-
বর্তমান এমপিরা বাদ পড়লেও চমক থাকছে কম
-
মনোনয়ন চাননি অনেক কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি
-
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ কালকের মধ্যে
সাইফ আশরাফ
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভার শেষ দিন আজ শনিবার। এ দিন চূড়ান্ত হবে দুই বিভাগের প্রার্থী তালিকা। দলীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, এবার বাদ পড়ছেন বর্তমান এমপিদের অনেকেই। তবে দলীয় সূত্র বলছে চমকের তালিকা হবে ছোটো। মনোনয়ন বোর্ডে গুরত্ব দেওয়া হচ্ছে জনসম্পৃক্ততাসহ পাঁচটি বিষয়কে।
গত শনিবার শুরু হয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন উৎসব। এবার দলটির মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি। প্রতি আসনের বিপরীতে ফরম নিয়েছেন গড়ে ১১টি। তালিকায় আছেন চলচ্চিত্র, ক্রীড়াঙ্গন, চিকিৎসক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা, আমলাসহ বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। ফলে স্বাভাবিক আলোচনায় আছে কাদের হাতে উঠবে নৌকার বৈঠা, দলের ত্যাগী নেতৃত্ব নাকি চমক হিসেবে থাকবেন বিভিন্ন পেশাজীবী অঙ্গনের ব্যক্তিরা।
গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৬ বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ শনিবার বাকিগুলোর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। আগামীকাল রোববারের মধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী তালিকা এক সঙ্গে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, কৌশলগত কারণে কোন কোন বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে, তা আর প্রকাশ করা হচ্ছে না। এক সঙ্গে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। দুটো দিন অপেক্ষা করুন।
এ সময় বর্তমান এমপি বাদের বিষয়ে তিনি বলেন, আরও চারটি বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। নতুন অনেকে এসেছেন, কিছু বাদও পড়েছেন। তবে বিজয়ী হতে সমর্থ প্রার্থী আমরা বাদ দেইনি। যারা বিজয়ী হতে পারবে না, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন; তারা বাদ পড়েছেন। নারী-পুরুষ সব প্রার্থীর ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য হয়েছে।
দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও কেন ঘোষণায় দেরি হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা মনোনয়নের ব্যাপারটা সুনির্দিষ্ট করে এখনও বলছি না। কারণ, এর মধ্যে আমরা যেসব প্রার্থী দিয়েছি, সে সব মনোনয়নে ভুলত্রুটিও থাকতে পারে। সেটাও সংশোধনের একটা সুযোগ রেখেছি। এ কারণে আমরা ঠিক করেছি ভিন্নভাবে, অর্থাৎ জেলাওয়ারি বা বিভাগওয়ারি প্রার্থিতা ঘোষণা করব না। এক সঙ্গে ৩০০ আসনের প্রার্থিতা ঘোষণা করতে চাই।
দলীয় সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যার মধ্যে আছে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দক্ষ, উচ্চ শিক্ষিত ও করোনাকালীন ভূমিকা, নেতাকর্মীদের সম্পর্ক। এ কারণে বাদ পড়ছেন বর্তমান অনেক এমপি। তবে বর্তমান এমপিদের বাদের তালিকা হবে ছোটো। সে ক্ষেত্রে বাদ পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনূর্ধ্ব ৪০ জন এমপির। এ তালিকায় আছেন পুরুষদের পাশাপাশি নারী এমপিরাও। এ ছাড়া বয়সের ভারে ন্যূব্জ নেতাদের অনেকেই বাদ পড়তে পারেন এবার।
অপর একটি সূত্র বলছে, বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এবার মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই দলীয় মনোনয়নে চমক থাকলেও তা অল্প কয়েকটি আসনে থাকবে। তারকাদের মধ্যে নতুন করে সাকিব আল হাসানকে ঢাকা-১০ আসনে মনোনয়ন অনেকটা চূড়ান্ত। এ ছাড়া পূর্বের এমপিদের মধ্যে আসাদুজ্জামান নূর, মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাইমুর রহমান দূর্জয়, মমতাজসহ বাকিরা অপরিবর্তিত থাকছেন।
তবে এবার মনোনয়ন নেননি আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, বেগম আখতার জাহান, তারিক সুজাত, মনোনয়নপত্র তোলেননি। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম মনোনয়ন নেননি।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক গতকাল শুক্রবার বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কত নায়ক-নায়িকা এমপি। তারা তো সরাসরি দল করে না। ভারতের মতো বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশেও আছে। আর সাকিব আল হাসান রাজনীতি করবে, জনগণের সেবা করবে। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে সে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন সাকিব। আগে থেকেই সেখানে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন। এর পর আধাঘণ্টা সময় কাটিয়ে বের হয়ে যান সাকিব। এই বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগ কিংবা সাকিব আল হাসানের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।




















