১১:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সরকারকে ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ

●২৯ পণ্যের দাম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিতের দাবি

●সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন ভোক্তাদের জন্য ভালো হবে : ক্যাব 

রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারবাহিকতায় সাধারণ মানুষের ক্রয় সুবিধার্থে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে খুচরা পর্যায়ে ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই মূল্য নির্ধারণের পাঁচদিন পার হয়ে গেলেও মাঠ পার্যায়ে তার বাস্তবায়ন নেই। বরং এই দাম নির্ধারণ নিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন,  খুচরা পার্যায়ে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া অর্থহীন, অবিবেচনা, অসার ও কল্পনাপ্রসূত।
সকালে মগবাজারে দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এ সময় মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়াসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হেলাল উদ্দিন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। এখন ২৯টি পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ দামে এসব পণ্যগুলো কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে বিক্রির অনুরোধ জানাই। সেইসঙ্গে পণ্যগুলোর বিক্রিত লাভ দিয়ে কর্মকর্তারা বেতন নেবেন। হয় তাদের বেঁধে দেওয়া দামে কৃষি বিপণনকে বিক্রি করতে হবে, না হলে এ প্রজ্ঞাপন স্থগিত করতে হবে। আমরা এ দামে বিক্রি করতে পারব না। দাম বেঁধে দেওয়াটা অযৌক্তিক-অবাস্তব ও অর্থহীন। ক্রেতার সন্তুষ্টিই বিক্রেতার কাম্য। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এ শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৭ দফা দাবি পেশ করছি।
এদিকে ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের এমন কাজের পর কিছু পণ্যের দাম এরই মধ্যে কমেছে। অন্যান্য পণ্যের দামও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। অপেক্ষা করুন, চেষ্টা করলে ফল পাওয়া যাবে।
সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাস্তবায়ন নিয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সবুজ বাংলাকে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই উদ্যোগ ভালো। এই উদ্যোগের পাশাপাশি সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। যদি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতি দিয়ে  তো আর পণ্য বিক্রি করবে না তাদের কথা বিবেচনা করা দরকার। আইনগত ঘোষণার মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা যাবে না। যদি এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে ভোক্তাদের জন্য ভালো হবে।
সরকার সবকিছু বিবেচনা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করেছেন বলে মনে করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ^াস গণমাধ্যমকে বলেন, সবার সাথে কথা বলে ও সবকিছু বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে কোনো পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না এবং ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক দাবি করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কম দামে পণ্য বিক্রি করার মনমানসিকতা থাকা দরকার। আমরা আশা করি দাম কমে আসবে, কম দামে বিক্রি করলে ব্যবসায়ীদের লস হবে না বলে জানান তিনি।
দোকান মালিক সমিতির দাবির মধ্যে বলা হয়েছে, ২৯ পণ্যের মূল্যনির্ধারণ অবিবেচনা, অসার, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত। তাই এখনই প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না। বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে হবে। টিসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে পণ্য আমদানি করে বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে বোঝা যাবে ব্যক্তি খাতের সঙ্গে সরকারি খাতের পার্থক্য কেমন। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যন্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সংস্থার চাপমুক্ত অবস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর আরোপিত সব ধরনের ট্যাক্স ভ্যাট কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত (১৫ মার্চ) খুচরা বাজারে মাছ, গোশত, ডিম, ডাল ও সবজির মতো ২৯টি পণ্যের খুচরা পর্যায়ে মূল্যনির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। রোজার শুরুতেই খেজুর ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি কেজি অতি সাধারণ মানের খেজুরের ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়।
জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারকে ব্যবসায়ীদের চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ০৭:২৩:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

●২৯ পণ্যের দাম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন স্থগিতের দাবি

●সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন ভোক্তাদের জন্য ভালো হবে : ক্যাব 

