●এডিস মশা নিধনে কর্মপরিকল্পনার জন্য ডিসিদের নির্দেশ
●মিল্ক ভিটা দিনে প্রায় ২৫ হাজার কেজি গুঁড়া দুধ উৎপাদন করবে
●নারায়ণগঞ্জে ভবনের নাম ৬ দফা করার দাবি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়েছে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় আসরের নামাজের পর সংসদের অধিবেশন আবার বসবে।
সংসদে শুরু হওয়া প্রশ্নোত্তর পর্বে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধনে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য দেশের প্রত্যেক জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সদস্য এম. আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় সারাদেশে মশা নিধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম হলো, সারাদেশে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনসহ সারাদেশে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০২১ সালে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্দেশনায় সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সকল অংশীজনের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ডেঙ্গুসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী জেলা কমিটির জরুরি সভা আয়োজনসহ এডিস মশা নিধনে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান অর্থ-বছরে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালন বাজেটের আওতায় ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার খাতে সিটি কর্পোরেশনগুলোর অনুকূলে ৪০ কোটি টাকা এবং পৌরসভাগুলোর অনুকূলে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র যাতে তৈরি হতে না পারে, এ জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ২০১৯ সাল থেকে সারা দেশে পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের আয়োজনে ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী ‘ ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ ২০২৩’ পালন করা হয়েছে।
সরকারি দলের সদস্য চয়ন ইসলামের তারকা চিহ্নিত এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, মিল্ক ভিটা দৈনিক প্রায় ২৫ হাজার কিলোগ্রাম গুঁড়া দুধ উৎপাদন করবে।
তিনি বলেন, মিল্ক ভিটার কারখানায় দৈনিক প্রায় ২ লাখ লিটার কাঁচা তরল দুধ থেকে প্রতিদিন ২৫ হাজার কেজি দুধের গুঁড়া উৎপাদন সম্ভব হবে।
মন্ত্রী জানান, এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীঘাটে ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গুঁড়ো দুধ উৎপাদন কারখানা স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড।
তিনি জানান, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দুগ্ধ খামারিদের উন্নয়নে শাহজাদপুরে মোট ৪৫টি প্রাথমিক সমবায় গঠন করেছে।
নারায়ণগঞ্জের জিয়া হলের স্থানে নতুন ভবন করে তার নামকরণ ৬ দফা ভবন করার দাবি জানিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। এই স্থানটি বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষণার স্মৃতিবিজড়িত উল্লেখ করে এ দাবি জানান তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে অধিবেশনে প্রশ্ন উত্তর পর্বে এক সম্পূরক প্রশ্নে শামীম ওসমান এই দাবি জানান।
শামীম ওসমান বলেন, যারা জাতির পিতার ছয় দফার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। জাতির পিতা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ছয় দফা ঘোষণা করেছিলেন। সেখানে একটা বালুর মাঠ নামে একটি মাঠ ছিল। সেখানে ঘোষণা দেওয়ার পরে তিনি (বঙ্গবন্ধু) গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ওটার স্মৃতিকে ভুলিয়ে রাখতে নারায়ণগঞ্জ মিলনায়তন নামে একটি অডিটোরিয়াম করেন। আমরা বাধা দিয়েছিলাম, মার খেয়েছিলাম, আমাদের মধ্যে অনেকে জেলেও গিয়েছিল কিন্তু আমরা ঠেকাতে পারিনি। তার পরে খালেদা জিয়া এসে সেটাকে আবার জিয়া হল নাম দিয়ে তার একটা বিশাল ছবি টাঙ্গিয়ে পাথরের মূর্তি সেখানে রাখা হয়েছে। এই জায়গাটি হচ্ছে জেলা প্রশাসকের অধীনে। নারায়ণগঞ্জের মানুষের দাবি জাতির পিতার পদচিহ্ন ওখানে পড়েছিল, ৬ দফা আমাদের স্বাধীনতার সনদ ছিল।
শামীম ওসমান স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমরা চাই জেলা পরিষদের মাধ্যমে ওইখানে একটি ভবন হোক এবং সেই ভবনের নাম ৬ দফা ভবন রাখা হোক। এই ব্যাপারে আমরা একটি চিঠি আপনাকে দিলে আপনি দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করবেন কি না।
এপ্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন একটি উন্নত বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত সকল স্থান আমাদের সবার কাছে স্পর্শকাতর এবং মর্যাদার। আমি রাজনীতির একজন কর্মী হিসেবে, জাতির জনকের আদর্শের একজন সৈনিক হিসেবে আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর কোনো বিষয়ে, কোথায়ও কোনো ন্যূনতম অসম্মান দেখি সেটা অবশ্যই গোটা জাতি বরদাস্ত করবে না।
পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত দুই লাইন প্রত্যাহারের আহ্বান : পাঠ্যবই থেকে বিতর্কিত দুই লাইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। রোববার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এ কথা বলেন। পাঠ্যবইয়ে শরীফার গল্পের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ এবং হিজড়ার মধ্যে পার্থ্যক্যটা কী? নিজেকে নিজের জন্মগত লিঙ্গ বাদে অন্য কোনো লিঙ্গ মনে করাটাই ট্রান্সজেন্ডার। বিষয়টি পুরোপুরি মানসিক। হিজড়া যারা তারা হলেন থার্ড জেন্ডার। বিষয়টি জন্মগত, এটি মানসিক ও শারীরিক উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তারাই থার্ড জেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচিত। ট্রান্সজেন্ডার শুধুমাত্র পশ্চিমা বিশ্বের একটি শ্রেণির মতবাদ।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে বলবো তিনি যেন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখেন। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি নিয়ে উল্টাপল্টা কথাবার্তা হচ্ছে। সামান্য জিনিস যেন বড় না হয়। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে প্রয়োজনে কনসার্ন লোকের সাথে কথা বলে পাঠ্যপুস্তক থেকে দুইটি লাইন প্রত্যাহার করলে বিতর্ক থাকে না।
রাস্তার বেহাল দশায় ডিজিটাল যুগেও যেন আদিম যুগে আছেন’ বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা-২ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান। তিনি নিজ এলাকার সড়কের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, ডিজিটাল যুগেও যেন আদিম যুগে আছি। সাতক্ষীরা শহরের পোস্ট অফিসের মোড় থেকে ফুড অফিস, সমবায় অফিস, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে যে মহাসড়কটি রয়েছে সেখান দিয়ে কোনো মানুষ যদি আসে, কোন গর্ভবতী নারী আসেন তাহলে রাস্তায় তার ডেলিভারি হয়ে যাবে। রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করার আহ্বান জানাই।
রাস্তাঘাট বেহালের কারণে নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে গিয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল বলেছেন পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে অনেকগুলো কাজ, স্কুল-প্রতিষ্ঠান টেন্ডার হওয়ার পর থেকে সেগুলো অর্ধসমাপ্ত হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এখন অবস্থাটা এমন হয়েছে ওই রাস্তাটাতে কাজ না ধরতো তাহলেই ভালো হত। কাজগুলো থেমে থাকার কারণে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও হচ্ছে না। নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে গিয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু আমরা জানি কাজগুলো চলমান আছে।
সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা : ২৯ জানুয়ারি থেকে মতিয়া চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি এই সুবিধা দেন জানিয়ে গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। গত সরকারের মেয়াদেও সংসদের উপনেতার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর ওই দায়িত্ব পান মতিয়া।
























