শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে জাতীয় শহিদ মিনারে। মনের মাধুরী মিশিয়ে রং তুলির আঁচড়ে শিল্পীরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শহিদ মিনারের আশেপাশে সব দালানে ছবি ও বাণীতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ভাষা ও দেশের কথা। আঁকা হয়েছে স্মৃতিময় নানান ছবি।

ৎবুধবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের প্রথম প্রহর থেকে শুরু করে দিনভর শহীদ মিনার মুখরিত থাকবে মানুষের ভিড়ে। শ্রদ্ধা আর ভালবাসার ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতির মিনার। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের গৌরবময় স্মৃতি, সেই সঙ্গে বেদনা আর বিদীর্ণ শোকের রক্তঝরা দিন একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় মুখরিত হবে চারপাশ। তাই শেষ মুহুর্তে এসে শহীদ মিনার এলাকার দেয়াল আর পিচঢালা রাস্তাকে ক্যানভাস বানিয়ে রঙ-তুলির আঁচড়ে আলপনায় সাজিয়ে তুলছেন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার সকালে শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাফসুতরোর কাজ সারা হয়েছে আগেই। এখন দেয়াল লিখন ও রঙিন আলপনায় ছেয়ে যাচ্ছে আঙ্গিনা। নান্দনিক সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

দেয়ালে দেয়ালে রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে একাত্তরের গৌরবগাথা, সংগ্রামের দিনগুলো। বাঙালি ও বাংলাকে উপজীব্য করে লেখা কবি-মনীষীর নানা পঙক্তি ও উক্তিও শোভা পাচ্ছে সেখানে।

প্রতিবারের মত এবারও সাজ-সজ্জার দায়িত্বটি পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের ওপর। তাতে যোগ দিয়েছেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দেয়ালচিত্র আঁকায় মগ্ন চারুকলার অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের শিক্ষার্থী মুনজেরিন রিমঝিম বলেন, যারা আমাদের মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, পিচঢালা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এ কাজ করতে পারা আমাদের জন্য খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার।

দেশাত্মবোধ বা একুশের যে চেতনা, সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর একটা সুযোগ হয় এই কাজের মাধ্যমে।

আলপনা আঁকায় ব্যস্ত আরেক শিক্ষার্থী মঞ্জুর হোসেন বলেন, একুশের আবহে আমরা আলপনায় বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। আজকের দিনে লাল ইটের বেদী, ইটের দেয়াল কিংবা পিচঢালা রাস্তা- সবই হয়ে উঠেছে আমাদের ক্যানভাস। চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জয়ন্তু মণ্ডল বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারির শোক আজ পরিণত হয়েছে বিশাল এক শক্তিতে। বাঙালির রক্তে অর্জিত এই দিবসটি আজ সারা বিশ্বে পালিত হয়। তাই যেখানেই থাকি, এই দিনটি আসলে ছুটে আাসি এই প্রাঙ্গণে রক্তের আলপনা আঁকতে।

সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে একুশে উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, একুশ উদযাপন আমাদের রাষ্ট্রীয় আচার ও ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলেছি। শহীদ মিনারের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যাবতীয় কাজ চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি দেখছেন না ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের কাছে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। তারপরও পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা হুমকি বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিয়েছে। শহীদ মিনারের অদূরেই বইমেলায় সোহারাওয়ার্দী উদ্যানে পুলিশের একটি কন্ট্রোল রুম আছে। সেখানে ক্যামেরার মাধ্যমে সব ধরনের সিকিউরিটি ইকুইপমেন্ট এবং সিকিউরিটি ইউনিট কাজ করছে৷”






