রোজায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারবাহিকতায় সাধারণ মানুষের ক্রয় সুবিধার্থে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে খুচরা পর্যায়ে ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এই মূল্য নির্ধারণের পাঁচদিন পার হয়ে গেলেও মাঠ পার্যায়ে তার বাস্তবায়ন নেই। বরং এই দাম নির্ধারণ নিয়ে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলেছেন,  খুচরা পার্যায়ে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া অর্থহীন, অবিবেচনা, অসার ও কল্পনাপ্রসূত।
সকালে মগবাজারে দোকান মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। এ সময় মহাসচিব জহিরুল হক ভূঁইয়াসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হেলাল উদ্দিন বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। এখন ২৯টি পণ্যের দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ দামে এসব পণ্যগুলো কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে বিক্রির অনুরোধ জানাই। সেইসঙ্গে পণ্যগুলোর বিক্রিত লাভ দিয়ে কর্মকর্তারা বেতন নেবেন। হয় তাদের বেঁধে দেওয়া দামে কৃষি বিপণনকে বিক্রি করতে হবে, না হলে এ প্রজ্ঞাপন স্থগিত করতে হবে। আমরা এ দামে বিক্রি করতে পারব না। দাম বেঁধে দেওয়াটা অযৌক্তিক-অবাস্তব ও অর্থহীন। ক্রেতার সন্তুষ্টিই বিক্রেতার কাম্য। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এ শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ভোক্তার নাগালের মধ্যে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৭ দফা দাবি পেশ করছি।
এদিকে ২৯টি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের এমন কাজের পর কিছু পণ্যের দাম এরই মধ্যে কমেছে। অন্যান্য পণ্যের দামও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। অপেক্ষা করুন, চেষ্টা করলে ফল পাওয়া যাবে।
সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাস্তবায়ন নিয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সবুজ বাংলাকে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই উদ্যোগ ভালো। এই উদ্যোগের পাশাপাশি সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। যদি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা যায় তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতি দিয়ে  তো আর পণ্য বিক্রি করবে না তাদের কথা বিবেচনা করা দরকার। আইনগত ঘোষণার মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করা যাবে না। যদি এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে ভোক্তাদের জন্য ভালো হবে।
সরকার সবকিছু বিবেচনা করে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করেছেন বলে মনে করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ^াস গণমাধ্যমকে বলেন, সবার সাথে কথা বলে ও সবকিছু বিবেচনা করে একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে কোনো পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না এবং ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক দাবি করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কম দামে পণ্য বিক্রি করার মনমানসিকতা থাকা দরকার। আমরা আশা করি দাম কমে আসবে, কম দামে বিক্রি করলে ব্যবসায়ীদের লস হবে না বলে জানান তিনি।
দোকান মালিক সমিতির দাবির মধ্যে বলা হয়েছে, ২৯ পণ্যের মূল্যনির্ধারণ অবিবেচনা, অসার, অর্থহীন ও কল্পনাপ্রসূত। তাই এখনই প্রজ্ঞাপনটি স্থগিত করতে হবে। অন্যথায় ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া আমাদের উপায় থাকবে না। বিভিন্ন পণ্যের আমদানি ও উৎপাদনের সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত করতে হবে। টিসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রাথমিকভাবে পণ্য আমদানি করে বিপণনের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে বোঝা যাবে ব্যক্তি খাতের সঙ্গে সরকারি খাতের পার্থক্য কেমন। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী পর্যন্ত সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সংস্থার চাপমুক্ত অবস্থায় ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ওপর আরোপিত সব ধরনের ট্যাক্স ভ্যাট কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত (১৫ মার্চ) খুচরা বাজারে মাছ, গোশত, ডিম, ডাল ও সবজির মতো ২৯টি পণ্যের খুচরা পর্যায়ে মূল্যনির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। রোজার শুরুতেই খেজুর ও চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি কেজি অতি সাধারণ মানের খেজুরের ১৫০ থেকে ১৬৫ টাকা ও প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়।