দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত দলীয় প্রার্থী ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট বিবেচনায় সংরক্ষিত আসনের ৪৮টিই পাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গত ১০ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার পরপরই আলোচনা শুরু হয় সংরক্ষিত আসন নিয়ে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারির আগে-পরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্দরে জোর তদবির শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। তবে দলীয় সূত্র বলছে, সংরক্ষিত আসনেও দলীয় মনোনয়নে থাকছে চমক। বাদ যাবেন একাদশ সংসদের অধিকাংশ নারী সংসদ সদস্য। দলের ত্যাগী, বঞ্চিত, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী নারী নেত্রীদের প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। এছাড়া বিগত সময়ে যেসব জেলা বঞ্চিত হয়েছে সেসব জেলাকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল নেত্রীদের কয়েকজন সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন। মনোনয়ন পেতে পারেন শরিক দলের দুয়েকজনও।
গতকাল বুধবার ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে সংরক্ষিত আসন ইস্যুতে দল ও জোটগত অবস্থান জানানোর শেষ দিন। এদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এ সময় তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই আমরা আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র মিলে সংরক্ষিত ৪৮ আসনে প্রার্থী দেব। বাকি দুজন জাতীয় পার্টির সদস্য হবেন।
আর কারা পাবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নারী নেত্রী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আওয়ামী নেত্রীরা গুরুত্ব পাবেন।
একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মহিলা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলের পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের গুরুত্ব দেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে সংরক্ষিত আসনে দলের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং, তদবির শুরু করেছেন করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। গণভবন থেকে দলীয় কার্যালয়, দলের সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদের অফিস থেকে শুরু করে বাসায়ও হানা দিচ্ছেন তারা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার স্বজন, স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি, কেউ জনপ্রতিনিধির স্ত্রী এবং ছাত্রলীগ নেত্রীসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, সেলিব্রেটিরাও রয়েছেন।
বিদায়ী একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা এমপি ছিল ৪৩ জন। দলীয় সূত্র বলছে, এর মধ্যে ৪ জন সরাসরি নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৩৯ জনের মধ্যে ৪-৫ জন ছাড়া সবাই বাদ পড়বেন। জায়গা পাবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন ও দ¦াদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও প্রত্যাহার করা কয়েকজন। বিনোদন জগৎ, লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে থেকে অন্তত দুজনকে স্থান দেওয়া হতে পারে সংরক্ষিত আসনে। এ ক্ষেত্রে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লাকী ইনামের, শমী কায়সার ও শাওন মাহমুদ আলোচনায় রয়েছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিকদেরও এক বা দুটি সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হতে পারে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তা থেকেও দু’তিনজন সংরক্ষিত আসনে জায়গা পেতে পারেন। গত সংসদে যেসব জেলা থেকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করা হয়নি, সেসব জেলা এবার অগ্রাধিকার পেতে পারে।


























