০১:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭২ বছর পর রানীকে নিয়ে রাজ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে দরবারে রাজা

দিনাজপুরের সর্বশেষ রাজা জগদীশ চন্দ্র রায় বাহাদুর ১৯৫১ সালে স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে রাজা শূণ্য দিনাজপুর। তার রেখে যাওয়া রাজবাড়ীসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থাপনা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এবার সেই জরাজীর্ণ রাজ প্রাসাদ থেকে রাণীকে সাথে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে আসছেন রাজা। দেখে চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এমন দৃশ্যের দেখা মিললো দিনাজপুরের রাজবাড়ীতে। তবে তিনি প্রাচীন বাংলার রাজা নন। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দিনাজপুরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতীকি রাজা রানী চরিত্রে দিনব্যাপী উৎসবে চলে এই আয়োজন।
শনিবার(২৩ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী শহরের রাজবাড়ীর দরবার হলে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক শিল্পীরা অংশ নেন। গান, নাচ, কবিতা আবৃতিসহ দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজন। নবান্ন উৎসবে ফুটিয়ে তোলা হয় দিনাজপুরের রাজা মহারাজাদের জীবন কাহিনী।
প্রতীকি চরিত্রে রাজা জগদীশ চন্দ্র রায় বাহাদুরের ভূমিকায় ছিলেন বিধান চন্দ্র দত্ত ও রানীর ভূমিকায় ছিলেন মাসুদা বেগম। তারা রাজবাড়ীর দরবার হলে মঞ্চে বসে শিল্পীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করেন তারা।
ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীতে এমন আয়োজনে খুশি স্থানীয়রা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসা শেষ ধ্বংসাবশেষটুকু রক্ষা করার দাবি তাদের।
শহরের রাজবাড়ী সবজিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ভৌমিক দাস বলেন, এক সময় রাজবাড়ীতে দূর দুরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী দেখার জন্য আসত। পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আমাদের এই রাজবাড়ীর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ধীরে ধীরে এখানকার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। লোকজন এসব দেখার পর থেকে আসতে চায় না। আমরা চাই রাজবাড়ী এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখন সংস্কার ও সংরক্ষণ করা জরুরী।
রাজবাড়ী হীরা বাগান এলাকার বাসিন্দা সুশীল অধিকারী বলেন, এরকম  নবান্ন উৎসব আগে দেখা যায়নি। শহরের মধ্যে গ্রামীন আমেজে নবান্ন উৎসব আয়োজন করায় আমরা খুব খুশি। রাজবাড়ীতে এমন পরিবেশে আবারও এ ধরনের আয়োজন করা উচিৎ। এতে করে এক দিকে যেমন আমাদের বাঙ্গালী ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব টিকে থাকবে অপর দিকে রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষটুকুও সংরক্ষণ করা যাবে।
নবান্ন উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য ও রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলিত জোটের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ বলেন, দুটি বিষয় চিন্তা করে আজকের এই আয়োজন। আমরা যত আধুনিক হচ্ছি, বাঙ্গালী সংস্কৃতি থেকে আমরা ততই বেরিয়ে আসছি। কোলাহল মুক্ত পরিবেশে এই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করায় এখানে অনেকেই শান্তিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারছে। আর এর মাধ্যমে আমরা সবার কাছে একটা মেসেজ দিচ্ছি। আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় রাজবাড়ী সংরক্ষণ করা জরুরী।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বলেন, আমাদের স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে আজকের এই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিলো। এখানে রাজা ও রানীর চরিত্রের মাধম্যে তাদের জীবন কথা তুলে ধরা হয়েছে। সরার কাছে এই রাজবাড়ী রক্ষার বার্তা দেয়া হয়েছে। সবাই এখানে এসে নবান্ন উৎসবটি উপভোগ করেছে। আগামীতেও  এধরনের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
দিনাজপুরের সর্বত্রই রাজা মহারাজাদের তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছ। এসব স্থাপনা ধ্বংসের প্রায় দ্বারপ্রান্তে। এসব স্থাপনা দ্রæতই সংস্কার ও সংরক্ষণ করার দাবি স্থানীয়দের।

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় গুড়িয়ে দেয়া হয় দু’টি প্রতিষ্ঠান, একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

৭২ বছর পর রানীকে নিয়ে রাজ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে দরবারে রাজা

