ব্যালন ডি‘অর অনুষ্ঠানে প্রায়ই এমন চিত্র দেখা গেছে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো যখন আগেই বুঝতে বা জানতে পারেন ব্যালন ডি‘অর পাচ্ছেন না তখন তিনি অনুষ্ঠানে থাকেন না। সোমবার ইংল্যান্ডে ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ছিলেন না লিওনেল মেসি। এই পুরস্কারের অনুষ্ঠানে লন্ডনে আসেননি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। আগে থেকে কোনো কিছুই অনুমান করতে পারেননি। পুরস্কার তার হাতে উঠবে কি উঠবে সে ব্যাপারে মেসির কোনো ধারণাই ছিল না।
মেসির অনুপস্থিতিতে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলা আর্লিং হালান্ড। কিলিয়ান এমবাপে উপস্থিত থাকলে তার সেরা হওয়ার সম্ভাবনা কমই ছিল। কেননা হালান্ড ম্যানসিটির হয়ে যথেষ্ঠ আলো ছড়িয়েছিলেন। ফরে অনুষ্ঠান সঞ্চালক যে মুহূর্তে ফিফার বর্ষসেরা হিসেবে নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তখন ক্যামেরা খুঁজে নিয়েছে আর্লিং হালান্ড এবং তার বাবা আলফি হালান্ডকে। তখনই অনেকেই প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটির গোলমেশিন হালান্ডই এবারের ফিফার বর্ষসেরা হতে যাচ্ছেন।
কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। হতাশ হতে হলো হালান্ডকে। তাকে হতাশায় ডুবিয়ে আরো একবার ফিফা দ্য বেস্ট অ্যাওয়ার্ড নিজের করে নিলেন মেসি। টানা দুইবারসহ তিনবার এই পুরস্কার জিতলেন মেসি। তবে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তাকে করতে হয়েছে, সেটাই বরং কিছুটা বিস্ময়ের জন্ম দিতে পারে। চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন হালান্ড। সমানে টক্কর দিয়েছেন। সেরার দৌড়ে মেসি এবং আর্লিং হালান্ডের পয়েন্ট যে ছিল একেবারেই সমানে সমান। বিশ^ ফুটবলে সেরা হওয়ার লড়াই কখনো এমন হাড্ডাহাড্ডি হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও সেরা ও দ্বিতীয় সেরার মধ্যে পরিস্কার পার্থক্য ছিল সবসময়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হয়েছে।
ফিফা দ্য বেস্টের ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ ভোটিং হয়েছে। পুরস্কারের দাবিদার প্রশ্নে ফেবারিট ছিলেন আর্লিং হালান্ড। তিনি পেয়েছিলেন ৪৮ পয়েন্ট। মেসিও পেয়েছেন ৪৮ পয়েন্ট। ফিফার ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অধিনায়ক আর ভক্তদের ভোটে সেরা ছিলেন মেসি।
অন্যদিকে কোচ এবং সাংবাদিকদের ভোট ছিল হালান্ডের দিকে। অধিনায়কদের ৬৭৭ পয়েন্টের ভিত্তিতে মেসি জুরি বোর্ড ঘুরে পেয়েছেন ১৩ স্কোরিং পয়েন্ট। হালান্ড অধিনায়কদের ভোটের ভিত্তিতে পেয়েছেন ১১ পয়েন্ট। তার পক্ষে ছিল ৫৫৭ পয়েন্ট।
কোচ এবং মিডিয়ার পক্ষ থেকে পাওয়া ভোটের ভিত্তিতে হালান্ড পেয়েছেন ১৩ পয়েন্ট। মেসি সেখানে পেয়েছিলেন ১১ পয়েন্ট। আর ভক্তদের পক্ষ থেকে পাওয়া ভোটের ভিত্তিতে মেসি ছিলেন ১৩ পয়েন্ট। হালান্ড ছিলেন ১১ পয়েন্টে। এখানে অবশ্য বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
দুইজনের টাইয়ের সুবাদে ভাগ্য নির্ধারণ হয় জাতীয় দলের অধিনায়কদের ভোটে। আর এতেই প্রথম পছন্দের তালিকায় এগিয়ে থাকায় মেসির হাতে উঠেছে বর্ষসেরার পুরস্কার। ফিফার ‘রুলস অব অ্যালোকেশন’ এর ১২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত। যেখানে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ সংখ্যক পাঁচ পয়েন্ট ভোট বা প্রথম স্থানের অধিকারীই হবেন বর্ষসেরা।
আর এই শর্তেই ব্যাপক ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে যেখানে ১০৭ বার প্রথম স্থানে দেখা গিয়েছে, সেখানে হালান্ড প্রথম স্থান দখল করেছেন মোটে ৬৪ বার। সবশেষে তাই রেকর্ড তৃতীয়বার ফিফা দ্য বেস্ট যাচ্ছে মেসির কাছে। আর ব্যালন ডি অর জয় করেছেন আটবার।
আর্জেন্টিনার ক্লাব কোলনের সমর্থক হুগো দানিয়েল ইনিগুয়েজ জিতেছেন ফিফা ফ্যান পুরস্কার। গত বছর আর্জেন্টিনার শীর্ষ লিগে বারাকাস-কোলন ম্যাচে নিজের বাচ্চা শিশুকে বোতলে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে ম্যাচ দেখছিলেন তিনি। মঞ্চে ওঠার পর তাঁর বাচ্চা অবশ্য কেঁদে দিয়েছে।
এক নজরে ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ ২০২৩
ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ নারী খেলোয়াড়: আইতানা বোনমাতি (স্পেন)
ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ পুরুষ খেলোয়াড়: লিওনেল মেসি (আর্জেন্টিনা)
ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ নারী গোলকিপার: মেরি আর্পস (ইংল্যান্ড)
ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ পুরুষ গোলকিপার: এদেরসন (ব্রাজিল)
ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ নারী কোচ: সারিনা ভাইগমান (নেদারল্যান্ডস)
ফিফা ‘দ্য বেস্ট’ পুরুষ কোচ: পেপ গার্দিওলা (স্পেন)
ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ড: গিলের্মে মাদরুগা (ব্রাজিল)
ফিফা স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড: মার্তা (ব্রাজিল)
ফিফা ফেয়ারপ্লে অ্যাওয়ার্ড: ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল
ফিফা ফ্যান অ্যাওয়ার্ড: হুগো দানিয়েল ইনিগুয়েজ

























