◉ ক্রেতাদের দাবি, সরকারের নির্দেশ যে সকল ব্যবসায়ীরা মানছেনা তাদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
◉ ব্যবসায়ীরা বলছে, পুণ্যের দামতো বাড়তি, আমরা কী করব? সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করা অসম্ভব ।
দাম ক্রম ক্ষমতার মধ্যে রাখতে রাখতে ইফতারে বহুল ব্যবহৃত ২৯টি পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু রাজশাহীর বাজারে এই নির্দেশনার
কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না বরং দাম নির্ধারণের পর আরোও বেড়েছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি তাই নির্ধারিত দাম রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আর ক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্দেশ মানছেন না ব্যবসায়ীরা। দ্রুত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ছোলা প্রতি কেজি ৯৮ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা করা হয়। কিন্তু রাজশাহীর বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে। ৩০ টাকার মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ৯৩ টাকার খেসারি ১৩০ টাকা, ১৬৫ টাকার মুগডাল ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।রাজশাহী বাজারে নির্ধারিত দামে মিলছে না খেজুর। সর্বনিম্ন খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া সাগর কলার হালি
খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে। এ ছাড়া চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১
টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। তবে চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও সিম ৫০ টাকা ও আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৪ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়,। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি।
এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬৪ টাকা। এছাড়া ছাগলের মাংসের দাম এক হাজার ৩ টাকা। তবে নির্ধারিত দামে মিলছে না বাজারে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ১,১০০ টাকায়। রাজশাহীর সাহেববাজারে কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসেছেন আবুহেনা। তিনি বলেন, সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। আগে বাজারে দাম কমলে সেটির প্রভাব পড়ত না। এখনো পড়েনি। দাম বাড়লে সেটি অবশ্যই বেড়ে যেত। আমরা সাধারণ মানুষ। অল্প আয় করি। এভাবে যদি দাম বেড়ে যায় তো আমার হিমশিম খাচ্ছি। আরিফুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সরকার যদি বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। এ জন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।
ফল বিক্রেতারাবলেন, আমরা যে দামে কিনছি সেই অনুপাতেই বিক্রি করছি। শুক্রবার পেয়ারা কিনেছি ৭০ টাকায়। এরপর সেটি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়
বিক্রি করেছি। শনিবার ৬০ টাকা কেজি কিনেছি ৬৫ টাকায় বিক্রি করছি।
নগরীর সাহেববাজারে মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, গরু কিনতে যে টাকা লাগে সেই অনুপাতে আমরা বিক্রি করছি। এতে কেজি প্রতি ১০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। এখানে গরুর দামতো বাড়তি, আমরা কী করব?’ সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করা অসম্ভব।
সরকার নির্ধারিত মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ মাছের খুচরা দাম ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছের দাম সর্বোচ্চ ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব মাছের কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে। ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। তবে বাস্তবে এই দামে কোনো কিছুই মেলেনি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩২০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া প্রতি-পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১০.৫০ টাকা নির্ধারিত করা হলেও বাজারে মিলছে একশো আট টাকা ডজন।
রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারি পরিচালক আফরিন হোসেন বলেন, শনিবার থেকে এই দামে বিক্রি করতে বলা হয়েছে। রোববার সরকারি ছুটি ছিল। আজ সোমবার থেকে আমরা অভিযানে নামবো। আমাদের সাথে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতরও থাকবে। যারা নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি
করছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।