১১:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বনিম্ন দরদাতা বাদ দিয়ে ২ কোটি টাকা বেশিতে কার্যাদেশ!

শর্তের জালে ফেলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গোপনে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়ায় এ কাজে বোর্ডের ২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। এতে শিক্ষা বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। শর্তপূরণ না করায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের জন্য গত নভেম্বর মাসে দরপত্র আহবান করে যশোর শিক্ষা বোর্ড। দরপত্র অনুযায়ী, ওএমআরসহ মূল উত্তরপত্র ৪৫ লাখ, এমসিকিউ ওএমআর শিট ৪৫ লাখ, অতিরিক্ত উত্তরপত্র ৩০ লাখ এবং ১০ লাখ ব্যবহারিক উত্তরপত্র সরবরাহের এই দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ২০ নভেম্বর।

দরপত্রে সর্বনিম্ন দর ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দাখিল করে এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস। এ ছাড়া এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস লিমিটেড ১৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা, বাংলাদেশ মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড ১৬ কোটি ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫’শ টাকা, প্রিন্ট মাস্টার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দর দাখিল করে।

বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস সর্বনিম্ন ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দর দাখিল করলেও কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস লিমিটেডকে। ওই প্রতিষ্ঠানটির দর ১৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা। যা এশিয়া বাংলাদেশের চেয়ে দুই কোটি ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বেশি।

অভিযোগ উঠেছে, দরপত্র আহবানের আগেই এলিট প্রিন্টিংয়ের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আঁতাত হয়েছে। এ কারণে প্রায় ১১ কোটি টাকার এই কাজের জন্য ১২ কোটি টাকার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতার শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এই শর্তের বেড়াজালে আটকে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এতে বোর্ডের দুই কোটির বেশি টাকা বাড়তি ব্যয় হলেও লাভবান হবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস’র সত্ত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, তিনি একাধিকবার বোর্ডে এই উত্তরপত্র সরবরাহের কাজ করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান একশ’ কোটি টাকার কাজে ১৫ কোটি টাকার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা চায়। সেখানে যশোর বোর্ড ১১ কোটি টাকার কাজে ১২ কোটি টাকার পূর্ব অভিজ্ঞতা চেয়েছে। যা সন্দেহজনক। এই অজুহাতে তাকে বাদ দিয়ে দুই কোটি টাকার বেশি বাড়তি ব্যয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দিয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গোপন আঁতাত করে এই কাজটি করেছেন। এতে তারা লাভবান হলেও বোর্ডের ক্ষতি হবে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবীব দাবি করেছেন, ‘পিপিআর’ মেনে এই কাজে ১২ কোটি টাকার একক কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। দরপত্রের শর্ত পূরণ না করায় মূল্যায়ন কমিটি অন্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত।

বোর্ড চেয়ারম্যান দাবি করেন, সর্বনিম্ন দরদাতা এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস কয়েকটি স্থানে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লা বোর্ড প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে। যেহেতু কাজটি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের হওয়ায় নির্ধারিত এটি সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একারণে বোর্ড কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

সর্বনিম্ন দরদাতা বাদ দিয়ে ২ কোটি টাকা বেশিতে কার্যাদেশ!

আপডেট সময় : ১২:৩৪:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

শর্তের জালে ফেলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গোপনে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়ায় এ কাজে বোর্ডের ২ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। এতে শিক্ষা বোর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হচ্ছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। শর্তপূরণ না করায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যাদেশ পায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের জন্য গত নভেম্বর মাসে দরপত্র আহবান করে যশোর শিক্ষা বোর্ড। দরপত্র অনুযায়ী, ওএমআরসহ মূল উত্তরপত্র ৪৫ লাখ, এমসিকিউ ওএমআর শিট ৪৫ লাখ, অতিরিক্ত উত্তরপত্র ৩০ লাখ এবং ১০ লাখ ব্যবহারিক উত্তরপত্র সরবরাহের এই দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ২০ নভেম্বর।

দরপত্রে সর্বনিম্ন দর ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দাখিল করে এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস। এ ছাড়া এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস লিমিটেড ১৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা, বাংলাদেশ মনোসপুল পেপার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড ১৬ কোটি ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫’শ টাকা, প্রিন্ট মাস্টার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড ১৬ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দর দাখিল করে।

বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস সর্বনিম্ন ১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা দর দাখিল করলেও কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস লিমিটেডকে। ওই প্রতিষ্ঠানটির দর ১৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৩ হাজার টাকা। যা এশিয়া বাংলাদেশের চেয়ে দুই কোটি ১২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বেশি।

অভিযোগ উঠেছে, দরপত্র আহবানের আগেই এলিট প্রিন্টিংয়ের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের আঁতাত হয়েছে। এ কারণে প্রায় ১১ কোটি টাকার এই কাজের জন্য ১২ কোটি টাকার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতার শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। এই শর্তের বেড়াজালে আটকে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দেয়া হয়েছে। এতে বোর্ডের দুই কোটির বেশি টাকা বাড়তি ব্যয় হলেও লাভবান হবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস’র সত্ত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, তিনি একাধিকবার বোর্ডে এই উত্তরপত্র সরবরাহের কাজ করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান একশ’ কোটি টাকার কাজে ১৫ কোটি টাকার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা চায়। সেখানে যশোর বোর্ড ১১ কোটি টাকার কাজে ১২ কোটি টাকার পূর্ব অভিজ্ঞতা চেয়েছে। যা সন্দেহজনক। এই অজুহাতে তাকে বাদ দিয়ে দুই কোটি টাকার বেশি বাড়তি ব্যয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দিয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গোপন আঁতাত করে এই কাজটি করেছেন। এতে তারা লাভবান হলেও বোর্ডের ক্ষতি হবে দুই কোটি ১২ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অভিযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবীব দাবি করেছেন, ‘পিপিআর’ মেনে এই কাজে ১২ কোটি টাকার একক কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। দরপত্রের শর্ত পূরণ না করায় মূল্যায়ন কমিটি অন্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্ত।

বোর্ড চেয়ারম্যান দাবি করেন, সর্বনিম্ন দরদাতা এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস কয়েকটি স্থানে কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লা বোর্ড প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে। যেহেতু কাজটি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহের হওয়ায় নির্ধারিত এটি সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। একারণে বোর্ড কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি।