বন্ধ হওয়ার চার দশকেও চালু হয়নি ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর। অবহেলা আর অযত্নে বর্তমানে বিমানবন্দরটি গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। লোকসানের কারণে
১৯৭৯ সালের দিকে এখানে বিমান ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রী কম হওয়ার অযুহাত দেখিয়ে ১৯৮০ সালে বিমানবন্দরটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর অনেক উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে কাজের কাজ হয়নি। স্থানীয়দের দাবি,আগামীর সমৃদ্ধ ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম সারথি হতে পারে এ বিমানবন্দরটি। বড় ভূমিকা রাখতে পারে জেলায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতেও ।
জানা যায়, ১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমিতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সরকারি ও সামরিক কাজে ব্যবহার করতে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। জেলা শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের মাদারগঞ্জ এলাকায় এর অবস্থান। এর প্রধান রানওয়ে তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৭ সালে বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সংস্কার করা হয়। মাত্র বছর দুয়েক বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালিত হলেও আগ্রহের অভাব এবং যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় কার্যক্রম থেমে যায়। এরপর ১৯৮০ সালে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সেই তখন থেকে পরিত্যক্ত ও উন্মুক্ত অবস্থায় পরে আছে বিমানবন্দরটি। স্থানীয়রা বিমানবন্দরের জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এছাড়াও বিমানবন্দরে রানওয়েটি ব্যবহার হয় কৃষকদের চাতাল হিসেবেও।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিত্যক্ত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটির অবকাঠামো পরিদর্শন করেছিলেন সরকারের সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন বর্তমান সরকারের রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন। তারা দুইজনই ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করার জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা আশ্বাস দেন। কিন্তু সেই আশ্বাসের দীর্ঘদিন অতিবাবা হলেও বিমানবন্দরটি চালুর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা দীপেন রায় বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশেও ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর সচল ছিল। লোকসানের অজুহাতে বিমানবন্দরটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে স্থানীয় মানুষজন বিমানবন্দরের জমিগুলো লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর এখন গোচারণ ভূমিতে
পরিণত হয়েছে।
সাংস্কৃতিক কর্মী গৌতম দাস বলেন, পার্শ্ববর্তী সৈয়দপুর বিমানবন্দর চালু হওয়ার পর থেকে দৈনিক আমাদের
জেলাসহ আশপাশের জেলার মানুষরা বিমানে যাতায়াত করছে। অথচ সৈয়দপুর বিমানবন্দরের চেয়ে আমাদের ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে অনেক বিশাল। আমরা চাই অবশ্যই সরকার ঠাকুরগাঁও বিমাববন্দর চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রেজু বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলাকে একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল বললেও সরকার বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। কিন্তু এখানকার মানুষের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে বিমানবন্দরটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আমাদের দাবী খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু করা হোক।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট অরুনাংশু দত্ত টিটো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে অনেক বড় বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে এবং অনেকগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। ঠিক তেমনি এই সরকারের আমলে ঠাকুরগাঁও জেলা ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে; ইতিমধ্যে ঠাকুরগাঁও বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি অচিরেই ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করার জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এটি পূনরায় চালু করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দরটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের উপকার হবে।


























