসাবে দেশে গড় দৈনিক খুনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।
দেশের সাধারণ জনগণ বলছেন, দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে মানুষ দিন দিন প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে। সেইসঙ্গে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে অবনতি হচ্ছে রাজনৈতিক ও পারিবারিক সম্পর্কের। পাড়া-মহল্লাকেন্দ্রিক বাড়ছে আধিপত্যের লড়াই। এতে বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি আর অপরাধের মাত্রা।
নগরবাসীরা জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ে, রাত ১০টার পরই বাইরে চলাচলে বেশ ঝুঁকি থাকে। ছাড় পান না রিকশাচালকরাও, তাদের কাছ থেকে মোবাইল, টাকা-পয়সা নিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ তাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যান ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক দৈনিক সবুজ বাংলাকে বলেন, দেশের পটপরিবর্তনে সবাই ভেবেছিল, অফরাধের মাত্রা কমে আসবে। কিন্তু বর্তমানে আমরা যা দেখছি, তা উদ্বেগজনক। অতীতের আধিপত্য বলয় থেকে বেরিয়ে আসলেও এখন নব্য ফ্যাসিবাদ লক্ষ্য করছি। ঐক্য না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সে লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে। মতবিরোধ থাকায় বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সহিংসতা-খুনোখুনি বাড়ার মূল কারণ দুর্বল আইনের শাসন ও বিচারহীনতা। সমাজ থেকে অপরাধ দমনে অপরাধী যেই হোক, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা নির্বাচনের আগে ও পরে এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে। তিনি বলেন, অপরাধ দমনে কার্যকর ভুমিকা পালন করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর পেছনে রাজনৈতিতক সদিচ্ছার বড় অভাব রয়েছে। এতে চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দোদুল্যমানতা কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। অপরাধ বিবেচনায় ছাড়া পাচ্ছে অপরাধীরা।
তিনি আরও বলেন, আগে যে দুর্বল ছিল এখন শক্তিশালী হয়েছে, সে তো প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবেই। কাউকে হত্যা করলে বা কারও কোনোকিছু দখল করলে সেটা মামলা হতেও পারে, নাও পারে। মামলা হলে গ্রেপ্তার হতেও পারে, নাও পারে। এখনই অপরাধ করার “সময়”-এ সময়টাকে তারা কাজে লাগাচ্ছে। সুতরাং এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে দলগুলোর ঐক্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের বিকল্প নেই। তা না হলে নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী সবুজ বাংলাকে বলেন, দেশের জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। অপরাধী শনাক্তকরণ ও গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর বিকেলে নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।