🔰 বিবিএসের প্রতিবেদন
🔰 দেশে পুরুষ ৭৭.২২% এবং ৭৩.৩২% নারী সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন
🔰 প্রতি চারজনে একজন এখনো নিরক্ষর ২২ শতাংশ নারী কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষা পাননি
🔰 সাক্ষরতার হার বেশি বরিশালে, কম ময়মনসিংহ বিভাগে
দেশে সাক্ষরতার হার ক্রমেই বাড়লেও পুরুষের তুলনায় এখনো অনেক পিছিয়ে নারীরা। ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি পুরুষ জনগোষ্ঠী একই বয়সি নারীদের তুলনায় প্রায় ৫.৩ শতাংশ বেশি হারে সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। এ বয়সসীমার ছেলেদের ক্ষেত্রে সাক্ষরতার হার ৭৭.২২%। একই বয়সের মেয়েদের মধ্যে এ অনুপাত ৭৩.৩২%। অর্থাৎ পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার বেশি। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি জনসংখ্যার মধ্যে সামগ্রিক সাক্ষরতার হার ৭৫.২৪ শতাংশ। বাকি ২৪.৭৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ৪ জনে একজন নিরক্ষর। এছাড়া দেশের সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি বরিশালে আর সবচেয়ে কম ময়মনসিংহ বিভাগে।
এদিকে পুরুষ জনসংখ্যার ১৭.৩৮% জীবনের কোনো পর্যায়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়নি। নারীদের মধ্যে এ হার আরো বেশি; ২২.০৩%। প্রায় ২৩.৩১ শতাংশ ছেলে শিশু এবং ১৯.৭৩ শতাংশ মেয়ে শিশু প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা শেষ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরুষদের মধ্যে ১২.৬২ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ১১.৫৯ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। প্রায় এক-চতুর্থাংশ সংখ্যক পুরুষ (২৪.২৭%) এবং ১৯.২৬ শতাংশ নারী মাধ্যমিক এবং উচ্চ স্তরের পড়াশোনা শেষ করতে পারেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (এসভিআরএস) ইন জিজিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রকল্পের আওতায় এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উভয় লিঙ্গের স্থূল সাক্ষরতার হার ২০২১ সালের ৬৮.৪২ শতাংশ হতে ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ জনগোষ্ঠীর স্থূল সাক্ষরতার হার নারীদের তুলনায় কিছুটা বেশি (৭৪.৬৩%)। আর নারীদের স্থূল সাক্ষরতার হার ৭১.০৭%। স্থূল সাক্ষরতার হারে লৈঙ্গিক ব্যবধান ৩.৫৬ শতাংশ পয়েন্ট, যা পুরুষ জনগোষ্ঠীর অনুকূলে। মোটাদাগে নারী-পুরুষের এ ব্যবধান চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ ব্যতীত অন্য বিভাগগুলোয় প্রায় একই রকম। বরিশালে এ ব্যবধান ১.৯২%, চট্টগ্রাম বিভাগে ২.১৫% ও সিলেট বিভাগে তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি ব্যবধান (২.৫৫%)। পূর্ববর্তী বছরগুলোর জরিপ ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, স্থূল সাক্ষরতার হার গত কয়েক বছরে ক্রমবর্ধমান হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে।
বিবিএসের প্রতিবেদন প্রস্তুত প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা হয়, সাক্ষরতার হারের দুটি মাত্রা নিরূপণের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছিল। এর একটি হলো যাদের বয়স ৭ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং অন্যটি হলো যাদের বয়স ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব।
এক জনমত জরিপে উঠে এসেছে। গত বছর এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পরিচালিত ওই সমীক্ষা বলছে, বেশিরভাগ মানুষ মনে করছে যে, দেশের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি ‘ভুল’ পথে চলছে।
‘দ্য স্টেট অব বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল, গভর্নাল, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি’ শিরোনামের একই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও।
সর্বশেষ ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬৪টি জেলার ১০ হাজার ২৪০ জন মানুষের উপর ওই সমীক্ষা পরিচালিত হয়। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতি সঠিক পথে চলছে এমন ধারণা পোষণ করে ৩৯ শতাংশ মানুষ, যেখানে ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৬৪ শতাংশ। সবশেষ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৪৮ শতাংশ মনে করেÑ রাজনীতিতে দেশ ভুল পথে চলছে; অথচ তিন বছর আগে এমন মনোভাব পোষণকারী ছিল ৩১ শতাংশ।
রাজনীতি সঠিক পথে চলছে কি না এ প্রশ্নের উত্তরে ১১ শতাংশ মানুষ বলেছে, ‘জানি না’; বাকি ৩ শতাংশ মানুষ কোনো উত্তর দেয়নি।
রাজনীতির প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া সবুজ বাংলাকে বলেন, অতীতের মতো রাজনীতির ধারা এখন নেই। একসময় সমাজের প্রসিদ্ধ, জ্ঞান-গুণী ও অভিজাত মানুষ রাজনীতিতে আসতেন। বাংলাদেশেও এই ঐতিহ্য ছিল। কিন্তু এখন রাজনৈতিক অঙ্গন খুবই দূষিত হয়ে গেছে। এখন রাজনীতিতে আসতে ভালো মানুষ কালিমালিপ্তের ভয় পান।
অন্যদিকে দুর্বৃত্ত ও যারা ওই পথে চলাচল করে তারাই রাজনীতিতে বেশি আসতে চায়। তারাও চাচ্ছে না যে, ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসুক। সমাজের বর্তমান অবস্থার পেছনে বড় কারণÑজ্ঞানীদের মূল্যায়ন নেই। সত্যের দাম নেই। জ্ঞানীরা জেনেশুনে সত্য গোপন করতে পারেন না। তারা সমাজের মঙ্গল চান।
সমাজের প্রকৃত অর্জনের জন্য দেহগত অর্জনের পরিবর্তে মানসিক অর্জন এবং মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া।
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর একটি প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা গেছে- নব নির্বাচিত ২৯৯ এমপির প্রায় ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী এবং প্রায় ৯০ শতাংশই কোটিপতি। রাজনীতিবিদ রয়েছেন ২৭ জন, যা নির্বাচিতদের ৯ শতাংশ। আইনজীবী নির্বাচিত হয়েছেন ২৪ জন বা ৮ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষি খাতে আয় করেন এমন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ১৪ জন, চিকিৎসক ১২ জন, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৬ জন এবং শিক্ষক আছেন ৫ জন।
রাজনীতিতে রাজনীতিবিদের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের এই আধিখ্যতা বা নিয়ন্ত্রণকে দেশের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মুহা. হাছানাত আলী। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রসংসদ চালুসহ সুস্থ ছাত্ররাজনীতিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
স/ম


























