নীরব জলরাশির বুকে বছরের পর বছর একটি নৌকাতেই জীবন কাটিয়েছেন জামাত আলী (৬৫) ও তার স্ত্রী সখিনা বেগম। শীত, রোদ, ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে বার্ধক্যের দোরগোড়ায় এসে স্থায়ী আশ্রয়ের স্বপ্ন ছিল তাদের কাছে দূরপ্রসারী।
তাদের করুণ জীবনচিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মানবিক সংগঠন হাউজ অফ মান্নান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং ‘প্রচেষ্টা সবার জন্য’ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা সাহবাজ খান সানি তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় তাদের জন্য একটি টেকসই বসতঘর। ঘরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী।
নিজস্ব জমি না থাকলেও স্থানীয় দিনমজুর আলম শেখ মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নিজের বাড়ির আঙিনায় বৃদ্ধ দম্পতির জন্য জায়গা করে দেন। এলাকাবাসী তার এই সহমর্মিতাকে সমাজে মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ বলে অভিহিত করেছেন।
নতুন ঘরের বারান্দায় বসে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জামাত আলী বলেন, “জীবনের শেষ বয়সে নিজের একটা ঘর হবে, তা কখনো ভাবিনি। নৌকার কষ্টের দিনগুলো মনে পড়লে আজও শরীর কেঁপে ওঠে। আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন।”
সখিনা বেগম যোগ করেন, “শীত আর বৃষ্টির রাতগুলো ছিল খুব ভয়ংকর। আজ মনে হচ্ছে আমরা আবার মানুষ হিসেবে থাকার জায়গা পেয়েছি। যারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন।”
সাহবাজ খান সানি বলেন, “গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ না হলে হয়তো এই দম্পতির কষ্ট আমাদের অজানাই থেকে যেত। স্থায়ী আশ্রয় মানুষের মৌলিক অধিকার। সমাজের সবাই একটু করে এগিয়ে এলে এমন ভাসমান জীবন আর কাউকে কাটাতে হবে না। গণমাধ্যমকর্মী, স্থানীয় মানুষ ও আমাদের সংগঠনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মানবিক উদ্যোগ সফল হয়েছে।”
নৌকার অনিশ্চিত জীবন পেছনে ফেলে, আজ একটি ছোট্ট ঘর ফিরিয়ে দিয়েছে জামাত–সখিনা দম্পতির জীবনে নিরাপত্তা, মর্যাদা ও শান্তি। এটি আবারও প্রমাণ করে যে—মানবিক সাংবাদিকতা ও সামাজিক সহানুভূতি একত্রে কাজ করলে অসহায় মানুষের জীবন বদলে যেতে পারে।
এমআর/সবা
























