০৭:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নড়াইলে আমনের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে শঙ্কা

নড়াইলে আমন ধানের ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। তবে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকেরা উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৪২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ২৬২ হেক্টর। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ জমির ধান কর্তন হয়েছে।

সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে আমন ধানের খেত সবুজ থেকে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। কৃষকরাও ফসল ঘরে তুলতে দিন-রাত এক করে কাজ করছে। কেউ ধান কাটছে, কেউ আঁটি বাঁধছে। কেউ কেউ সেই ধান মাথায় নিয়ে ক্ষেত থেকে বাড়ি যাচ্ছে। আবার কেউ করছে মাড়াইয়ের কাজ।

নড়াইলের চাচঁড়া এলাকার আমন চাষি কাইদুল বিশ্বাস বলেন, “ধানের ফলন একেবারে খারাপ না। ফলন ভালোই। কিন্তু সার, ওষুধ দিয়ে যে খরচ পড়ে তাতে আমাদের মোটেই লাভ থাকে না। খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। দাম বাড়ানো উচিত। দাম না বাড়ালে কৃষক বাঁচবে না।”

বাহিরডাঙ্গা গ্রামের অসিম বিশ্বাস জানান, “তারা যে দাম পাচ্ছে সে দামের তুলনায় যে খরচ হয় সে খরচের পয়সা তাদের বাঁচে না। এ বছর পোকার (কারেন্ট পোকা) কারণে বিঘা প্রতি ধানের ফলনও কম হয়ছে। তারপর সার-মাটিতে যে খরচ তা চালান একটুও মেলে না। চাষি মানুষ, চাষ করতে হয়, তাই করে যাচ্ছেন।”

সিতারামপুর গ্রামের সবুজ সরদার বলেন, “সব কিছুর যে দাম তাতে ধানের দাম ১৫শ টাকার নিচে হলে কৃষকের লস। যেভাবে খরচ হয়, তাতে কৃষকের বেঁচে থাকা সম্ভব না। তারপরও নিজেদের জমি, চাষ না করে কি করবেন। না খেয়ে তো আর মরতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে লস হলেও চাষ করা লাগে।”

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা আগ্রহের সাথে রোপা আমন চাষ করেছে। তুলনামূলক রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তবে কৃষকদের একটি আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে ধানের দাম। প্রতিটা স্তরে যে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কৃষক যদি যথাযথ মূল্য পায় তাহলে নড়াইলসহ সারাদেশে রোপা আমনের আবাদ বাড়বে। একইসঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে কৃষক আরও আগ্রহী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।”

ধানের দাম কম হওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, “আমন ধানের দাম নিয়ে আমরা হতাশ নই। সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের ধানের বীজ,সার ওষুধ দিয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য দাম পায় সেক্ষেত্রে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ করবে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

নড়াইলে আমনের ফলন ভালো হলেও দাম নিয়ে শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৭:৩২:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩

নড়াইলে আমন ধানের ফলন ভালো হলেও ধানের দাম নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। তবে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকেরা উৎপাদন খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৪২ হাজার ৬৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ হাজার ২৬২ হেক্টর। ইতোমধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ জমির ধান কর্তন হয়েছে।

সরেজমিনে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে আমন ধানের খেত সবুজ থেকে সোনালী বর্ণ ধারণ করেছে। কৃষকরাও ফসল ঘরে তুলতে দিন-রাত এক করে কাজ করছে। কেউ ধান কাটছে, কেউ আঁটি বাঁধছে। কেউ কেউ সেই ধান মাথায় নিয়ে ক্ষেত থেকে বাড়ি যাচ্ছে। আবার কেউ করছে মাড়াইয়ের কাজ।

নড়াইলের চাচঁড়া এলাকার আমন চাষি কাইদুল বিশ্বাস বলেন, “ধানের ফলন একেবারে খারাপ না। ফলন ভালোই। কিন্তু সার, ওষুধ দিয়ে যে খরচ পড়ে তাতে আমাদের মোটেই লাভ থাকে না। খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। দাম বাড়ানো উচিত। দাম না বাড়ালে কৃষক বাঁচবে না।”

বাহিরডাঙ্গা গ্রামের অসিম বিশ্বাস জানান, “তারা যে দাম পাচ্ছে সে দামের তুলনায় যে খরচ হয় সে খরচের পয়সা তাদের বাঁচে না। এ বছর পোকার (কারেন্ট পোকা) কারণে বিঘা প্রতি ধানের ফলনও কম হয়ছে। তারপর সার-মাটিতে যে খরচ তা চালান একটুও মেলে না। চাষি মানুষ, চাষ করতে হয়, তাই করে যাচ্ছেন।”

সিতারামপুর গ্রামের সবুজ সরদার বলেন, “সব কিছুর যে দাম তাতে ধানের দাম ১৫শ টাকার নিচে হলে কৃষকের লস। যেভাবে খরচ হয়, তাতে কৃষকের বেঁচে থাকা সম্ভব না। তারপরও নিজেদের জমি, চাষ না করে কি করবেন। না খেয়ে তো আর মরতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে লস হলেও চাষ করা লাগে।”

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. রোকনুজ্জামান বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা আগ্রহের সাথে রোপা আমন চাষ করেছে। তুলনামূলক রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তবে কৃষকদের একটি আশঙ্কার জায়গা হচ্ছে ধানের দাম। প্রতিটা স্তরে যে উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং কৃষক যদি যথাযথ মূল্য পায় তাহলে নড়াইলসহ সারাদেশে রোপা আমনের আবাদ বাড়বে। একইসঙ্গে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে কৃষক আরও আগ্রহী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।”

ধানের দাম কম হওয়ার বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, “আমন ধানের দাম নিয়ে আমরা হতাশ নই। সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষকদের ধানের বীজ,সার ওষুধ দিয়েছে। এ ছাড়াও কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য দাম পায় সেক্ষেত্রে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ করবে।”