ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মো. আব্দুল জলিল ও হেফাজ উদ্দীন নামে দুই ব্যক্তিকে। পাওনা টাকার জেড়
ধরে তিনদিন আগে তাদেরকে হাতিরঝিলের নিজ বাসা থেকে অপহরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নিয়ে আসা হয়।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় শাহবাগ থানা পুলিশ হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সূত্রে জানা যায়, ব্যবসার জন্য শাহাবুদ্দিন থেকে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ নেন অপহৃত জলিল। কিন্তু পাওনা টাকা ফেরত চাইলে তিনি নানা অযুহাত দেখিয়ে দেরি করতে থাকেন। পরে শাহাবুদ্দিন ১০ থেকে ১২ জন নিয়ে হাতিরঝিল থানার হাজিপাড়াস্থ জলিললের বাসা থেকে
তাকে তুলে নিয়ে আসেন। এ সময় জলিলের সঙ্গে থাকা তার বন্ধু হেফাজকেও অপহরণ করা হয়।
অপহরণের পর তাদেরকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে পরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়।
অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান।
অভিযুক্তরা হলেন- ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার প্রাক্তন উপ-দপ্তর সম্পাদক ও ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবুল হাসান সাইদি, ছাত্রলীগের মুহসীন হল শাখার প্রচার উপ-সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোনতাছির হোসাইন এবং একই হলের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপ-সম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ তানসেন। এর মধ্যে মোনতাছির নিজেকে শাহাবুদ্দিনের আত্মীয় বলে দাবি করেছেন। এদিকে শাহাবুদ্দিনের বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কোনো পরিচয় জানা যায়নি।
ভুক্তভোগী জলিল ৩৫ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার বিষয়টি সবুজ বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মাঝখানে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভুল বোঝাবুঝি হয়। একপর্যায়ে
আমাকে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে বাসা থেকে ১০ থেকে ১২ জন গিয়ে তুলে আনেন।
অপহৃত জলিল তাকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার এসআই আল আমিন বলেন, ভুক্তভোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তবে কক্ষটি খুঁজে আমরা তেমন কোনো অস্ত্র পাইনি।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থানে বাদি বিবাদী উভয়কে হাতেনাতে পেয়েছি। প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সব ঘটনা বেরিয়ে আসে।
পরে আমরা তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেই। এ ঘটনায়
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়েছে।
ঘটনার নেপথ্যে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির হাত রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য আমাদের হাতে আসে লনি। তবে আদালত তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী এদের বিচার হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে বরাবরের মতো ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে থাকবে।
জড়িতদের হাতিরঝিল থানায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিধি রয়েছে, তা প্রয়োগ করে হল প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
অভিযুক্তদের বিষয়ে মুহসিন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল হক শিশির সবুজ বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনোভাবে এ ধরনের কাজকে সমর্থন করে না। তাদের দায় ছাত্রলীগ নেবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেছি। অপরাধ প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এহেন কাজে সবসময় ‘জিরো টলারেন্স’।

























