💫 অনেকে প্রার্থী হতে আগ্রহী হলেও সিদ্ধান্তহীনতায় দলটি
💫 ঘোষণা না দিলেও আগ্রহীদের বাধা না দেওয়ার আভাস
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই আলোচনায় এসেছে উপজেলা নির্বাচন। একদফার আন্দোলনে অনড় থাকা বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে গত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। আন্দোলন ও নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থতায় চরম হতাশা দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। পশ্চিমাদের যথেষ্ট সমর্থন পাওয়ার পরও ওই নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ার পেছনে নেতাদের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দলটির তৃণমূল পর্যায়ের অনেকে।
এমনই অবস্থায় উপজেলার মতো স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন সামনে আসায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। কারণ এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া দলটি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি না তা নিয়ে চরম দোটানায় রয়েছে। বিএনপির অনেক নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে দলের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। দলীয় সিদ্ধান্ত না এলেও নির্বাচনে যেতে অনড় অনেকে। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে দলটির একটি অংশ। তবে শেষ পর্যন্ত ঘোষণা না দিলেও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীদের বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বাধা না-ও দেওয়া হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্রমতে, এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও না যাওয়ার পক্ষেই দলটি। তবে দলের কেউ প্রার্থী হলে তাদের সম্পর্কে কোনো নির্দেশনাও দেয়নি দলটি। এদিকে দলীয় প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়ে তৃণমূলের অনেক নেতা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন আর স্থানীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা। তৃণমূলের অনেক নেতার এলাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা রয়েছে। তার ওপর আওয়ামী লীগের একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। এতে বিএনপির অনেক নেতার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনো আলোচনা হয়নি। শিগগিরই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর আগে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে শতাধিক উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।
এদিকে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা দেওয়া হবে না।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ৭ জানুয়ারির পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় পরাজয় হয়েছে। তারাই নৌকা ডুবিয়ে দিয়েছে। এখন তারা নৌকা নিয়ে নির্বাচন করবে না। আওয়ামী লীগের বাড়াবাড়ি এখন ধোপে টিকছে না।
তিনি বলেন, এখন আর বক্তব্য নয়, কাজ করার সময়। বিএনপি রাজপথে নেমেছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে।
বিএনপি নেতাদের বক্তব্য, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যে এখন চরম কোন্দল বিরাজ করছে। নির্বাচনের পর প্রতিটি জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের এখন দুই-তিন গ্রুপ। দলের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক রাখেনি তারা। বিরোধ এড়াতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে বিএনপিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো পর্যায়ের নির্বাচনে যাবে না। কারণ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনোভাবে ভোট সুষ্ঠু হবে না। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দিয়ে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় সরকারি দলের একাধিক প্রার্থী থাকবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির যেসব নেতার এলাকায় অবস্থান আছে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। তাই বিএনপি দলীয়ভাবে না গেলেও দলের কোনো নেতা ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থী হতেও পারেন।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন ভিন্ন প্রেক্ষাপট। স্থানীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধরে রাখা কঠিন। আর যেহেতু এ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকবে না, তাই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে আলোচনা না হলেও আমি যতটুকু জানি আগের সিদ্ধান্তই এখনো বলবৎ আছে।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে লন্ডন থেকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নির্দেশনা দেবেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি কাজ করবে বলেও জানা গেছে।
বিএনপির বিভিন্ন সূত্র বলছে, তিনটি কারণে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রথমত, যেহেতু এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে না, কাজেই বিএনপির কোনো নেতাকর্মী যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ান তাহলে সেখানে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। দ্বিতীয়ত, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। এই হতাশা দূর করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্বাচনের মাঠে নামানোটা একটি ভালো বিকল্প। এ কারণে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতেই পারে। তৃতীয়ত, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা এবং অন্যান্য হয়রানি চলছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ একটি ভালো বিকল্প। নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিলে তারা মাঠে নামার সুযোগ পাবে এবং এর ফলে সংগঠনও শক্তিশালী হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
