আপডেট সময় : ০৭:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩

দিনাজপুরের সর্বশেষ রাজা জগদীশ চন্দ্র রায় বাহাদুর ১৯৫১ সালে স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে রাজা শূণ্য দিনাজপুর। তার রেখে যাওয়া রাজবাড়ীসহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থাপনা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এবার সেই জরাজীর্ণ রাজ প্রাসাদ থেকে রাণীকে সাথে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে আসছেন রাজা। দেখে চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এমন দৃশ্যের দেখা মিললো দিনাজপুরের রাজবাড়ীতে। তবে তিনি প্রাচীন বাংলার রাজা নন। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দিনাজপুরের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে প্রতীকি রাজা রানী চরিত্রে দিনব্যাপী উৎসবে চলে এই আয়োজন।
শনিবার(২৩ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী শহরের রাজবাড়ীর দরবার হলে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক শিল্পীরা অংশ নেন। গান, নাচ, কবিতা আবৃতিসহ দিনব্যাপী চলে নানা আয়োজন। নবান্ন উৎসবে ফুটিয়ে তোলা হয় দিনাজপুরের রাজা মহারাজাদের জীবন কাহিনী।
প্রতীকি চরিত্রে রাজা জগদীশ চন্দ্র রায় বাহাদুরের ভূমিকায় ছিলেন বিধান চন্দ্র দত্ত ও রানীর ভূমিকায় ছিলেন মাসুদা বেগম। তারা রাজবাড়ীর দরবার হলে মঞ্চে বসে শিল্পীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করেন তারা।
ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীতে এমন আয়োজনে খুশি স্থানীয়রা। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসা শেষ ধ্বংসাবশেষটুকু রক্ষা করার দাবি তাদের।
শহরের রাজবাড়ী সবজিবাড়ী এলাকার বাসিন্দা ভৌমিক দাস বলেন, এক সময় রাজবাড়ীতে দূর দুরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী দেখার জন্য আসত। পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আমাদের এই রাজবাড়ীর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। ধীরে ধীরে এখানকার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। লোকজন এসব দেখার পর থেকে আসতে চায় না। আমরা চাই রাজবাড়ী এলাকার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখন সংস্কার ও সংরক্ষণ করা জরুরী।
রাজবাড়ী হীরা বাগান এলাকার বাসিন্দা সুশীল অধিকারী বলেন, এরকম  নবান্ন উৎসব আগে দেখা যায়নি। শহরের মধ্যে গ্রামীন আমেজে নবান্ন উৎসব আয়োজন করায় আমরা খুব খুশি। রাজবাড়ীতে এমন পরিবেশে আবারও এ ধরনের আয়োজন করা উচিৎ। এতে করে এক দিকে যেমন আমাদের বাঙ্গালী ঐতিহ্য নবান্ন উৎসব টিকে থাকবে অপর দিকে রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষটুকুও সংরক্ষণ করা যাবে।
নবান্ন উৎসব আয়োজক কমিটির সদস্য ও রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলিত জোটের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ ঘোষ বলেন, দুটি বিষয় চিন্তা করে আজকের এই আয়োজন। আমরা যত আধুনিক হচ্ছি, বাঙ্গালী সংস্কৃতি থেকে আমরা ততই বেরিয়ে আসছি। কোলাহল মুক্ত পরিবেশে এই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করায় এখানে অনেকেই শান্তিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে পারছে। আর এর মাধ্যমে আমরা সবার কাছে একটা মেসেজ দিচ্ছি। আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় রাজবাড়ী সংরক্ষণ করা জরুরী।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বলেন, আমাদের স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে আজকের এই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিলো। এখানে রাজা ও রানীর চরিত্রের মাধম্যে তাদের জীবন কথা তুলে ধরা হয়েছে। সরার কাছে এই রাজবাড়ী রক্ষার বার্তা দেয়া হয়েছে। সবাই এখানে এসে নবান্ন উৎসবটি উপভোগ করেছে। আগামীতেও  এধরনের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
দিনাজপুরের সর্বত্রই রাজা মহারাজাদের তৈরি বিভিন্ন স্থাপনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছ। এসব স্থাপনা ধ্বংসের প্রায় দ্বারপ্রান্তে। এসব স্থাপনা দ্রæতই সংস্কার ও সংরক্ষণ করার দাবি স্থানীয়দের।