০১:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাবুলের ভ্রাম্যমাণ অয়েল মিলে খাঁটি সরিষার তেলের গল্প

বড় ইঞ্জিন ভ্যানের উপর বসানো হয়েছে যান্ত্রিক ঘানি। রাস্তার পাশে ভ্যান দাড় করিয়ে প্রকাশ্যে সরিষা থেকে তেল বের করা হচ্ছে। দু’একজন উৎসুক পথচারি দেখছেন। কিনছেনও কেউ কেউ। রিকসা চালক আবুল হোসেন চলতি রিকসা থামিয়ে সরিষার তেল কিনলেন আধা লিটার। বললেন খাঁটি তেল দেখে কিনলাম। আবুল হোসেনের মত অনেকেই কিনছেন সরিষার তেল। যশোর শহরের আর এন রোডে বাবুল হাসানকে যান্ত্রিক ঘানিতে সরিষা ভাঙ্গাতে দেখা যায়। তিনি সবার সামনে ঘানিতে সরিষা ঢালছেন, চোখের সামনে তা থেকে তেল বের হচ্ছে। এই তেলই দিনভর তিনি খরিদ্দারের কাছে বিক্রি করছেন। খরিদ্দার নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছেন এতে অন্তত খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যাচ্ছে। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দেখা গেল স্বল্প আয়ের, মাঝারি আয়ের অনেকেই চলার পথে বাবুলের ভ্রাম্যমাণ অয়েল মিল থেকে খাঁটি সরিষার তেল সংগ্রহ করছেন।

অফিস ফেরত আরতি রাণী, দোকানি শফিয়ার রহমান, রিকসাযাত্রী সালমানসহ বেশ কয়েকজন বললেন, এখন শীত মৌসুম। সকালে একটু আলুভর্তা বা কিছু ভাজি খাওয়ার জন্যে খাঁটি সরিষার তেল দরকার হয়। চোখের সামনে দেখে—শুনে—বুঝে এই সরিষার তেল কিনছি। তাছাড়া দামও তেমন বেশি না, লিটার ২২০ টাকা।

এ বিষয়ে ভ্রাম্যমান অয়েল মিলের মালিক বাবুল হাসান জানান, তিনি ঢাকা, খুলনা ও মেহেরপুরে এই পদ্ধতি দেখেছেন। যশোরে এধরনের ঘানি তার চোখে কোথাও পড়েনি। মানুষ সরিষার তেল কিনতে খাঁটি—অখাটি নিয়ে বেশ বিড়াম্বনায় পড়ে। এ সব থেকে মুক্তি দিতে এবং নিজের ব্যবসাকে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করতে এই পদ্ধতিতে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। আমি সরাসরি সরিষা ভাঙ্গাই সবার সামনে, তাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি করি, ভেজাল মুক্ত রাখি, দাম বেশি নিইনা।

বাবুল জানান, তিনি শহরের পিটিআই মোড় এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরে নানান ছোট ব্যবসা করেছেন। গত ৬ মাস ধরে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ভ্রাম্যমাণভাবে সরিষার তেল বিক্রি করছেন। বর্তমানে ৩ হাজার ২শ টাকা মণ দরে সরিষা কিনছেন। মণ প্রতি ১৪ কেজির বেশি তেল পান। ২২০ টাকা লিটার অথবা ২৪০ টাকা কেজি দরে এ তেল বিক্রি করেন।

নসিমন ও মেশিণসহ তার আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। মেশিনের সাথে সংযুক্ত স্যালো ইঞ্জিনটিতে ঘণ্টায় প্রায় এক লিটার ডিজেল লাগে। তাতে ঘণ্টায় এক থেকে দেড় মণ সরিষা ভাঙ্গানো যায়। সব খরচ বাদে দিনে তার ৫ থেকে ৭শ টাকা লাভ থাকে। তবে তার শ্রম, ভ্যানভাড়া, মেশিনও যন্ত্রপাতির ভাড়া ধরলে লাভের পরিমাণ কম। তবে মানুষ ধীরে ধীরে খাঁটি সরিষার তেলে বিশ্বাসী হলে তারও সুদিন ফিরবে বলে তিনি মনে করেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

