০২:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী

⦿ মশার ভয়াবহ বিস্তার রোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন দুই সিটি

⦿ মৌসুমের আগেই বাড়ছে রোগী

 

 

 

মশার প্রজনন মৌসুম বর্ষা আসার আগেই প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি বছর প্রায় তিন মাসেই যে পরিমাণ ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে তা গত বছরের শুরুর তিন মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর দেশের ইতিহাসের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় ডেঙ্গু। ফলে চলতি বছর ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান গত বছরের চেয়েও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিবরণী থেকে জান যায়, চলতি বছরের ২৪ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬৩১ জন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা যান ২২ জন; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যায় প্রায় দ্বিগুণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হিসেবে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৮৪৩ জন। এর মধ্যে একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল নয়জন।
বাংলাদেশে সাধারণত মে-জুন থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে এবং এ সময় তাপমাত্রাও অনেক বেশি থাকে। ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছরই মে-জুন থেকে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সেটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে।

বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুকে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজননের সঙ্গে বৃষ্টি এবং তাপমাত্রার সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ভারী বৃষ্টিপাতসহ অন্যান্য উপাদানের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই পরিবর্তন ডেঙ্গুর ধারক-বাহক এডিস মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করছে। এডিস মশা ক্রমে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। ফলে এরই মধ্যে সারা দেশে মশার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এর সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, এ বছর বর্ষার সময় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। সেই আশঙ্কা মাথায় রেখে ফেব্রুয়ারি থেকেই বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছি আমরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি একটি গোলটেবিল বৈঠক করে যেখানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিএনসিসি একটি কারিগরি টিম গঠন করেছে। মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করতে তিনজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ করা হয়েছে। মশা মারতে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নতুন করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিটিআই কেনার প্রক্রিয়া শেষ, আগামী দুই মাসের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে পারব।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল করিম বলেন, ‘আমরা মশা নিধনে সারা বছর কর্মসূচি পালন করি। ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই আমরা ঈদের পর থেকে কর্মসূচি শুরু করব।’

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী

আপডেট সময় : ০৭:২২:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

⦿ মশার ভয়াবহ বিস্তার রোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন দুই সিটি

⦿ মৌসুমের আগেই বাড়ছে রোগী

 

 

 

মশার প্রজনন মৌসুম বর্ষা আসার আগেই প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। চলতি বছর প্রায় তিন মাসেই যে পরিমাণ ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত রোগীর পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে তা গত বছরের শুরুর তিন মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছর দেশের ইতিহাসের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় ডেঙ্গু। ফলে চলতি বছর ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান গত বছরের চেয়েও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতাল প্রস্তুত রাখতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিবরণী থেকে জান যায়, চলতি বছরের ২৪ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৬৩১ জন। একই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা যান ২২ জন; যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যায় প্রায় দ্বিগুণ ও মৃত্যুর সংখ্যা হিসেবে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০২৩ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৮৪৩ জন। এর মধ্যে একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল নয়জন।
বাংলাদেশে সাধারণত মে-জুন থেকে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করে এবং এ সময় তাপমাত্রাও অনেক বেশি থাকে। ডেঙ্গু সংক্রমণের শুরু থেকে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিবছরই মে-জুন থেকে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং সেটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বর মাসে।

বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ুকে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজননের সঙ্গে বৃষ্টি এবং তাপমাত্রার সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ভারী বৃষ্টিপাতসহ অন্যান্য উপাদানের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। আর এই পরিবর্তন ডেঙ্গুর ধারক-বাহক এডিস মশার প্রজননের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করছে। এডিস মশা ক্রমে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। ফলে এরই মধ্যে সারা দেশে মশার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এর সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, এ বছর বর্ষার সময় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। সেই আশঙ্কা মাথায় রেখে ফেব্রুয়ারি থেকেই বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছি আমরা। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি একটি গোলটেবিল বৈঠক করে যেখানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিএনসিসি একটি কারিগরি টিম গঠন করেছে। মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করতে তিনজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ করা হয়েছে। মশা মারতে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নতুন করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিটিআই কেনার প্রক্রিয়া শেষ, আগামী দুই মাসের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে পারব।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল করিম বলেন, ‘আমরা মশা নিধনে সারা বছর কর্মসূচি পালন করি। ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই আমরা ঈদের পর থেকে কর্মসূচি শুরু করব।’