০১:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তৃণমূলের কোন্দল মেটাতে নতুন চিন্তা আ.লীগের

♉  তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে সমাধান

♉  সমাধানের দায়িত্বে আট বিভাগীয় কমিটি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করার কৌশল নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে অধিকাংশ আসনে নৌকার প্রতীদ্বন্দ¦ী ছিলো আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাস্তবায়নে দলটির এমন কৌশল অনেকাংশে সফল হলেও দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে দলীয় কোন্দল। নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে কোন্দলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা থেকে শীর্ষ নেতারাও। ফলে নির্বাচনের পরপরই দলীয় ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা উঠে আসছে। কোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সারা দেশে সফরের কথা থাকলেও এখন পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সবশেষ গত সোমবার গনভবনে নির্বাচন পরবর্তী প্রথম কার্যনির্বাহী বৈঠকেও গুরুত্ব পেয়েছে বিষয়টি। এদিন শেখ হাসিনার সভাপত্বিতে সভায় দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় দুটি বিষয় গুরুত্ব পায় বলে জানিয়েছে সূত্র। প্রথমত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খলা নিরসন; দ্বিতীয়ত আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পনরাবৃত্তি ঠেকাতে দলীয় কৌশল। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রেখে উন্মুক্ত নির্বাচনরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা রেশ যেসব জায়গায় রয়েছে, সেসব জায়গার তৃণমূলের নেতাদের ঢাকায় ডেকে সমাধান করার দায়িত্ব পায় আটটি বিভাগীয় কমিটি।
সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ওয়ার্কিং কমিটির প্রায় সর্বসম্মত যে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যবহার করা হবে না। নৌকা না দেওয়ার জন্য ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এখন অভিমত পেশ করেছে। আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার অভিমতের সঙ্গে তিনি ভিন্নমত প্রকাশ করেন না।
তিনি আরো বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থী সব মিলিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে মনোমালিন্য, কিছু কিছু জায়গায় তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। তা দূর করতে আমাদের দলের যে আটটি বিভাগীয় কমিটি রয়েছে, সংশ্লিষ্টদের বলে ঢাকায় ডেকে এনে তা সমাধানের কথা বলা হয়েছে।
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সূত্র বলছে, পূর্বের উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি তখন আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে এবার বিষয় ভিন্ন। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের আন্দোলন, বিদেশি চাপের মধ্য দিয়ে সফল নির্বাচন করলেও এখনো আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ থাকার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে এবার।
বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসে নির্বাচনি সহিংসতায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ২০০ জনের বেশি।
আর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সারা দেশে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। সহিংসতায় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্র্রতি চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের এক মতবিনিময় সভায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের উপস্থিতি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
আর ফরিদপুর-১ আসনের দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমানকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় সংবর্ধনা দেয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। তবে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
এর আগে গত সপ্তাহে দলের যৌথসভায় কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কৌশলের অংশ হিসেবে। জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, এখন ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কোথাও সহিংসতা হলে দায়ী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সফরের কথা বলেন। সফরের সময়সূচি এবং কারা কোন জেলায় যাবেন, তা পরে ঠিক করা হবে।
কার্যনিবার্হী সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সার্বজনীন করার জন্যই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় হবে কি না, সেটা আইন বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। তবে মনে হয়, এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।

 

স/ম

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

তৃণমূলের কোন্দল মেটাতে নতুন চিন্তা আ.লীগের

আপডেট সময় : ০২:৪৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪

♉  তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে সমাধান

♉  সমাধানের দায়িত্বে আট বিভাগীয় কমিটি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করার কৌশল নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে অধিকাংশ আসনে নৌকার প্রতীদ্বন্দ¦ী ছিলো আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বাস্তবায়নে দলটির এমন কৌশল অনেকাংশে সফল হলেও দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে দলীয় কোন্দল। নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে কোন্দলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা থেকে শীর্ষ নেতারাও। ফলে নির্বাচনের পরপরই দলীয় ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা উঠে আসছে। কোন্দল মেটাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সারা দেশে সফরের কথা থাকলেও এখন পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সবশেষ গত সোমবার গনভবনে নির্বাচন পরবর্তী প্রথম কার্যনির্বাহী বৈঠকেও গুরুত্ব পেয়েছে বিষয়টি। এদিন শেখ হাসিনার সভাপত্বিতে সভায় দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় দুটি বিষয় গুরুত্ব পায় বলে জানিয়েছে সূত্র। প্রথমত জাতীয় নির্বাচন ঘিরে তৃণমূলে তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খলা নিরসন; দ্বিতীয়ত আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পনরাবৃত্তি ঠেকাতে দলীয় কৌশল। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না রেখে উন্মুক্ত নির্বাচনরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা রেশ যেসব জায়গায় রয়েছে, সেসব জায়গার তৃণমূলের নেতাদের ঢাকায় ডেকে সমাধান করার দায়িত্ব পায় আটটি বিভাগীয় কমিটি।
সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ওয়ার্কিং কমিটির প্রায় সর্বসম্মত যে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আমাদের দলীয় প্রতীক নৌকা ব্যবহার করা হবে না। নৌকা না দেওয়ার জন্য ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এখন অভিমত পেশ করেছে। আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার অভিমতের সঙ্গে তিনি ভিন্নমত প্রকাশ করেন না।
তিনি আরো বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বতন্ত্র ও দলীয় প্রার্থী সব মিলিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে মনোমালিন্য, কিছু কিছু জায়গায় তার রেশ এখনো রয়ে গেছে। তা দূর করতে আমাদের দলের যে আটটি বিভাগীয় কমিটি রয়েছে, সংশ্লিষ্টদের বলে ঢাকায় ডেকে এনে তা সমাধানের কথা বলা হয়েছে।
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সূত্র বলছে, পূর্বের উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি তখন আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে এবার বিষয় ভিন্ন। বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের আন্দোলন, বিদেশি চাপের মধ্য দিয়ে সফল নির্বাচন করলেও এখনো আশঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ থাকার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে এবার।
বেসরকারি সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাসে নির্বাচনি সহিংসতায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজার ২০০ জনের বেশি।
আর নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় সারা দেশে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক। সহিংসতায় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্র্রতি চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের এক মতবিনিময় সভায় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের উপস্থিতি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে।
আর ফরিদপুর-১ আসনের দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমানকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় সংবর্ধনা দেয় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। তবে অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে।
এর আগে গত সপ্তাহে দলের যৌথসভায় কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কৌশলের অংশ হিসেবে। জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, এখন ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। কোথাও সহিংসতা হলে দায়ী ব্যক্তিদের ছাড় দেওয়া হবে না। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সফরের কথা বলেন। সফরের সময়সূচি এবং কারা কোন জেলায় যাবেন, তা পরে ঠিক করা হবে।
কার্যনিবার্হী সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সার্বজনীন করার জন্যই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় হবে কি না, সেটা আইন বিশেষজ্ঞরা দেখবেন। তবে মনে হয়, এতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।

 

স/ম