বাবুলের ভ্রাম্যমাণ অয়েল মিলে খাঁটি সরিষার তেলের গল্প

আপডেট সময় : ০৪:২১:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বড় ইঞ্জিন ভ্যানের উপর বসানো হয়েছে যান্ত্রিক ঘানি। রাস্তার পাশে ভ্যান দাড় করিয়ে প্রকাশ্যে সরিষা থেকে তেল বের করা হচ্ছে। দু’একজন উৎসুক পথচারি দেখছেন। কিনছেনও কেউ কেউ। রিকসা চালক আবুল হোসেন চলতি রিকসা থামিয়ে সরিষার তেল কিনলেন আধা লিটার। বললেন খাঁটি তেল দেখে কিনলাম। আবুল হোসেনের মত অনেকেই কিনছেন সরিষার তেল। যশোর শহরের আর এন রোডে বাবুল হাসানকে যান্ত্রিক ঘানিতে সরিষা ভাঙ্গাতে দেখা যায়। তিনি সবার সামনে ঘানিতে সরিষা ঢালছেন, চোখের সামনে তা থেকে তেল বের হচ্ছে। এই তেলই দিনভর তিনি খরিদ্দারের কাছে বিক্রি করছেন। খরিদ্দার নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছেন এতে অন্তত খাঁটি সরিষার তেল পাওয়া যাচ্ছে। আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে দেখা গেল স্বল্প আয়ের, মাঝারি আয়ের অনেকেই চলার পথে বাবুলের ভ্রাম্যমাণ অয়েল মিল থেকে খাঁটি সরিষার তেল সংগ্রহ করছেন।

অফিস ফেরত আরতি রাণী, দোকানি শফিয়ার রহমান, রিকসাযাত্রী সালমানসহ বেশ কয়েকজন বললেন, এখন শীত মৌসুম। সকালে একটু আলুভর্তা বা কিছু ভাজি খাওয়ার জন্যে খাঁটি সরিষার তেল দরকার হয়। চোখের সামনে দেখে—শুনে—বুঝে এই সরিষার তেল কিনছি। তাছাড়া দামও তেমন বেশি না, লিটার ২২০ টাকা।

এ বিষয়ে ভ্রাম্যমান অয়েল মিলের মালিক বাবুল হাসান জানান, তিনি ঢাকা, খুলনা ও মেহেরপুরে এই পদ্ধতি দেখেছেন। যশোরে এধরনের ঘানি তার চোখে কোথাও পড়েনি। মানুষ সরিষার তেল কিনতে খাঁটি—অখাটি নিয়ে বেশ বিড়াম্বনায় পড়ে। এ সব থেকে মুক্তি দিতে এবং নিজের ব্যবসাকে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করতে এই পদ্ধতিতে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। আমি সরাসরি সরিষা ভাঙ্গাই সবার সামনে, তাদের বিশ্বাস বৃদ্ধি করি, ভেজাল মুক্ত রাখি, দাম বেশি নিইনা।

বাবুল জানান, তিনি শহরের পিটিআই মোড় এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলেন। দেশে ফিরে নানান ছোট ব্যবসা করেছেন। গত ৬ মাস ধরে শহরের বিভিন্ন মোড়ে ভ্রাম্যমাণভাবে সরিষার তেল বিক্রি করছেন। বর্তমানে ৩ হাজার ২শ টাকা মণ দরে সরিষা কিনছেন। মণ প্রতি ১৪ কেজির বেশি তেল পান। ২২০ টাকা লিটার অথবা ২৪০ টাকা কেজি দরে এ তেল বিক্রি করেন।

নসিমন ও মেশিণসহ তার আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। মেশিনের সাথে সংযুক্ত স্যালো ইঞ্জিনটিতে ঘণ্টায় প্রায় এক লিটার ডিজেল লাগে। তাতে ঘণ্টায় এক থেকে দেড় মণ সরিষা ভাঙ্গানো যায়। সব খরচ বাদে দিনে তার ৫ থেকে ৭শ টাকা লাভ থাকে। তবে তার শ্রম, ভ্যানভাড়া, মেশিনও যন্ত্রপাতির ভাড়া ধরলে লাভের পরিমাণ কম। তবে মানুষ ধীরে ধীরে খাঁটি সরিষার তেলে বিশ্বাসী হলে তারও সুদিন ফিরবে বলে তিনি মনে করেন।